Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবাদে সিদ্দিকুল্লা, তৃণমূল চুপই

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে বুধবার মহাজাতি সদনের অ্যানেক্স হলে জরুরি বৈঠকে বসেছিল জমিয়তের রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটি। সেখানেই ঠিক হয়, ২৮ অগস্ট মহাজাতি সদনেই প্রতিনিধি সভা করে প্রতিবাদের কৌশল ঠিক করবে জমিয়তে।

সিদ্দিকুল্লা। —ফাইল চিত্র।

সিদ্দিকুল্লা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মঙ্গলবারই তারা প্রশ্ন তুলেছিল। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ দাবি করল, তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ই ‘অসাংবিধানিক’! মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে আদালত অন্যায্য ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, এই অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টেই পাল্টা আবেদনের কথা ভাবছেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কলকাতায় কনভেনশন এবং সমাবেশ করে ওই রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংগঠনের রাজ্য কমিটি।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে বুধবার মহাজাতি সদনের অ্যানেক্স হলে জরুরি বৈঠকে বসেছিল জমিয়তের রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটি। সেখানেই ঠিক হয়, ২৮ অগস্ট মহাজাতি সদনেই প্রতিনিধি সভা করে প্রতিবাদের কৌশল ঠিক করবে জমিয়তে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা যে হেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের অবস্থানের সঙ্গে তৃণমূলের কি কোনও সম্পর্ক আছে? সিদ্দিকুল্লার ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের সভা থেকে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা তিন তালাকের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তার পরে তাঁদের অবস্থান বদলেছে, এমন কোনও বার্তা দলের তরফে আমাকে দেওয়া হয়নি।’’

আবার তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সিদ্দিকুল্লা যা বলছেন, তা একান্ত ভাবেই জমিয়তের বক্তব্য। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। জমিয়তের সভা সেরেই সিদ্দিকুল্লা নবান্নে গিয়েছিলেন মন্ত্রিসভার বৈঠকে। ঘটনাচক্রে, সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনও ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের নিজস্ব অধিকার ও আচারে হস্তক্ষেপের নীতিতে তাঁর সরকার বিশ্বাসী নয়। সামনে ইদুজ্জোহা ও মহরম উপলক্ষে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় সতর্ক থাকতেও মন্ত্রীদের পরামর্শ দেন তিনি। সরাসরি তালাক প্রসঙ্গ সেখানে ওঠেনি। ও পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হলেও তালাক ও সিদ্দিকুল্লা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। অধীর চৌধুরীর খোঁচা, ‘‘তিন তালাক নিয়ে বাংলার অগ্নিকন্যা চুপ কেন? কিছু তো বলুন। আমরা জানি বোবার শত্রু হয় না।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, তৃণমূলের এই নীরবতার পিছনে ‘রহস্য’ কী? শাসক শিবির সূত্রে পাল্টা বলা হচ্ছে, নীরবতা তো সম্মতিরই লক্ষণ! রায় নিয়ে অন্য কিছু বলার থাকলে নিশ্চয়ই বলা হতো।

জমিয়তের বৈঠকের পরে সিদ্দিকুল্লার দাবি, ১৯৩৭-এ ব্রিটিশ সরকার মুসলিম পার্সোনাল ল’কে আইনের স্বীকৃতি দিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে বি আর অম্বেডকরের নেতৃত্বে মুসাবিদা কমিটি আলাপ-আলোচনার পরে মুসলিম ল’কে দেশের নতুন সংবিধানে অধিকার হিসাবে মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্দিকুল্লার প্রশ্ন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কেউই চাইলে ওই অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। সেটা করলে সংবিধানকেই নস্যাৎ করা হয়।’’ তা হলে কি তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অসাংবিধানিক বলছেন? সিদ্দিকুল্লার জবাব, ‘‘অবশ্যই অসাংবিধানিক!’’ বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘এটা সিদ্দিকুল্লার বিখ্যাত হওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস।’’

সিদ্দিকুল্লা মেনে নিয়েছেন, তিন তালাক প্রথার অপব্যবহার অবশ্যই হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায় তাঁদেরও। কিন্তু তাই বলে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অধিকারের উপরে আদালত নির্দেশ চাপিয়ে দিতে পারে না বলে জমিয়তের দাবি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানেরও মত, ‘‘ইসলাম ধর্মে নারীদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়। যদিও বাস্তবে তা অনেক সময়েই মানা হয় না। কিন্তু তা-ই বলে ধর্মীয় কোনও বিধিতে আদালতের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE