সুনসান দলমোড় চা বাগান। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
দলমোড় বাগানের সহকারী ম্যানেজার খুনের ঘটনায় অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে বাগান খোলার দাবি তুলল আরএসপির চা শ্রমিক সংগঠন। এর আগে শ্রমিক অসন্তোষের কারণ জানিয়ে ওই বাগান দশ মাস বন্ধ থাকায় সংকটে পড়তে হয় শ্রমিকদের। সে সময় বাগানের ১০ জন বাসিন্দা অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে এবং বিনা চিকিৎসায় মারা যান বলে অভিযোগ। ফের বাগান বন্ধ হওয়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত বাগান চালু করার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম সংগঠন। লোকসভা ভোটের মুখে দলমোড় চা বাগান বন্ধের ঘটনা নিয়ে মালিক ও সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরএসপি। চা বাগানের শ্রমিকদের পরিস্থিতি দেখে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে বৃহস্পতিবার ওই বাগানে আসবেন আরএসপির শ্রমিক সংগঠনে রাজ্য কমিটি সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ। অশোকবাবু বলেছেন, “দোষ করেছে এক জন শ্রমিক। খুনের ঘটনা মানা যায় না। তা বলে বাগান বন্ধ করায় গোটা বাগানের শ্রমিক এবং তাঁদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের কেন তার শাস্তি পেতে হবে। বাগান শ্রমিকদের বেকায়দায় ফেলতে মালিকদের বাগান বন্ধ করার কৌশল মানা যায় না।” ঘটনার পরে বাগান বন্ধ করার বিষয়টি মানতে পারছেন না রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। শ্রমমন্ত্রীর কথায়, “বাগানের ঘটনা আইন শৃঙ্খলার বিষয়। মালিক পক্ষের এক জনকে এ ভাবে খুন করার ঘটনা মানা যায় না, সেই সঙ্গে কিছু মালিক নানা রকমের অজুহাত দেখিয়ে বাগান বন্ধ করেন। বাগান খুলতে জেলাশাসককে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বলা হয়েছে। ওই বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে পরবর্তীতে তা নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসা হবে। এক জন শ্রমিকের দোষে পুরো বাগানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।”
বুধবার ডুয়ার্সের বীরপাড়া থানার দলমোড়ে এক মহিলা শ্রমিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগে ওই শ্রমিকের স্বামী তথা বাগানের শ্রমিক শোভেন রানা সহকারী ম্যানেজার অজিত পানোয়ারকে খুকরি দিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। সে দিন কর্তৃপক্ষ বাগান ছাড়েন। গত শনিবার বাগান বন্ধ করার নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরে বাগানের শ্রমিক মহলে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দেওয়াতে শ্রমিকরা দল বেঁধে কাজের খোঁজে ভূটানের পাথর খাদানে বা বাগান লাগোয়া নদীতে পাথর ভেঙে দিন গুজরান করছেন বলে অভিযোগ। দীর্ঘ দিন টানা বাগান বন্ধ থাকলে ফের অনাহারে শ্রমিকদের পড়তে হবে বলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ১২০০ জন শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের কয়েক হাজার সদস্য। ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে বাগান ১০ মাস বন্ধ ছিল ঘরে ঘরে চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয় পাথর ভাঙার কাজ করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে পরিবারের সকলের খাদ্য জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হতো বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়ন এন ইউ পি ডবলুর নেতা মণি ডারনালের কথায়, “যিনি খুনের মূল অভিযুক্ত তাঁকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শ্রমিকরা সকলে মিলে ওই ঘটনা ঘটায়নি। বাগান চালু করা নিয়ে প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের দাবি করছি।” তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভানেত্রী দোলা সেন বলেছেন, “খুনের ঘটনায় এক জন থাকুক বা দশ জন থাকুক, মালিক বাগান বন্ধ করবে তা স্বাভাবিক। ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় মালিকপক্ষকে বুঝিয়ে বাগান চালুর যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে বাগান ফের চালু হবে বলে বিশ্বাস করি।”
চা বাগান মালিক সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য এ দিন বলেছেন, “কর্তৃপক্ষের এক জনের উপর আঘাত করা মানে পুরো কর্তৃপক্ষের উপরেই আক্রমণ করা। চা বাগানের পরিস্থিতি ভাল নয় বুঝতে পেরে মালিক পক্ষ বাগান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy