Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভরসন্ধ্যায় যেন অঘোষিত কার্ফু বালুরঘাটে

কেউ বিয়ের গয়না কিনতে গিয়েছিলেন। কেউ ছেলেমেয়েকে নিয়ে জামা কিনতে গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বুধবার সন্ধ্যার বালুরঘাটের বুড়াকালী মন্দির লাগোয়া এলাকার বাজার ছিল জমজমাট।

ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ।

ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

কেউ বিয়ের গয়না কিনতে গিয়েছিলেন। কেউ ছেলেমেয়েকে নিয়ে জামা কিনতে গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বুধবার সন্ধ্যার বালুরঘাটের বুড়াকালী মন্দির লাগোয়া এলাকার বাজার ছিল জমজমাট। আচমকা একদল লোককে লাঠিসোটা, বঁটি হাতে একজনকে তাড়া করতে দেখে সকলেই হকচকিয়ে যান। বাজারের দোকানদারদের অনেকে চিনতে পারেন, যাঁকে তাড়া করা হচ্ছে তিনি হলেন খোকন কর্মকার। যাঁর বিরুদ্ধে তোলা আদায়-সহ অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ কম নেই। সেই খোকনকে ভয় পেতেন এলাকার অনেকেই। তাই তাঁকে প্রাণভয়ে ছুটতে দেখে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার জন্য দোকানপাট ছেড়ে অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। একটি সোনার দোকানের অদূরে বাঁশের আগাতে খোকন পড়ে যেতেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে এলাকায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তে ভেসে যায় চারদিক। ছটফট করে নেতিয়ে যায় দেহ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জমজমাট বাজার সুনসান হয়ে যায়।

ঘটনার পরে সুনসান বাজার এলাকা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

কিছুক্ষণ পরে পুলিশ পৌঁছলেও এলাকার থমথমে পরিস্থিতি দেখে অফিসার-কর্মীরা কেউ প্রথমে এগোননি। পরে আরও পুলিশ বাহিনী পৌঁছলে সকলে টহলে নামেন। ইতিমধ্যে অবশ্য লাঠিসোটা, বঁটি হাতে থাকা জনতা উধাও হয়ে গিয়েছে। এলাকায় পড়ে রয়েছে রক্তমাখা বাঁশ, লাঠি, পাথর। সেখানে এক দোকানের আড়ালে দাঁড়িয়ে বালুরঘাট শহরের পূর্ব প্রান্তের এক বাসিন্দা জানান, তিনি বিয়ের গয়না কেনার জন্য দোকানে ছিলেন। আচমকা চোখের সামনে যে ভাবে একজনকে খুন হতে দেখলেন তাতে এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছেন যে চলাফেরার ক্ষমতা কিছুক্ষণের হারিয়ে ফেলে নড়তে পারেননি। দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়েন। পুলিশ পৌঁছনোর পরে ধীরেসুস্থে বেরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পেশায় শিক্ষক ওই প্রৌঢ়ের আক্ষেপ, পুলিশ-প্রশাসন কঠোর হাতে তোলা আদায়-সহ নানা দুষ্কর্ম রুখতে পারলে এমন আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা হয়তো হতো না।

ঘটনার পরে এলাকায় পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র।

খুনের ঘটনার পরে আতঙ্কের রেশ কাটছিল না এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা-ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ রেখেই বাজারে তোলাবাজি চলতো। এ দিন খোকন কর্মকার পাপ্পু নামে নিজস্ব এক দেহরক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে রোজকার মতো কালীবাড়ি এলাকায় যাওয়ার গলির রাস্তা ধরতেই আক্রান্ত হন বলে জানান বাসিন্দারা। বালুরঘাট থানার আইসি বিপুল বন্দোপাধ্যায় বলেন, “পাপ্পুই খোকন খুনের প্রত্যক্ষদর্শী। তাকে খোঁজা হচ্ছে।”

বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরেরাম সাহা বলেন, সকাল থেকে মাছ ও সব্জি বাজারে তোলাবাজি নিয়ে উত্তেজনা ছিল। খুনের ঘটনার পর সমস্ত বাজার বন্ধ হয়ে যায়। আজ, বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবেন বলে হরেরামবাবু জানিয়েছেন। এ দিন খোকন খুনের পর শহরের বুড়িকালীবাড়ি, বাজারপাড়া ও ডানলপমোড়, বিশ্বাসপাড়া এলাকাগুলি যেন অঘোষিত কার্ফুর চেহারা নেয়। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্সের ঘন ঘন অভিযান ও টহলে পরিস্থিতি থমথমে। গীতাঞ্জলী বাজারপাড়া এলাকার রাস্তাঘাট সন্ধ্যার পর সুনসান হয়ে যায়। রাস্তায় যানবাহন তো বটেই, কোনও রিকশাও দেখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

curfew batanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE