গত গ্রীষ্মের মরসুমে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। এবার মরসুমের শুরুতেই দেশের সাধারণ নির্বাচন। এর জেরে উত্তরবঙ্গ-সহ সিকিমের গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুম মার খাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভোটকে ঘিরে অধিকাংশ দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা আইন শৃঙ্খলা সমস্যার আশঙ্কা করে সফরসূচি কাটছাঁট করেন। সেই সঙ্গে ভোটের জন্য দেখা দেয় গাড়ির তীব্র সংঙ্কটও। এ বারও যার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলার অধিকাংশ ছোট বড় গাড়ি প্রশাসনের তরফ থেকে ভোটের জন্য নিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে, একটি বড় অংশের পর্যটক গরমের মরশুমে সফরসূচি বাতিল করে দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন এই অঞ্চলের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। যদিও মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ অবধি এই অঞ্চলে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে বলেই পর্যটন দফতর সূত্রের খবর।
সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর সুনীল অগ্রবাল। তিনি বলেন, “ভোটের জন্য কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। তবে কিছু পর্যটক তো দিনক্ষণ বাছাই করে ঘুরবেন বলে মনে হচ্ছে। আর ভোটের কাজে গাড়ি, হোটেল, লজগুলি সরকারি ভর্তি থাকবে। এতে পক্ষান্তরে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।” যদিও হোটেল বা গাড়ির ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “সাধারণ পর্যটনের মাধ্যমে যে আয় হয়, তা ভোটের জন্য গাড়ি বা ঘর ভাড়া দিয়ে সেভাবে হবে না। কারণ, সরকারি নিয়ম মেনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই সব বুকিং-এর টাকা পেতে দীর্ঘদিন সময় লেগে যায়। দেশি বা বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে যা হয় না।”
বস্তুত, প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে জুনের শেষ অবধি সময়কে পাহাড়, ডুয়ার্সের গরমের মরশুম হিসাবে ধরা হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চের শীতের শেষেই স্কুল কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষা শেষ হতেই উত্তরবঙ্গের পাহাড়, ডুয়ার্সে ভিড় উপচে পড়ে পর্যটকদের। বিশেষ করে দোলের সময় ভিড় আরও বাড়ে। বাদ যায় না সিকিমও। তবে এ বার লোকসভা ভোটের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনই হবে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। আগামী ১৯ মার্চ থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু হয়ে যাবে ভোটের পুরোপুরি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। প্রথম দফায় ১৭ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় ২৪ এপ্রিল উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে ভোটের রেশ চলবে ১৬ মে অবধি। ওই লোকসভার ভোট গণনা। তার পরে নতুন সরকারের গঠন। সব মিলিয়ে পুরো মরশুমই কেটে যাবে ভোটের উৎসবে।
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর,এই অঞ্চলে প্রতি বছর অগস্ট থেকে নভেম্বর এবং মার্চ থেকে জুন মাস অবধি সারা বছরের ৮০ শতাংশ পর্যটক এই সময়ে ঘুরতে আসেন। গত বছর পাহাড়ের বন্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পাহাড়ের ব্যবসার ক্ষতি হয়। প্রায় ৭৬ শতাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেন। বাকিরা সিকিমমুখী হন। এ বারই পরের মরশুমে ভোটের জন্য নতুন করে প্রায় ১৫০-২০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বছরের এই দুই মরশুমে মিলিয়ে এই অঞ্চলে পর্যটনে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, “এ বার একসঙ্গে লোকসভা ও সিকিমের বিধানসভা ভোট এই মরশুমে পড়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তার উপরে আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গাড়ি। আগের মরশুমেও সমস্য ছিল। এবার ভোটের জন্য তাই অনেকটাই তা দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে।”
সরকারি সূত্রের খবর, দার্জিলিং, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলায় আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই প্রশাসনে তরফে গাড়িগুলি রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে গাড়িগুলির কাগজপত্র পুলিশ জমা নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। এতে আগাম বুকিং করা পর্যটকদের ভোগান্তির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে এনজেপি, বাগডোগরা বিমানবন্দর, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস এলাকায় ভোটের সময় পাহাড় বা ডুয়ার্সে যাওয়ার জন্য গাড়ি দ্বিগুণ টাকা দাবি করে। ইতিমধ্যে পুলিশের বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গর অন্যতম পর্যটন ব্যবসায়ী রাজ বসু। তিনি বলেন, “একে ভোটের জন্য পর্যটকদের সংখ্যা কমবে। গাড়িও পাওয়া যাবে না। পুলিশ-প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy