Advertisement
E-Paper

মাঠ-পার্ক হয়নি, ক্ষোভ বাড়ছে বাগডোগরায়

জমি-জট ছাড়ানো যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নে বাগডোগরার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা কমবেশি সকলেই দূষেছেন নেতা-কর্তাদের। ডান-বাম নির্বিশেষে সব দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, জেলা ও রাজ্য স্তরের নেতাদের একাংশ বাগডোগরার সমস্যাকে ততটা গুরুত্ব দেন না বলে ভোগান্তি কমে না। যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়তেও দেখা গিয়েছে অনেককে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৪
পাঁচ দশকেও যথাযথ নিকাশির ব্যবস্থা হয়নি। বাগডোগরা হাটের অবস্থা এখন এমনই। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

পাঁচ দশকেও যথাযথ নিকাশির ব্যবস্থা হয়নি। বাগডোগরা হাটের অবস্থা এখন এমনই। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

জমি-জট ছাড়ানো যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নে বাগডোগরার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা কমবেশি সকলেই দূষেছেন নেতা-কর্তাদের। ডান-বাম নির্বিশেষে সব দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, জেলা ও রাজ্য স্তরের নেতাদের একাংশ বাগডোগরার সমস্যাকে ততটা গুরুত্ব দেন না বলে ভোগান্তি কমে না। যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়তেও দেখা গিয়েছে অনেককে।

যেমন, আপার বাগডোগরায় একটি চায়ের দোকানের আড্ডার কথাই ধরা যাক। সেখানে মাঝেমধ্যেই এক সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায় এলাকার নানা দলের নেতা-কর্মীকে। কেউ তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। কেউ সিপিএম কর্মী। কেউ আবার কংগ্রেসের স্থানীয় স্তরের নেতা। সেখানেই একজন সিপিএম নেতা বললেন, “নেতা-কর্তারা জমি সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। সেই নেতাদের তৎপরতায় বাগডোগরা বিমান বন্দর দেশীয় থেকে ক্রমশ আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে। এখন রাতেও বিমান ওঠানামা করে। ব্যাঙ্কক-পারো উড়ান চলাচল করে। শীঘ্রই বাগডোগরা-কাঠমান্ডু উড়ান চালু হবে। তা হলে বাগডোগরায় ক্ষোভ বাড়বে না কেন?”

পাশে দাঁড়ানো তৃণমূলের একজন স্থানীয় স্তরের নেতা সেই কথার রেশ টেনে জানিয়েছেন, তাঁরাও জমি নিয়ে দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বহুবার জানিয়েও কোনও আশার আলো দেখতে পাননি। এলাকার কংগ্রেসের এক যুব নেতা জানান, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট থাকার সময়ে এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার চেষ্টা করেছিলেন। তখন ফের জমি সমস্যা মেটার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভেঙে যেতেই স্বপ্নও ভেঙেছে তাঁদের।

এত হতাশা সত্ত্বেও হাল ছাড়তে রাজি নন বাগডোগরার বাসিন্দারা। এখনও একের পর এক প্রস্তাব বাগডোগরা থেকে পাঠানো হয় নানা স্তরে। কখনও পঞ্চায়েতের তরফে প্রস্তাব যায় সমিতিতে। কখনও মহকুমা পরিষদের কাছে। কখনও বাগডোগরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে প্রস্তাব যায় পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। আবার কখনও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছ থেকেও প্রস্তাব যায় জেলা ও মহকুমা সদরে।

বাসিন্দারা জানান, আপার ও লোয়ার বাগডোগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ১০ বছর ধরে মহকুমা পরিষদ, বিডিও অফিস, এসডিও-র দফতরে এলাকায় সাফাই চালু রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে। রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু নির্মাণের প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাজের কাজ হয়নি। ব্যবসায়ী সমিতির তরফে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পিপিপি মডেলে মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার আর্জি জানানো হলেও সরকারি তরফে সাড়া মেলেনি। এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীরা ২০ বছর ধরে চেষ্টা করেও বাগডোগরার কেন্দ্রীয় এলাকায় একটা বড় খেলার মাঠের ব্যবস্থা করাতে পারেননি। এটাও ঘটনা যে গোটা বাগডোগরায় একটা পার্ক নেই। তাই বাগডোগরার খুদেদের নিয়ে বিকেলে সময় কাটানোর জায়গা খুঁজে হয়রান হন অভিভাবকেরা।

বস্তুত বাগডোগরায় বিনোদনের তেমন পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। একমাত্র সিনেমা হল ‘মিলনী’ বন্ধ। সেখানে এখন গড়া হচ্ছে বেসরকারি মার্কেট কমপ্লেক্স। একদা বাগডোগরা নাগরিক কমিটি হুলিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে বড় মাপের বিনোদন পার্ক গড়ার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা নিয়েও গুরুত্ব সহকারে চিন্তাভাবনা করেননি কেউ। অন্তত বাগডোগরা এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই তেমনই মনে করেন।

অথচ সরকার চাইলে বাগডোগরায় কত কিছু হতে পারত বলে মনে করেন বাগডোগরার চিত্তরঞ্জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রাণবন্ধু ঘোষ। ১৯৫২ সালে তিনি বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে ফুটবল খেলতে শিলিগুড়ি শহরে এসে আর ফেরেননি। বাগডোগরায় থেকে যান। নামমাত্র মাইনেয় ১২ জন ছাত্র নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। ৯৫ সালে অবসর নিয়েছেন তিনি। প্রাণবন্ধুবাবু বলেন, “কত সম্পদ রয়েছে এই বাগডোগরায়। সব কিছু ঠিকঠাক ব্যবহার করলে বাগডোগরা হয়ে উঠতে পারত একটা আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু, তা এখনও হয়নি। এটা হওয়া দরকার। না হলে বাগডোগরার অন্দরে যে ক্ষোভ তিল তিল করে দানা বাঁধছে তা ফেটে পড়তে পারে।” এটুকু বলে থেমে যান প্রাণবন্ধুবাবু। পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আচ্ছা, কত জায়গায় কত কিছু হয়। তা হলে বাগডোগরায় একটা মাঠ, স্টেডিয়াম করতে এত গড়িমসি কেন? একটা পার্ক করা যায় না? ছেলেমেয়েরা খেলাধুলো না করলে মন ও শরীরের বিকাশ হতে পারে না। এটা সরকারকে বুঝতে হবে।”

(চলবে)

bagdogra park amar shahar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy