শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসির দফতরে বিক্ষোভ বিজেপির।
রামঘাট শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মন্ত্রী একজন প্রতিবাদকারীকে চড় মেরেছেন বলে অভিযোগ ওঠার পরে আন্দোলনে নেমেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের নেতৃত্বে রোজই পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। তা নিয়ে রাস্তায় নামায় হুমকি দিয়েছে তৃণমূলও। বুধবার আরও এক ধাপ এগিয়ে শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব।
দলীয় অফিসে বসে গৌতমবাবুর অভিযোগ, “মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আইন মানেন না। ভোটের সময়ে উনি অসমের একটি সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি। তা নিয়ে অভিযোগও পেয়েছি। তা ছাড়া, গত কয়েক বছরে তিনি যে পরিমাণ জমি, সম্পত্তি করেছেন তা ভাবা যায় না। ওঁর আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির হিসেবের সঙ্গতি নেই বলে অভিযোগ পেয়েছি। সমস্ত নথিপত্র নিয়ে ফাইল তৈরি করছি। রাস্তায় নেমে মানুষকে সে সব জানানো হবে। আইনের দ্বারস্থও হব।” আগামী ১১ অক্টোবরই জলপাইমোড় এলাকায় মিছিল, পথসভা করার কথা বলেন গৌতমবাবু। এদিন কংগ্রেস নেতা উদয় চক্রবর্তী, হিন্দি হাইস্কুলের ছাত্র সোনু পটেল এবং সংবাদপত্র কর্মী দিবাকর মন্ডলের খুনের মামলা ফাইল ফের খোলার কথা ফের বলেছেন মন্ত্রী।
সম্প্রতি শহরে রামঘাট এলাকায় নতুন একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভকারীকে চড়, লাথি মারার অভিযোগ ওঠে। পক্ষান্তরে, অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও মন্ত্রী-সহ সরকারি অফিসারদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। গত মঙ্গলবারই মহানন্দ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে শঙ্করবাবুর নেতৃত্বে আন্দোলনে নামেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। শিলিগুড়ি থানা ও এডিসিপি-র দফতরে বিক্ষোভও হয়। এমনকি, দীপাবলির পর বন্ধ ডাকা এবং হাইকোর্টে মামলার হুমকি দেন শঙ্করবাবু।
এই পরিপ্রক্ষিতে মন্ত্রীর তোলার অভিযোগ প্রসঙ্গে শঙ্করবাবু বলেন, “একজন মন্ত্রীর তো দিন-রাত সব সময়েই ক্ষমতা থাকে। উনি চাইলে যে কোনও সময়ে আমার বিরুদ্ধে সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে তদন্ত করাতে পারেন। আমার আপত্তি নেই। তবে আগে ওঁরা সারদা-কাণ্ড থেকে রেহাই পান। তার পর না হয় আমাদের কথা ভাববেন।” শঙ্করবাবুর অভিযোগ, “ব্যক্তি কুৎসার পথে আমরা হাঁটি না। কিন্তু, চিরকাল তো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারব না। কারণ, আমাদের কাছেও অনেক অভিযোগ-তথা রয়েছে। সে সব যথা সময়ে জনসমক্ষে পেশ করা হবে। তা গৌতমবাবু’র পক্ষে সম্মানের হবে না।”
এদিন মন্ত্রী জানান, রামঘাটে ২৭ বিঘা জমি রয়েছে। ব্যক্তি মালিকালাধীন ওই জমি একটি ট্রাস্ট বোর্ড দেখভাল করে। একটি কাঠের চুল্লিও রয়েছে। শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকার জনসংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। তাই শহরের আরেক প্রান্তে চার কোটি টাকা খরচ করে সবপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে ওই চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ দূষণ নিরোধক হবে চুল্লিটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের এতে আপত্তি নেই। কিন্তু একাংশ জমির দালাল এবং সমাজবিরোধী গোলমাল করছে বলে মন্ত্রীর অভিযোগ। সরকারিভাবে যে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে, সেখানে নাম থাকা একজনের বিরুদ্ধে পুরানো একাধিক মামলাও রয়েছে। আর মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক এদের নিয়েই আন্দোলন করছেন।
এ দিন তৃণমূলের সমালোচনা করে জেলা সিপিএমের কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকারের অভিযোগ, “ওঁরা তো জামাতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এখন বড় বড় কথা বলছেন।” এ দিনই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর গ্রেফতারের দাবিতে আগামী ১২ অক্টোবর একটি মিছিলের ডাক দিল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। বুধবার শিলিগুড়িতে হিলকার্ট রোডে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি মিছিলে যোগ দিতে। তিনি জানান, মিথ্যে মামলায় বামেদের জড়ানোর প্রতিবাদে ১৫ অক্টোবর নকশালবাড়ি থানা ঘেরাও করা হবে।
আসরে নেমেছে বিজেপিও। বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু অবশ্য বাম-তৃণমূল ও কংগ্রেস তিন পক্ষকেই দূষেছেন। তাঁর দাবি, “অতীতে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বন্ধ-এর সময়ে স্টেশনে নেমে লালবাতি গাড়িতে যেতে চাইলে এক যুবক প্রতিবাদ করায় তাঁকে পুলিশ হেনস্থা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল জমানায় প্রতিবাদকারীকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে। উত্তরাখণ্ডে এক কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধেও চড়া মারার অভিযোগ রয়েছে। মানুষ সব দলকেই চিনে নিয়েছেন।”
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy