Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাহুল দেখুন কী ভাবে আছি, রাস্তা সারাইয়ে বাধা জনতার

খন্দে পড়ুন রাহুল গাঁধী। টের পান পথ-যন্ত্রণা। লোকসভা ভোট নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অভিশাপ নয়, কংগ্রেস সহ-সভাপতির এমন অভিজ্ঞতা হোক চাইছেন কিছু আম-আদমি। উত্তরবঙ্গের মালবাজারের সেই বাসিন্দাদের বাধাতেই সোমবার রাহুল গাঁধীর যাত্রাপথ সংস্কারে নেমেও পিছিয়ে আসতে হল প্রশাসনকে। এলাকাবাসীর চাওয়া, “রাহুলের মতো ভিভিআইপি-র জন্য কেন জোড়াতালি দিয়ে রাস্তা সংস্কার হবে? উনি দেখুন, কেমন রাস্তা দিয়ে আমাদের দিন-রাত যেতে হয়। আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাই, সে রাস্তা দিয়েই ওঁর গাড়িও যেতে হবে।” তাঁদের সংযোজন, “রাস্তা সারালে পাকাপাকি সারানো হোক।”

রাহুলের কনভয় এই রাস্তা দিয়েই যাওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।

রাহুলের কনভয় এই রাস্তা দিয়েই যাওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৫
Share: Save:

খন্দে পড়ুন রাহুল গাঁধী। টের পান পথ-যন্ত্রণা।

লোকসভা ভোট নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অভিশাপ নয়, কংগ্রেস সহ-সভাপতির এমন অভিজ্ঞতা হোক চাইছেন কিছু আম-আদমি। উত্তরবঙ্গের মালবাজারের সেই বাসিন্দাদের বাধাতেই সোমবার রাহুল গাঁধীর যাত্রাপথ সংস্কারে নেমেও পিছিয়ে আসতে হল প্রশাসনকে।

এলাকাবাসীর চাওয়া, “রাহুলের মতো ভিভিআইপি-র জন্য কেন জোড়াতালি দিয়ে রাস্তা সংস্কার হবে? উনি দেখুন, কেমন রাস্তা দিয়ে আমাদের দিন-রাত যেতে হয়। আমরা যে রাস্তা দিয়ে যাই, সে রাস্তা দিয়েই ওঁর গাড়িও যেতে হবে।” তাঁদের সংযোজন, “রাস্তা সারালে পাকাপাকি সারানো হোক।”

আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী জোসেফ মুন্ডার সমর্থনে আজ, মঙ্গলবার জুরান্তি চা বাগানে কর্মিসভা করার কথা রাহুলের। বিশেষ বিমানে হাসিমারার বায়ুসেনা ছাউনিতে নামার পরে, সেখান থেকে হেলিকপ্টারে মেটেলি এবং মেটেলি বাজার থেকে সড়ক পথে জুরান্তি তাঁর গন্তব্য। সেই পথেই মেটেলি বাজার থেকে জুরান্তি পর্যন্ত ছ’কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন বেহাল।

প্রশাসন সূত্রের খবর, গত রবিবার রাহুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ’ (এসপিজি) ওই ছ’কিলোমিটার পথে খানাখন্দ ভরাট করার অনুরোধ করে প্রশাসনকে। মহকুমা প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দেয়। এ দিন মেটেলির নাগেশ্বরী চা বাগান এলাকায় সেই কাজ শুরু হতেই ছুটে যান বাসিন্দারা। বিক্ষোভের মুখে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই রাস্তায় শেষ বার পিচ পড়েছিল অন্তত দু’দশক আগে। বছর চারেক আগে এক বার অস্থায়ী সংস্কার হয়। তার পর কিছু হয়নি। পিচের চাদর বেপাত্তা। প্রায় ১৬ ফুট চওড়া রাস্তাটা দিয়েই নাগেশ্বরী, জুরান্তি এবং ইংগু চা বাগানে যেতে হয় অন্তত চার হাজার শ্রমিক-কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের। কোথাও হাঁ করে থাকা গর্ত, কোথাও ধুলো ওড়া রাস্তাটা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনের বাধ্যতামূলক বরাদ্দ, দুর্ভোগ বা ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

অমিত শর্মা, হরিশ অধিকারীদের বক্তব্য, “বারবার বলেও ভাঙা রাস্তা মেরামত হয়নি। রাহুল গাঁধী আসুন, দেখুনকী অবস্থায় আছি। ওঁর জন্য তড়িঘড়ি জোড়াতাপ্পি মেরে রাস্তা সারিয়ে প্রশাসন মান বাঁচাবে, সেটা হবে না।” মহকুমাশাসক (মালবাজার) জ্যোর্তিময় তাঁতি বলেন, “এসপিজি-র অনুরোধে রাস্তা সংস্কার শুরু হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের বাধায় কাজ বন্ধ। এসপিজি-কেও জানিয়েছি। ওরা ওই রাস্তা দিয়েই রাহুল গাঁধীকে আনবে।”

রাস্তা খারাপ হলে তা যে ভিভিআইপি-দের নজরে পড়ে, এ রাজ্য তা আগেও দেখেছে। দিন তিনেক আগেই কৃষ্ণনগর থেকে বারাসতে সভা করতে যাওয়ার পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দশা নিয়ে প্রকাশ্য সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও সমস্যায় নজর দেওয়ার কথা বলেছেন। মেটেলির রাস্তাটি দেখভালের দায়িত্ব জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের। সত্তরের দশক থেকে সেখানে টানা ক্ষমতায় বামেরা। তবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নূরজাহান বেগমের বক্তব্য, “এত দিন কেন রাস্তাটা সংস্কার হয়নি, বলতে পারব না।” একটু বিশদে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দীনকুমার ওঁরাও বলেন, “এ রকম বেশ কিছু রাস্তা এই জেলায় বেহাল। বরাদ্দ না থাকায় এ বার জেলা পরিষদ গঠনের পরে সেগুলি সংস্কার সম্ভব হয়নি।” কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি যে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা মেটেলি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহম্মদ মুস্তাক। বলেছেন, “যে রাস্তা পাকাপাকি ভাবে সারানোর দাবি তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে করছেন, সেই রাস্তা আচমকা এক নেতার জন্যে তড়িঘড়ি বালি-পাথর ফেলে সংস্কার শুরু হলে এলাকাবাসীর ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক।” রাস্তা নিয়ে রাজনৈতিক কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়েননি এলাকার তৃণমূল নেতা তথা কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রামারি। বলেছেন, “কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা আসার আগে এ ভাবেই সব কিছুতে জোড়াতালি দেওয়া হয়। তাই ওঁরা দেশের বাস্তব হাল জানেন না।” তবে যাঁর সমর্থনে রাহুলের কর্মিসভা, জুরান্তির বাসিন্দা সেই জোসেফ মুন্ডা বলেন, “রাহুল গাঁধী সাধারণ মানুষের মতো সকলের সঙ্গে মেশেন। বাসিন্দারা যে বেহাল পথে চলাচল করছেন, সে পথেই জুরান্তিতে আসতে ওঁর অসুবিধা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sabyasachi ghosh malbajar rahul gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE