Advertisement
E-Paper

মন্ত্রী-আমলার ভিড়ে তিতিবিরক্ত বাগান বলছে, এটা কি চিড়িয়াখানা

রায়পুর কিংবা রেড-ব্যাঙ্ক চা বাগান কী তাঁদের পছন্দের মানচিত্রে ছিল? দিন কয়েক আগেও তা বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু ‘অপুষ্টি’ জনিত রোগে বাগান শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ডুয়ার্সের ওই দুই বাগানে এখন ক্রমান্বয়ে লাল বাতির গাড়ি আর মন্ত্রী-আমলার ভারী ভিড়। যা দেখে খুশি হওয়া দূরে থাক। বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ বাগান শ্রমিকরা বলছেন‘আমরা কী চিড়িয়াখানার জন্তু!’ কটাক্ষ উড়ে আসছে, ‘এত দিনে? পথ ভুলে নাকি!’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০১:২৪
রায়পুর চা বাগানে কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। শনিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

রায়পুর চা বাগানে কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। শনিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

রায়পুর কিংবা রেড-ব্যাঙ্ক চা বাগান কী তাঁদের পছন্দের মানচিত্রে ছিল?

দিন কয়েক আগেও তা বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু ‘অপুষ্টি’ জনিত রোগে বাগান শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ডুয়ার্সের ওই দুই বাগানে এখন ক্রমান্বয়ে লাল বাতির গাড়ি আর মন্ত্রী-আমলার ভারী ভিড়।

যা দেখে খুশি হওয়া দূরে থাক। বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ বাগান শ্রমিকরা বলছেন‘আমরা কী চিড়িয়াখানার জন্তু!’ কটাক্ষ উড়ে আসছে, ‘এত দিনে? পথ ভুলে নাকি!’

শনিবার রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে গিয়েছিল কংগ্রেসের সাত জনের প্রতিনিধি দল। বাগান থেকে তাঁরা বেরিয়ে যেতেই বাগান শ্রমিক বালকি ভোক্তার মন্তব্য: “মনে হচ্ছে আমাদের নিয়ে তামাশা চলছে। বাগানে মনে হয় মেলা বসেছে!”

ক্ষুব্ধ বালকির অভিযোগ, তাঁদের দুঃখ দুর্দশার কথা লিখে সকলে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু তার ফল কী হবে তার কি কোনও নিশ্চয়তা আছে? বিধায়ক দলের বাগানে আসবে বলে খবর পেয়ে নিজের তিন বছরের নাতনিকে পিঠে নিয়ে দুপুর থেকে কারখানার সামনে অপেক্ষা করছিলেন পুষা নাইক। তিনি বলছেন, “ভিক্ষের মতোই অনুদানে আমরা বেঁচে রয়েছি। এই সাহায্য দরকার নেই। বাগানটা খুলে দিক। তাহলেই সমস্যা মিটে যাবে।”

রায়পুর বাগানেও এ দিন ‘পা’ পড়েছিল কংগ্রেস নেতা-নেত্রীর। ফিরে যেতেই সেখানেও একই রকমের শ্লেষ উড়ে এল। সাতটি গাড়ির কনভয় ধুলো উড়িয়ে বাগান থেকে বেরিয়ে যেতেই বছর চল্লিশের সাবিনা মুণ্ডা বললেন, “বাগান খুলছে না, অথচ শুধু আশ্বাস দিয়ে গানি হাঁকিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমরা কি চিড়িয়াখানর জন্তু?’’যা শুনে বুধন মুণ্ডা, হীরালাল ওঁরাও, কানু মুণ্ডারাও বলছেন, “একেবারে ঠিক কথাটা বলেছে গো।”

জলপাইগুড়ি লাগোয়া রায়পুর এবং ডুয়ার্সের রেডব্যাঙ্ক এই দুই বন্ধ বাগানে অর্ধাহার-অপুষ্টি, বিনাচিকিৎসায় শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে বেশ কিছু দিন ধরেই। শুক্রবার বন্ধ বাগান পরিদর্শনে এসে স্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বাম বিধায়কেরা। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও যে ‘স্বাগত’ ছিলেন, এমন নয়। তার আগে গাড়ি হাঁকিয়ে গাল ভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তারও আগে, খবর পেয়েই ছুটে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল।

তবে মন ভেজেনি শ্রমিকদের। শনিবার কংগ্রেস বিধায়কদের দল রেডব্যাঙ্কের মৃত শ্রমিক শেখর নাগারচির বাড়িতে গিয়েছিলেন। শেখরের মা আখজি দেবীর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন বিধায়করা। বন্ধ বাগানের কারখানার শেডে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সদস্যরা, শ্রমিকরা তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা জানায়। গত ১১ বছর অচলাবস্থা চলছে বলে জানিয়ে শ্রমিকদের অভিযোগ, তিন দফায় বাগান সাময়িক সময়ের জন্য চালু হলেও মালিকপক্ষ কিছুদিনের মধ্যে বাগান ছেড়ে চলে যান। অক্টোবর থেকে শেষ বার বাগানটি বন্ধ হয়েছে। বন্ধ বাগান ভাতা মিলছে না, রেশনের চালে পোকা ও কাঁকর ভরা সহ জলের সমস্যা, মেডিক্যাল ক্যাম্পে ওষুধ থাকে না বলেও শ্রমিকরা বিধায়কদের অভিযোগ জানিয়েছেন। বুনো কচু, শাক সেদ্ধ করে খেয়ে বাঁচতে হচ্ছে তাঁদের।

এ দিকে, বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ বিধায়কদের দল রায়পুর বাগানে পৌঁছন। একশো দিনের কাজ সেরে গাছ তলায় বসে থাকা কয়েকজন মহিলা শ্রমিককে দেখে রবিবাবু-সহ বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, নেপাল মাহাতো, সাওনি সিংহ রায়, মোহিত সেনগুপ্ত, সুনীল তিরকি, জোসেফ মুণ্ডা, সুখবিলাস বর্মা ও কেশব রায় সমস্যা কথা শুনতে চান। বিধায়করা জানান, প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশে তাঁরা এসেছেন। সোমবার বিধানসভায় শ্রমিকদের সমস্যার কথা তাঁরা তুলে ধরবেন। বিধায়ক সাওনি দেবী জানতে চাইলেন, “এখন কী চাইছেন?” বিন্দি মুণ্ডা বলেন, “বাগান খুলুক এটাই চাই।’’ কলমি শাক নিয়ে ফিরছিলেন পশুপতি মুণ্ডা। রবিবাবু তাঁর কাছে জানতে চান, “শুধু কী শাক দিয়ে ভাত খাবে?” বিরক্ত পশুপতি বলেন, “শুধু ভাত তো খাওয়া যায় না।”

jalpaiguri banarhat redbank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy