Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সেবকে খাদে গাড়ি, মৃত একই পরিবারের চার

সেবকের কাছে তিস্তা খাদে গাড়ি পড়ে মৃত্যু হল একই পরিবারের চারজনের। মৃতদের মধ্যে দুজন মহিলাও রয়েছেন। বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ির কাছে সেবক শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। সন্ধ্যার পর দেহগুলি উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০০
Share: Save:

সেবকের কাছে তিস্তা খাদে গাড়ি পড়ে মৃত্যু হল একই পরিবারের চারজনের। মৃতদের মধ্যে দুজন মহিলাও রয়েছেন। বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ির কাছে সেবক শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। সন্ধ্যার পর দেহগুলি উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতরা সকলেই শিলিগুড়ির দুই মাইল এলাকার সরকারপাড়ার বাসিন্দা। নাম নরেশ গোয়েল (৪৪), তাঁর স্ত্রী কুসুম (৪২) ও ছেলে দীপক (১৬) এবং বিমলা গোয়েল (৬৪)। প্রাথমিক ভাবে বাসিন্দারা, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর জওয়ানরা উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। পরে ক্রেন নিয়ে আসা হয়। খাদটি দুর্গম হওয়ায় উদ্ধার কাজে দেরি হয়। নরেশবাবুর মেয়ে গুড্ডি ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। সে স্কুলে ছিল। বাবা-মা ও দাদাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়া গুড্ডিকে রাত পর্যন্ত বাড়ির অন্যরা কিছু জানাননি। দার্জিলিঙের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ সরকার বলেন, “দুপুর আড়াইটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। গাড়ি ও দেহগুলিকে উপরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। মৃতের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে।”

সেবকের দুর্ঘটনাস্থলে ভিড়। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

নরেশবাবুর কাঠের ব্যবসা রয়েছে। মৃত কুসুমদেবী তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে দীপক। নরেশবাবুর মা বিমলাদেবী। এ দিন সেবক কালী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন চার জন। দুপুরে খাওয়া দাওয়াও করেননি। নরেশবাবুই পুজো দিয়ে ফিরে এসে সবাই একসঙ্গে বসে খাবেন বলে জানিয়ে গিয়েছিলেন বাবা কিশোরীলালকে। কিন্তু আর একসঙ্গে খাওয়া হল না তাঁদের। আক্ষেপ করলেন নরেশবাবুর খুড়তুতো ভাই সুরেশবাবু। তিনি বলেন, “দাদা বহুদিন ধরে নিজেই গাড়ি চালান। তাঁর গাড়ি চালানোর প্রশংসাও করেন সবাই। এ দিন কি হল কে জানে। তাঁর পরিবারটাই শেষ হয়ে গেল। ছোট্ট গুড্ডিকে বাবা-মা-দাদা নেই সেটা বলার কথা এখনও কেউ ভাবতে পারছেন না।

আকস্মিক এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া বন্ধ। গুড্ডিকে পাশের বাড়ির আঙ্কল-আন্টির কাছে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজের হাতে মা, দাদা-বৌদি ও ভাইপোর মৃতদেহ মর্গে পৌঁছে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিজয়বাবু। বিজয়বাবু নিজে পেশায় চিকিত্‌সক। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, “নিজের পরিবারকেই ন্যূনতম চিকিত্‌সার সুযোগ পেলাম না।” ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজে হাত লাগানো এক স্থানীয় যুবকের মতে, “কিছুক্ষণ আগেই পুজো দিয়ে বেরোতে দেখেছি এই পরিবারটিকে। মন্দিরের সামনে বসে থাকা ভিখিরিদের প্রসাদও দেন। তার কিছুক্ষণ পরেই শুনি একটি গাড়ি তিস্তায় পড়ে গিয়েছে। গিয়ে দেখি তাঁরাই মারা গিয়েছেন।”

এ দিন খবর পাওয়ার পর ছুটে যান ঘটনাস্থলে যান, নরেশবাবুর দুই ভাই বিজয় ও অশোক। তাঁরাই উদ্ধার কাজে তদারকি করেছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ কিশোরীলালবাবু আর নরেশবাবুর মেয়েকে ঘটনার কথা জানানো হয়নি। তাঁকে বলা হয়েছে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকলকে নার্সিংহোমে রাখা আছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল না থাকায় এই গোপনীয়তা বলে জানালেন। এ দিন ঘটনার পর পুলিশের লোকজন গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ও গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করেন। গাড়ির কাগজে বিমা এজেন্টের নম্বর পেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ির লোককে খবর দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sebak car-accident death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE