অন্তর্জালের জগতে কারও দীর্ঘদিনের বিচরণ, কেউ সদ্য ঢুকেছেন। কেউ আবার ও পথে হাঁটতেই রাজি নন। এক সময়ে ভোট ঘোষণার ঢের আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে পাড়ার দেওয়াল দখলের লড়াই শুরু হয়ে যেত। ইন্টারনেটের সৌজন্যে সেই লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে নতুন এক ‘দেওয়াল।’ সামাজিক নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ওয়েবসাইট ফেসবুক-টুইটারে প্রচারে সামিল উত্তরবঙ্গের লোকসভা ভোট প্রার্থীরাও।
ভোট ঘোষণার পরদিনই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী বিজয়কৃষ্ণ বর্মন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ রেজিস্ট্রার বিজয়বাবুর ফেসবুকের ‘দেওয়ালের’ শীর্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। তাঁর পিছনে চা বাগান, সবুজ ধানখেত। একদিনে বন্ধুও পেয়েছেন অনেককেই। ফেসবুকের জগৎ একেবারেই আনকোরা বিজয়বাবুর কাছে। তাই এক ছাত্রের থেকেই শিখছেন ফেসবুকের পাঠ। বিজয়বাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মহেন্দ্র রায়ের কাছে অবশ্য ইন্টারনেট একেবারেই ভিন্ন জগৎ। ২০০৯ সালে সাংসদ হওয়ার পরে সরকারি ভাবে তাঁর নামে একটি ই-মেল অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই অ্যাকাউন্ট দেখভাল করেছেন দিল্লি অফিসের এক আধিকারিক। তিনি পড়ে সাংসদকে মেলে আসা বিভিন্ন বার্তা জানাতেন। ইন্টারনেটের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বলতে এ টুকুই। তবে দল যদি নির্দেশ দেয়, তবে তিনি ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলবেন বলে সাংসদ জানিয়েছেন। একই কথা জানান রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী সত্যরঞ্জন দাশমুন্সিরও।
উত্তরের প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা ফেসবুকে নিয়মিত। যেমন উত্তর মালদহের সিপিএম প্রার্থী খগেন মুর্মু। নিয়মিত ছবিও আপলোড করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে দক্ষিণ মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন, দার্জিলিঙের সিপিএম প্রার্থী সমন পাঠক, বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ, মালদহ উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী ভূমির সৌমিত্র রায়েরও। সমন, অর্পিতা বা সৌমিত্র ফেসবুকে যথেষ্ট দক্ষ। রাজনৈতিক বিষয়-সহ ব্যক্তিজীবনের ছবি, ঘটনাও ই-দুনিয়ায় তুলে ধরতে সমন বরাবরই স্বচ্ছন্দ। অর্পিতার ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুলে পাওয়া যায় নাটকের সুলুক সন্ধান। ওঁরা সকলেই ফেসবুকে নিজেদের প্রচার করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রচারের বিভিন্ন ছবিও ফেসবুকে তুলে ধরবেন। দার্জিলিঙের তৃণমূল প্রার্থী ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়া মাঠের মতো ফেসবুকেও সমান জনপ্রিয়। তাঁর ‘প্রোফাইলেও’ ভক্তদের ভিড়।
ফেসবুকের সঙ্গে এতদিন সম্পর্ক না থাকলেও, ভোটের লড়াইতে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক রায় এবং দক্ষিণ মালদহের সিপিএম প্রার্থী আবুল হাসনাত খান। এ দিন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন দীপকবাবু। আর হাসনাত সাহেব জানিয়েছেন, দু’একদিনের মধ্যেই তিনিও অ্যাকাউন্ট খুলবেন ফেসবুকে।
প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতির বাইরে। ঘরকন্না সামলে আটপৌরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষিকা তথা কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী রেণুকা সিংহ। কখনও সাইবার দুনিয়ায় ঢোকার প্রয়োজন অনুভব করেননি তিনি। তবে তাঁর দলনেত্রীও ফেসবুক-দুনিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর কথায়, “হাইটেক প্রচারের বিষয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করব, তার পরেই সিদ্ধান্ত নেব।” একই কথা জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের দুই ডান-বাম প্রার্থী মনোহর তিরকে এবং দশরথ তিরকে। বিজেপি প্রার্থীদের অবশ্য দলের তরফেই ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে দলের তরফে। দলের কোচবিহারের প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন বা বালুরঘাটের বিশ্বপ্রিয় রায় চৌধুরী দু’জনেই দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। রায়গঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, “দলের কর্মী সমর্থকরা তাঁদের ফেসবুকের দেওয়ালেই আমার হয়ে প্রচার চালাবেন।” বছর পাঁচেক আগে প্রাথমিক শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন বালুরঘাটের আরএসপি প্রার্থী বিমল রায়। তাঁর সাফ কথা, “আমি মাঠে ময়দানে রাজনীতি করা লোক। ইন্টারনেট-ফেসবুক এ সবে আবার কী প্রচার হবে! কাক হয়ে রয়েছি তাই ভাল। ময়ূরপুচ্ছের প্রয়োজন নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy