Advertisement
E-Paper

রাস্তার ডাকনাম বিধায়ক রোড, ভোট যেন পাড়াবন্দি

চার প্রতিদ্বন্দ্বীই পরস্পরের প্রতিবেশী। ময়নাগুড়ির আনন্দনগরে এক পাড়াতেই থাকেন ময়নাগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারী, আরএসপি-র দীনবন্ধু রায়, কংগ্রেসের পুরঞ্জন সরকার এবং বিজেপি-র প্রদীপ রায় ডাকুয়া। তিন জন আবার পাড়ার একই গলিতে থাকেন। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা হতে কুশল বিনিময়ে অভ্যস্ত তাঁরা। এখন অবশ্য চারজনের দেখা-সাক্ষাৎ তেমন হচ্ছে না। বরং একে অন্যকে দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন। অন্তত আরএসপি প্রার্থীর তেমনই মনে হচ্ছে।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০১:২০

চার প্রতিদ্বন্দ্বীই পরস্পরের প্রতিবেশী। ময়নাগুড়ির আনন্দনগরে এক পাড়াতেই থাকেন ময়নাগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারী, আরএসপি-র দীনবন্ধু রায়, কংগ্রেসের পুরঞ্জন সরকার এবং বিজেপি-র প্রদীপ রায় ডাকুয়া।

তিন জন আবার পাড়ার একই গলিতে থাকেন। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা হতে কুশল বিনিময়ে অভ্যস্ত তাঁরা। এখন অবশ্য চারজনের দেখা-সাক্ষাৎ তেমন হচ্ছে না। বরং একে অন্যকে দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন। অন্তত আরএসপি প্রার্থীর তেমনই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, “এর মধ্যে একদিন দেখি অনন্ত গলি দিয়ে হেঁটে আসছে। আমাকে দেখে অন্য দিকে চলে গেল।” প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বীদের এমন ছোটখাটো ঘটনা উপভোগ করতে ছাড়ছেন না কেউ। তাঁদের বক্তব্য, ফল যাই-ই হোক না কেন, পাড়া থেকেই তো একজন বিধায়ক হবেন।

অনন্তবাবু আরএসপি-এর বিধায়ক ছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। সম্প্রতি দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি এ বার ঘাসফুল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এক সময়ের সতীর্থ আরএসপির দীনবন্ধুবাবু দুজনই পেশায় অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। ছেলেবেলা থেকে বন্ধুত্ব। ১৯৭১ সালে এক সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এক দিনে বাম রাজনীতিতে যোগদান ১৯৭৮ সালে। আনন্দনগর পাড়ায় পূর্ত দফতরের অফিস সংলগ্ন গলির মাথায় দীনবন্ধুবাবুর বাড়ি। এ বার তিনি কোদাল-বেলচা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। গলির মাঝামাঝি অনন্তদেববাবুর ঠিকানা পাঁচটা বাড়ি পরে থাকেন পেশায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক পুরঞ্জনবাবু। তিনি হাত চিহ্নে লড়ছেন। অন্য প্রার্থী পেশায় ব্যবসায়ী প্রদীপবাবু পদ্ম ফুল প্রতীক নিয়ে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ওই পাড়ায় তিন প্রার্থী থেকে সামান্য দূরে থাকেন। বয়সেও অন্যদের চেয়ে ছোট।

একগাল হেসে পুরঞ্জনবাবু জানালেন, অনন্তবাবুর স্ত্রী বীণাদেবী আমার সহকর্মী একই স্কুলে শিক্ষকতা করি। শুক্রবারেও স্কুলে কথা হয়েছে অনন্তবাবুর সঙ্গেও কথা হয়। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অনন্তবাবু বললেন, “পুরঞ্জন ভাল ছেলে। ওঁর পরিবার আমাদের ঘনিষ্ট।” প্রার্থীরা কেমন প্রশ্ন তুলতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন দীনবন্ধু রায়। বললেন, “অনন্ত বাল্যবন্ধু। পুরঞ্জনবাবু ভদ্রলোক।” প্রদীপ রায় ডাকুয়া বললেন, “ওঁরা আমার গুরুজন। ওঁদের জেঠু বলে সম্মান করি।”

তবে শুধু প্রার্থীদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অটুট থাকাই নয়, ভোটের লড়াই প্রচারের ময়দান ডিঙিয়ে এখনও হেঁসেলে মাথা গলাতে পারেনি। পুরঞ্জনবাবুর স্ত্রী কণিকাদেবী বলেন, “প্রার্থীরা প্রত্যেকে ভাল মানুষ। দেখা হলে কথা হয়। সময় পেলে বাড়িতেও যাই।” ভোটের প্রচারে যাবেন না? দীনবন্ধুবাবুর স্ত্রী সুরবালা দেবীর সংক্ষিপ্ত জবাব, “যাব।” অন্য প্রার্থীরা কেমন? হেসে বলেন, “সবাই ভাল মানুষ।”

বাবার হয়ে প্রচারে নেমে কী বলবেন এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি অনন্তবাবুর একমাত্র ছেলে অরূপ। তাঁর কথায়, “প্রত্যেকে কাকু না হয় জেঠু। কী যে বলি সেটা বুঝতে পারছি না। দেখি দল কী বলে।” অনন্তবাবুর স্ত্রী বীণাদেবীর কথায়, “লড়াইটা ভোটের মাঠে থাকুক, সেটাই চাই।” একই আশা বিজেপি প্রার্থী প্রদীপবাবুর স্ত্রী কবিতাদেবী ও ছেলে শৌভিকের। সেই সঙ্গে কবিতাদেবী বলেন, “খুব মজা লাগছে একই পাড়ায় সব প্রার্থী।”

যদিও চেনা ছবি যে কিছুটা ফিকে হয়নি তা নয়। কুশল বিনিময়ের অভ্যেস পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে না পারলেও প্রার্থী হয়ে প্রতিবেশীরা এখন আস্তিন গুটিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপও দাগছেন। এলাকার লোকজন সেটা শুধু চুটিয়ে উপভোগ করছেন না, রসিকতা করছেন। আনন্দনগরের পেট চিরে যাওয়া স্টেশন রোডের নাম পাল্টে বিধায়ক রোড বলতে শুরু করেছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা তথা ময়নাগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সম্পাদক স্বপন দত্ত বলেন, “চারটি প্রধান দলের প্রার্থী আমাদের পাড়ার বাসিন্দা। যেই জিতুক আমরা নিশ্চিত বিধায়ক পাড়াতে থাকছেন।” গৃহবধূ রূপা দত্ত বলেন, “খুব মজা হচ্ছে। পাড়ার রাস্তার নাম দিয়েছি বিধায়ক রোড।” স্থানীয় যুবক সুমিত সাহার কথায়, “বিধানসভা উপ-নির্বাচন যেন এই পাড়াতেই। বেশ লাগছে।”

কেন এক পাড়া থেকে চার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী? দলীয় নেতৃত্ব ঘটনাটিকে কাকতালীয় বলে দাবি করেছেন। আরএসপি-র ময়নাগুড়ি জোনাল সম্পাদক অতুল রায়, ব্লক কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ঘোষাল, বিজেপি মণ্ডল সভাপতি অনুপ পাল আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে বলেছেন, “ঘটনাটি কাকতালীয়। পাড়া দেখে নয় যোগ্য ভেবে প্রার্থী বাছাই হয়েছে।” তবে সেটা নিয়ে বাসিন্দাদের মাথাব্যথা নেই। তাঁরা উপভোগ করছেন পাড়ায় এই ভোটের হাওয়া।

loksabha election biswajit bhattacharya moynaguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy