মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভার জন্য রাখা রয়েছে সবুজ চেয়ার। মালদহের জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
সবুজ চেয়ার আছে?
দিনভর এই প্রশ্নটা শোনা গেল মালদহে। কখনও মোবাইলে, কখনও ল্যান্ডলাইনে, কখনও বা হন্তদন্ত কর্মীর ব্যস্ত গলায়। আজ, বুধবার, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মিসভা জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে। পাঁচ হাজার সবুজ চেয়ার পাতার জন্য ডেকরেটরদের নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতারা। তাতেই ফাঁপরে পড়েছেন ডেকরেটররা। অত সবুজ চেয়ার কই? আনতে হবে কলকাতা থেকে, তার সময় নেই।
“কোনও মতে এক হাজার সবুজ চেয়ার জোগাড় করেছি,” বললেন এক ডেকরেটর। এখন তৃণমূল নেতাদের কাছে আবেদন চলছে, লাল বাদ দিয়ে অন্য রঙের চেয়ার যেন মাঠে রাখা যায়। কী বলছেন নেতারা? মালদহে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহা বলেন, “ডেকরেটরকে বলেছি, সমস্ত সবুজ চেয়ার দিতে হবে। অন্য রংয়ের চেয়ার থাকলে কাপড় দিয়ে ঢাকতে হবে।”
প্রায় একই ছবি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে। মালদহের আগে সেখানে কর্মিসভা মমতার। তার লাগবে ১২ হাজার চেয়ার। রায়গঞ্জ, ডালখোলা, কালিয়াগঞ্জ এমনকী শিলিগুড়ি থেকেও চেয়ার নিয়ে এসেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের কর্তারা। সভার দায়িত্বে থাকা নেতাদের অন্যতম জেলা পরিষদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, “সব চেয়ার সবুজ করা গেল না। তবে বেশিটাই সবুজ। বাকি অন্য রঙের চেয়ার। লাল একটাও নয়।”
মাথাব্যথা কি শুধু রং নিয়ে? মালদহের সভা হবে সন্ধ্যায়। মাঠের কাউকে মশা যাতে না কামড়ায়, তাই এদিন বিকেলে ইংরেজবাজার পুরসভা মশা মারার কামান নিয়ে এসেছিল মাঠে। ওষুধ ছেটানো হয়েছে। সেই সঙ্গে, মাঠের ধুলো রুখতে জল ছেটানো হয়েছে।
আজ, বুধবার উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লকের দুর্গাপুরে
কর্মিসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (বাঁ দিকে) মঙ্গলবার
চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। (ডান দিকে) হেলিপ্যাডের প্রহরায়
নিরাপত্তাকর্মীরা। ছবি দু’টি তুলেছেন তরুণ দেবনাথ।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে ইটাহার যাবেন। বিকেল চারটেয় ইটাহারে কর্মিসভা শুরু। ঘন্টাখানেকের সভার পরে হেলিকপ্টারেই মালদহে আসবেন। সন্ধ্যা ৬ টায় সভা শুরু হবে। অন্তত ঘন্টাদুয়েক সভা হওয়ার কথা। মাঠে একশোরও বেশি হ্যালোজেন লাইট লাগানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ১০টি জেনারেটার। কর্মিসভা হলেও জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে যেভাবে মঞ্চ বাঁধা হয়েছে, এবং মঞ্চের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে, তা বড় মাপের জনসভায় দেখা যায়। প্রায় ৩০ হাজার তৃণমূল কর্মী আসবেন বলে প্রত্যাশিত।
রাতে মালদহের নারায়ণপুরে একটি হোটেলে থাকবেন মমতা। মঙ্গলবার থেকেই ওই হোটেলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। একটি গোটা তলার সবক’টি ঘর বুক করা হয়েছে। রাতের পাতে থাকছে তাঁর পছন্দ আলু-পোস্ত, ছোট মাছের ঝোল, ওমলেট, সন্দেশ।
কর্মিসভা করতে বৃহস্পতিবার মমতা যাবেন মুর্শিদাবাদের লালবাগ। শুক্রবার নদিয়ায় কৃষ্ণনগরে সভা করে আসবেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে। আগামী সপ্তাহে তাঁর পাহাড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধিতা ঘুচিয়ে, দল-নির্দিষ্ট প্রার্থীর জন্য প্রচার চালানোর বার্তা দিতেই আসছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু মালদহের কর্মিসভার প্রস্তুতিপর্বের তুমুল ব্যস্ততাতেও একসঙ্গে দেখা গেল না জেলার দুই হেভিওয়েট নেতা সাবিত্রী মিত্র আর কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে। ক’দিন আগে জেলার দুই প্রার্থীকে নিয়ে কর্মিসভায় তাঁদের মধ্যে সংঘাত সামনে চলে এসেছিল। মঙ্গলবারও দু’জনে নিজের নিজের সঙ্গীদের নিয়ে ঘুরে গেলেন সভার মাঠ। মুখোমুখি দেখা হল না একবারও।
সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy