E-Paper

এসআইআর না-হলে ভোট নয়, পাল্টা সওয়াল শ্রীরূপার

বিজেপির বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী পাল্টা হুঙ্কার দিলেন, কমিশন এসআইআর না-করলে তাঁরা রাজ্যে বিধানসভা ভোট হতে দেবেন না! কমিশনের দফতরে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১৫
খানাকুলে ‘জনগর্জন বিজয় সঙ্কল্প যাত্রা’য় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

খানাকুলে ‘জনগর্জন বিজয় সঙ্কল্প যাত্রা’য় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচন কমিশনকে মাঝখানে রেখে রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধ আরও তীব্র হল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির! ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধনের (এসআইআর) নামে বৈধ এক জন ভোটারের নাম গেলেও ১০ লক্ষ লোক নিয়ে কমিশন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ বার বিজেপির বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী পাল্টা হুঙ্কার দিলেন, কমিশন এসআইআর না-করলে তাঁরা রাজ্যে বিধানসভা ভোট হতে দেবেন না! কমিশনের দফতরে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

মালদহের ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা বুধবার বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচন কমিশন এসআইআর না-করে রাজ্যে ভোট করলে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হতে দেব না। মণ্ডল কমিশন যখন হয়েছিল, ঠিক সে রকম ভাবেই দিল্লিতে আগুন জ্বলবে!’’ শ্রীরূপার দাবি, রাজ্যে বুথে-বুথে ৫০- ৬০ জন করে মৃত ভোটারের হদিস মিলছে। এ ছাড়া, রাজ্যে আগের ভোটগুলিতে হিংসার ঘটনাও ঘটেছে। তাই রাজ্যে এসআইআর প্রয়োজন। শ্রীরূপার বক্তব্য, “জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে এসআইআর করতে হবে। পুলিশ দিয়ে করাবে, না কি সেনাবাহিনী দিয়ে— আমরা জানি না।” তাঁর মন্তব্য কী দলেরও বক্তব্য? প্রশ্নের উত্তরে শ্রীরূপা বলেন, “এক জন নাগরিক হিসাবে এসআইআরের দাবি জানাচ্ছি।”

তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা বলেছেন, ‘‘আমরা আগে যা বলেছি, আজ বিজেপি বিধায়ক সে কথাই বলেছেন। নির্বাচন কমিশনকে বিজেপি নিজেদের ইচ্ছায়, পরিকল্পনায় পরিচালনা করতে চাইছে। বিজেপিকে ভোটে সুবিধা পাইয়ে দিতেই যে এই এসআইআর করার কথা ভাবা হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট ওই হুমকিতে।’’ তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সীও বলেছেন, “ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক বছরের পরে বছর অন্তরালে থেকে ভোটের মুখে প্রচারে আসতে এসআইআর নিয়ে কথা বলছেন। গুজরাত, উত্তর প্রদেশের ভোটের সময় এসআইআর নিয়ে কেন তিনি চুপ ছিলেন? বাংলার ভোটের সময় এসআইআরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।” দক্ষিণ মালদহের সাংসদ তথা কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ইশা খান চৌধুরীর মতে, “মানুষকে হয়রান করাই বিজেপির কাজ। এখন এসআইআরের নামে মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মৃত ও ভুয়ো ভোটার রেখে দেওয়ার জন্য এক দল এসআইআর চাইছে না, অন্য দল এসআইআর করে গরিব পরিযায়ীদের নাম বাদ দিতে চাইছে। ভোটের দিকে তাকিয়ে দু’পক্ষের হুমকির খেলা চলছে!’’

এক পক্ষের হুঁশিয়ারি, অন্য পক্ষের পাল্টা হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে কমিশন সূত্রের বক্তব্য, রাজনৈতিক ভাবে কোনও দল কিছু বলতেই পারে। ভোটার তালিকা বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজ কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করে কমিশন। এক কর্তার কথায়, “রাজনৈতিক বক্তব্য যে কোনও কিছুই থাকতে পারে। কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কি না, সেটাই মূল দেখার।”

শ্রীরূপার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এ দিন মুখ খোলেননি। তবে রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, ‘‘এসআইআর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশন বিহারে করেছে, পশ্চিমবঙ্গেও করবে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ২০০৫ সালে বলেছিলেন, এক কোটি অনুপ্রবেশকারী ভোটার তালিকায় আছে। এখন সেই সংখ্যাটা কোথায় পৌঁছেছে, জানতে হবে না? স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা বাংলার প্রতিটি মানুষের চাহিদা।’’

হুগলির খানাকুলে ‘জনগর্জন বিজয় সঙ্কল্প যাত্রা’য় গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘ভোটার তালিকা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করুন। যাতে ভুয়ো ভোটার একটাও না থাকে। রোহিঙ্গা থাকবে না। পরিবর্তন আসবে, চিন্তা নেই। তবে ধর্মীয় কারণে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত সরকার। তাঁরা সবাই শরণার্থী। তা এ দিনই ঘোষণা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP Election Commission Special Intensive Revision

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy