Advertisement
E-Paper

বৃষ্টি নেই, মেঘ চেয়ে শিবযজ্ঞ কোচবিহারে

অসহ্য এক গরমে যেন পুড়ে যাচ্ছে সব কিছু। কোচবিহার থেকে কলকাতা সর্বত্র যেন একই ছবি। বৃষ্টির দেখা নেই। তাই স্বস্তি নেই। চারিদিকে রোদে পুড়ে খাক। এই অবস্থার অবসান কামনা করে শিব যজ্ঞে সামিল হচ্ছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৩:২৪

অসহ্য এক গরমে যেন পুড়ে যাচ্ছে সব কিছু। কোচবিহার থেকে কলকাতা সর্বত্র যেন একই ছবি। বৃষ্টির দেখা নেই। তাই স্বস্তি নেই। চারিদিকে রোদে পুড়ে খাক। এই অবস্থার অবসান কামনা করে শিব যজ্ঞে সামিল হচ্ছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা। আগামী শুক্রবার থেকে কোচবিহারের খাগড়া বাড়ি এলাকায় রাজ আমলের ঐতিহ্য মেনে লক্ষ আহূতির শিবযজ্ঞে সামিল হবেন তাঁরা। পাঁচদিন ধরে চলবে যজ্ঞ। ওই কয়েকদিন মেলাও বসবে।

এলাকায় উত্‌সবের পরিবেশ। ২০ জন পুরোহিত যজ্ঞে ঘি, কাঠ, তিল চাল প্রভৃতি সামগ্রী মিলিয়ে এক লক্ষ আট বার আহূতি দেবেন। পাশাপাশি চলবে ভুবনেশ্বরী, লক্ষ্মী, নারায়ণ, সরস্বতী, ইন্দ্র, ব্রহ্মা, গণেশের পূজা। প্রধান পুরোহিত রুদ্রাক্ষের মালা ঘুরিয়ে আহূতির হিসাব রাখবেন। শিবযজ্ঞ সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী শঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, ১৯৪৮ সালে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ধর্মসভার সিদ্ধান্ত মেনে ওই বছর থেকে শিবযজ্ঞ শুরু হয়েছে। মহারাজা একাধিকবার ওই যজ্ঞানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। ওই ঐতিহ্য মেনেই প্রতি বছর শিবযজ্ঞ হচ্ছে। বিশ্ববাসীর কল্যাণই যজ্ঞের মূল্য উদ্দেশ্য।

সমিতির কর্মকর্তারা জানান, রীতি মেনে সূর্যকান্ত মণির মাধ্যমে সৌররশ্মি প্রতিফলিত করে শিবমূর্তির পাদদেশে ওই যজ্ঞকুন্ডে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মোমের আগুন, দেশলাই কাঠি, প্রদীপের আগুন ওই কাজে ব্যবহার হয়। যজ্ঞের আহূতি হিসাবে ৬০ কেজি ঘি, ২০০ মণ আম, শাল কাঠ-সহ অন্য সামগ্রী দেওয়া হবে। ২ মে শিবযজ্ঞ শুরু হবে। তৃতীয় দিন ৪ মে রবিবার ১২ জন কুমারীর পুজো হবে। যজ্ঞ শুরুর দিন কুমারীদের নাম জানানো হবে। চতুর্থদিন হবে ষোড়সাঙ্গ আরতি। শেষদিন ৬ মে হবে পূন্যাহূতি। তার উপকরণে সুপারি, কলা, পান প্রভৃতি সামগ্রী আবিশ্যিক। পূণ্যাহূতির পর দেওয়া হবে শান্তিজল। খাগরাবাড়ি শিবযজ্ঞ সমিতির সম্পাদক জয়শঙ্কর ভট্টাচার্য জানান, পুরানো রীতি মেনে ১২ জন নাবালিকাকে কুমারী পুজো করা হয়। তাদের সকলের বয়স ৩-৮ বছরের মধ্যে হবে। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার মহারাজের সভা পন্ডিত প্রয়াত রমাশঙ্কর কাব্য ব্যাকরণ স্মৃতি তীর্থ মহাশয় অনাচার, অবিচারে মত্ত মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নতির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর ওই ভাবনা থেকে মহারাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের সভাপতিত্বে ধর্মসভা হয়। সেখানেই শিবযজ্ঞের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী শঙ্কর ভট্টাচার্যের লেখা বইয়ে ওই প্রসঙ্গে বলেন, কথিত আছে গিরিরাজ হিমালয় শিবের সঙ্গে গৌরীর বিয়ে দেওয়ার সময় হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত কোচবিহার রাজ্য জামাতা শিবকে যৌতুক প্রদান করেন।

শিবের রাজ্য হিসাবেই হোক বা প্রাকৃতিক কারণে স্থানীয় মানুষ শিবভক্ত। রাজবংশকে শিববংশ বলা হয়। ওই বইয়ে ১৩৫৯ সালের শিবযজ্ঞ ধর্মসভার সভাপতি মহারাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘আমি কামনা করি আমাদের সকলের জীবন হোক আপনাদের শিবযজ্ঞের মত মহা যজ্ঞ। যজ্ঞের অনলে পুড়ে যাক হিংসা লোভ স্বার্থপরতা।’ আয়োজক বিশ্বজিত্‌ শঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, বিশ্ববাসীর কল্যাণ শিবযজ্ঞের মূল লক্ষ্য। ওই যজ্ঞ হলে বৃষ্টি হবে বলেও প্রচলিত রয়েছে। আমরা তাই আশা করছি, যজ্ঞের পর অসহনীয় অবস্থার অবসান হবে।

rain yagna coochbihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy