মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরে তপন থানার দ্বীপখন্ডা অঞ্চলের জিদরা এলাকায় অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের সংঘর্ষ, পুলিশের গাড়ি ভাঙচূর ও থানায় বিক্ষোভের জেরে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল। পুলিশের সামনেই ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার দ্বীপখন্ডা অঞ্চলের জিদরা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে দুপক্ষের ১৪ জন জখম হন। তাদের মধ্যে ১২ জন বিজেপি সমর্থক এবং ২ জন তৃণমূল সমর্থক। গুরুতর আহত ৪ জন বিজেপি সমর্থককে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জখম ২ জন তৃণমূল সমর্থক তপন ব্লক হাসপাতালে ভর্তি। সংঘর্ষে পুলিশের জিপে ঢিল ছোড়া হলে কাচ ভেঙেছে।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৬ জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার শীসরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “পঞ্চায়েতের একটি পুকুরে মাছ ধরা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। উভয় তরফে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।” দলের সমর্থকদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিজেপি দুপুরে তপন থানায় বিক্ষোভ দেখায়।
তপনের বিজেপি নেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়ের জানান, তিন বছর ধরে লিজ নিয়ে এলাকার গরিব মহিলারা ওই পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন। কিন্তু মাছ ধরার উপর সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। থানাতে আলোচনার মাধ্যমে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধ করার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁর অভিযোগ, “এ দিন সকালে তৃণমূল সমর্থিত বাহিনী মাছ মারতে থাকে। মহিলারা বাধা দিতে গেলে পুলিশের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। অথচ পুলিশ তাদের না ধরে বিজেপির লোকজনকে বাড়ি থেকে ধরল। প্রকৃত দোষী ধরা না হলে আন্দোলন হবে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলে তপন ব্লক সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ২০১১ সালে আরএসপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই পুকরকে খাস দেখিয়ে দলীয় সমর্থিত একটি মহিলা গোষ্ঠীকে মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। বর্তমানে জমির লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাছাড়া পুকুরের মালিক হাইকোর্টে মামলা করে মাছ ধরার উপর স্থগিতাদেশ পান। তাঁর বক্তব্য, “আরএসপি-র লোকজন বিজেপিতে যোগ দিয়ে জোর করে পুকুর দখলে রেখে মাছ ধরতে যায়। সেসময় থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে। পুলিশকে পুকুরটি দেখাতে নিয়ে যেতেই ওরা হামলা চালায়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।” এদিন বালুরঘাট হাসপাতালে স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর দলনেত্রী জারিনা বিবি জানান, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তৃণমূল ওই পুকুর দখল করে মাছ লুঠের চেষ্টা করছিল। লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পুকুরে মাছ ছাড়া হয়। আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা পুকুরে নামিনি। অথচ তৃণমূলের লোকেরা মাছ ধরতে আসে। বাধা দিলে পুলিশের সামনেই হামলা করে। ওই পুকুরের মালিকানা দাবি করে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক জলিল মণ্ডল পাল্টা বলেছেন, “বাম আমলে ক্ষমতার বলে পুকুরটিকে খাস দেখিয়ে তৎকালীন পঞ্চায়েত ওই গোষ্ঠীকে লিজ দেয়। আদালতের রায়ে আমি স্থগিতাদেশ পেয়ে বিষয়টি পঞ্চায়েত ও পুলিশকে জানিয়েছি।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল ব্লক সভাপতি আমজাদ মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েতের অধীন সমস্ত পুকুরের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এ দিন আলোচনার দিন ঠিক ছিল। তার মধ্যে এই ঘটনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy