Advertisement
E-Paper

শহরের বাসেও মেয়েদের জন্য আসন নেই, হেনস্থা নিত্যসঙ্গী

দিল্লিতেও সরকারি-বেসরকারি বাসে মহিলাদের জন্য কয়েকটি আসন সংরক্ষিত থাকে। শিলিগুড়িতে-জলপাইগুড়িতেও তাই রয়েছে। কিন্তু মালদহের কোনও বাসেই মহিলাদের জন্য আলাদা আসন চিহ্নিত করে রাখার ব্যাপারে কারও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।

সায়নী মুন্সি

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০২:১৭

দিল্লিতেও সরকারি-বেসরকারি বাসে মহিলাদের জন্য কয়েকটি আসন সংরক্ষিত থাকে। শিলিগুড়িতে-জলপাইগুড়িতেও তাই রয়েছে। কিন্তু মালদহের কোনও বাসেই মহিলাদের জন্য আলাদা আসন চিহ্নিত করে রাখার ব্যাপারে কারও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। জেলার বিভিন্ন রুটের নিত্যযাত্রী ছাত্রী, কর্মরতাদের অনেকেই প্রশাসনের এ হেন উদাসীনতা ক্ষুব্ধ।

মালদহ বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সঞ্জীব শেঠ অবশ্য দাবি করেছেন, “মালদহের মতো গ্রামীণ শহরে এই দাবি অর্থহীন।” তবে ওই সংগঠনের সম্পাদক নিমাই বিশ্বাস বলেছেন, “বেশ কয়েক বছর আগেও প্রাইভেট বাসে ৫-৬টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকত। এখন আর রাখা হয় না।” উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের মালদহ ডিপো ইনচার্জ গৌতম ধর জানান, “কলকাতার সিটি-বাসগুলিতে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের বাসগুলি যাতায়াতের দুরত্ব বেশি থাকায় মহিলাদের জন্য আলাদা সিটের ব্যবস্থা করা হয় না। মালদহেও সিটিবাস থাকলে তা ব্যবস্থা করা হবে।”

পরিবহণ দফতরের তরফে একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করলেই যেখানে সরকারি-বেসরকারি, সব বাসে অন্তত ১০টি করে আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা সম্ভব। সেই কাজটাই কেন হচ্ছে না, তা বুঝতে পারছেন না ওই নিত্যযাত্রীরা। ফলে প্রায় রোজই নানাভাবে বাসে নাকাল হতে হচ্ছে মেয়েদের।

অনেক সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও মহিলাদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়ার সৌজন্য দেখানো হয় না বলে অভিযোগ। রোজই ভিড়ে ঠাসাঠাসি করে বাসে যাতায়াত করতে হয় জয়া মিশ্রকে। তিনি সুজাপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মালদহ থেকে যাতায়াত করেন কর্মস্থলে। তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে আমি শিক্ষকতা করছি। কালিয়াচক-সুজাপুর অঞ্চলে ৬-৭ বছর ধরে যাতায়াত করছি। কোনওদিনই বাসে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ আমার চোখে পড়েনি। একদিন ভীষণ অসুস্থ বোধ করছিলাম, তা সত্ত্বেও কেউ জায়গা ছেড়ে দেননি।”

আইহো উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষিকারও ক্ষোভ, গত ৪০ বছর মালদা-আইহো রুটে যাতায়াত করতে হয়েছে ভীষণ কষ্টে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের সমস্যাও কম নয়। নানা ধরনের জিনিসপত্র বানিয়ে বাসে যাতায়াত করতে হয় তাঁদের অনেককে। আবার কেউ কেউ প্রশিক্ষণ-সহ নানা কাজে জেলা সদরে যাতায়াত করেন নিয়মিত। হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটার পুতুল গুপ্ত বা হবিবপুর থানার বুলবুলচণ্ডীর সবিতা মৃধার মতো স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা জানান, বাসে তাঁদের দাঁড়িয়েই যাতায়াত করতে হয়। নানা সমস্যায় পড়েন তাঁরা। কালিয়াচকের বিমা এজেন্ট তহসিনা খাতুন বললেন, “অধিকাংশ সময় ঝুলে যাতায়াত করতে হয়। জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সব বাসেই এক চিত্র।”

দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ২০০৯ সালে এইরকমই এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তলপেটের হাড় ভেঙেছিলেন পাকুয়াহাট এএনএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সীমা সাহা। এর পরে চার মাস তাঁকে শয্যাশায়ী থাকতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, বাসগুলিতে যথেষ্ট স্থানাভাব রয়েছে। তাঁর কথায়, “মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট আসন না থাকায় খুব অসুবিধে হয়। কোনও কারণে আসন ছেড়ে দিতে বললে অনেকে দু-কথা শুনিয়ে গাড়ি কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কেউ আবার গালিও দেন।” মালদহের একাধিক কলেজ ছাত্রীর অভিযোগ, ভিড়ের সুযোগে মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার প্রবণতাও রয়েছে।

মালদহ বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক নিমাই বিশ্বাস জানান, প্রতিটি বাসে মহিলাদের জন্য সিট থাকা জরুরি। কমপক্ষে ৪ টি সিটের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রশাসন নির্দেশ দিলে অবশ্যই তা পালন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মালদহ প্রোগ্রেসিভ বাস ওর্নাস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিবেক রায় বলেন, “বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য দুটি সিট রয়েছে। প্রশাসন আমাদের নির্দেশ দিলে মহিলাদেরও সিটের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি বাসে এমন থাকা উচিত।” জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, “প্রতিটি বাসে মহিলাদের জন্য পৃথক আসন থাকা প্রয়োজন। এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”

sayoni munshi ladies' seats maldah bus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy