Advertisement
E-Paper

সরকারি অনুষ্ঠানে পাট্টা দিলেন তৃণমূল নেতারাই

সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে পাট্টা বিলি, গীতাঞ্জলী প্রকল্পে ঘর বিলি করলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। মঙ্গলবার ফুলবাড়ি-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজীবনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। এ দিন সেখানে এসজেডিএ’র উদ্যোগে রাস্তা এবং ‘ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন কমপ্লেক্স ইমিগ্রেশন সেন্টার’-এর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়। প্রকল্পগুলির শিলান্যাস করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান গৌতম দেব।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১২
সরকারি ফাইল নিয়ে পাট্টা বিলি করছেন তৃণমূল নেতারা।—নিজস্ব চিত্র।

সরকারি ফাইল নিয়ে পাট্টা বিলি করছেন তৃণমূল নেতারা।—নিজস্ব চিত্র।

সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে পাট্টা বিলি, গীতাঞ্জলী প্রকল্পে ঘর বিলি করলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। মঙ্গলবার ফুলবাড়ি-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজীবনগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

এ দিন সেখানে এসজেডিএ’র উদ্যোগে রাস্তা এবং ‘ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন কমপ্লেক্স ইমিগ্রেশন সেন্টার’-এর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়। প্রকল্পগুলির শিলান্যাস করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান গৌতম দেব। ওই মঞ্চ থেকেই রাজগঞ্জ ব্লকের তরফে ১৮৬ জনকে পাট্টা বিলি এবং গীতাঞ্জলী প্রকল্পে ১৮ জনের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ জন করে বাসিন্দার হাতে পাট্টার নথি এবং ঘরের চাবি তুলে দেন। ঠিক ছিল এর পর ব্লকের আধিকারিকদের কাছ থেকে বাকিরা পাট্টার নথি এবং ঘরের চাবি নেবেন। কিন্তু মন্ত্রী যাওয়ার পরেই মঞ্চের দখল নেন তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল সভাপতি দিলীপ রায়, এলাকার বুথ সভাপতি ব্রজেন্দ্র রায়ের মতো স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই। পাট্টা এবং ঘর প্রাপকদের তালিকা ব্লকের আধিকারিকদের কাছ থেকে নিয়ে তাঁরাই মাইকে নাম ঘোষণা করতে থাকেন। বাসিন্দারা গেলে তাঁদের হাতে নথি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে দেখা যায় ওই নেতাদের।

যা দেখে বিরোধীরা সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তবে মন্ত্রী বলেন, “আমি চলে আসার পর কী হয়েছে জানা নেই। তবে সরকারি আধিকারিকরা তো ছিলেন।” রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস প্রামাণিক জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য ওই নেতারা সাহায্য করেছিলেন। তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল কমিটির সভাপতি দিলীপবাবুকে দেখা গিয়েছে মঞ্চে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে পাট্টা এবং ঘর প্রাপকদের সরকারি তালিকা দেখে বাসিন্দাদের নাম ডাকতে। তিনি অবশ্য নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে আমার থাকার কথা নয়। তবে বাসিন্দাদের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য তাঁদের মঞ্চে আসতে অনুরোধ করি।” তৃণমূলের স্থানীয় বুথ কমিটির সভাপতি ব্রজেন্দ্রবাবুর দাবি, সরকারি অনুষ্ঠান বলে তাঁরা মঞ্চে উঠে আসনে বসেননি। এলাকার প্রধান এবং অন্যরা ছিলেন। পাট্টা এবং বাড়ি যাঁরা পাচ্ছেন সেই সমস্ত বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য তারা সাহায্য করেছেন।

মন্ত্রী অনুষ্ঠান মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতেই অন্য আধিকারিকদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে বার হয়ে যান বিডিও এন শেরপা। তিনি বলেন, “আমি বার হয়ে এসেছিলাম। সরকারি আধিকারিক যাঁরা ছিলেন বাসিন্দাদের হাতে পাট্টার নথি, ঘরের চাবি তাঁদেরই তুলে দেওয়ার কথা। যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” এ দিন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন বিডিও, ব্লক ভূমি এবং ভূমি সংস্কার আধিকারিক কৌশিক মল্লিক। মন্ত্রী, বিডিওরা চলে যাওয়ার পর কৌশিকবাবু অবশ্য ছিলেন। তাঁর সামনেই তৃণমূল নেতারা মঞ্চে উঠে দাপিয়ে বেড়ায়। কৌশিকবাবু বলেন, “দিলীপবাবু বা তৃণমূলের কেউ মঞ্চে উঠেছিলেন বলে খেয়াল করিনি। আমাদের লোকেরাই ছিলেন। তাঁরাই নথি দিয়েছেন।”

তবে এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সব ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটছে। সরকার আর দল তারা গুলিয়ে ফেলছেন। ম্যাস্টিক রাস্তা, পুরসভার সাফাইয়ের গাড়ি উদ্বোধনের মতো অনুষ্ঠানে পুর নির্বাচনে তৃণমূলের প্রস্তাবিত প্রার্থী যাঁরা হবেন তাদের মঞ্চে তুলে নিচ্ছেন গৌতমবাবু। সংবিধান, আইন, নিয়ম নীতি তাঁরা কোনওটাই মানছেন না।”

দার্জিলিং জেলা বিজেপি’র সভাপতি রথীন বসু অভিযোগ, “এতো সরকারি ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দলের প্রচার চলছে। এতটাই নগ্নভাবে সেই কাজ করা হচ্ছে যে বলার ভাষা নেই। তৃণমূল নেতারাই দেখছি পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছে, সরকারি আধিকারিকদের হুকুম করছেন।” আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে সমালোচনা করেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এক সময় সিপিএম এই কাজ করত। তাদের থেকে ওই নীতি ছিনতাই করেছে তৃণমূল। গৌতমবাবুরা সরকারি আইন, নীতির তোয়াক্কা করেন না। গলের নেতাদের নিয়েই তারা সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে ওঠেন। পুরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের অনুষ্ঠানেও তা দেখা যাচ্ছে।”

siliguri soumitra kundu tmc leaders patta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy