Advertisement
E-Paper

কোন্নগরে ডাকাতি করতে ঢুকে ধর্ষণ বৃদ্ধাকে

রানাঘাটের পর এ বার কোন্নগর। ডাকাতি করতে কোন্নগরের এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হল না দুষ্কৃতীরা। এক জনের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগও উঠল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৯

রানাঘাটের পর এ বার কোন্নগর।

ডাকাতি করতে কোন্নগরের এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হল না দুষ্কৃতীরা। এক জনের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগও উঠল।

কয়েক মাস ধরেই বেড়ে চলা চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় উদ্বেগে রয়েছেন হুগলির শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা।

শনিবার রাতে কোন্নগরের ভয়াবহ এই ঘটনায় আতঙ্কের মাত্রা বাড়ল। ঘুষি মেরে বৃদ্ধার মুখও ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধা পুলিশকে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের মধ্যে একটি ছেলে তাঁর উপরে নজরদারি করছিল। সে-ই শারীরিক অত্যাচার চালায়। জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, লুঠপাট ও ধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃদ্ধার চিকিৎসা চলছে। সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে। তাঁর শরীরে আঘাত রয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে তদন্তকারীদের। সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত হচ্ছে। এক জনকে ধরা হয়েছে। তার কাছ থেকে লুঠ হওয়া গয়না উদ্ধার করা হয়েছে।

গত বছর মার্চে রানাঘাটের একটি কনভেন্টে ডাকাতি করতে ঢুকে বাধা পাওয়ায় বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার জল শেষ পর্যন্ত অনেক দূর গড়িয়েছিল।

শনিবার গভীর রাতে কোন্নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাড়িতে দুষ্কৃতী-হামলার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশই গুরুতর জখম বৃদ্ধাকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। ডাকাতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে আকাশ দাস নামে এক দুষ্কৃতীকে রবিবার ভোরে কোন্নগর থেকেই গ্রেফতার করা হয়। সে ডাকাতির কথা কবুল করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

উত্তরপাড়া হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃদ্ধার মুখ-সহ শরীরের নানা জায়গায় মারধরের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। শনিবার রাতে ‌তাঁর মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়। তবে, বৃদ্ধার উপর নির্যাতনের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। রবিবার হাসপাতালে ওই বৃদ্ধা কোনও রকমে বলেন, ‘‘আলমারিতে দু’চারশো টাকা ছিল। ওরা আমাকে এত মারধর করেছে যে আমি কিছু দেখতে পরিনি ওরা কি নিয়েছে। ঘর অন্ধকার রেখে মোবাইলের আলোতেই ওরা লুঠপাট করছিল। এক জনই আমার উপরে অত্যাচার চালায়।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধবা ওই বৃদ্ধার তিন ছেলের মধ্যে দু’জন অন্যত্র থাকেন। বড় ছেলে এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্র থাকেন ওই বাড়ির দোতলায়। নীচের একটি ঘরে বৃদ্ধা একাই থাকেন। শনিবার রাত পৌনে ২টো নাগাদ জনাপাঁচেক দুষ্কৃতী ওই বাড়ির পাঁচিল টপকে ঢুকে প্রথমে গ্রিলের গেটের তালা ভাঙে। তার পরে বৃদ্ধার ঘরে ঢোকে। তবে ওই ঘরের দরজা অক্ষত থাকায় পুলিশের অনুমান, হয় দরজা খোলা ছিল, না হলে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে বৃদ্ধা দরজা খুলে দেন।

দুষ্কৃতীরা বৃদ্ধার থেকে আলমারির চাবি নিয়ে তন্নতন্ন করে মূল্যবান সামগ্রী খুঁজতে থাকে। মেঝেতে আলমারির সমস্ত জিনিস ফেলে দেয়। আলমারির লকারও খোলে তারা। এরপর পাশের ঘরে গিয়ে বঁটি দিয়ে সেখানকার একটি আলমারির ‘লক’ ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়। এর পরেই দুষ্কৃতীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বৃদ্ধার উপরে নির্যাতন চালিয়ে চম্পট দেয়। তার আগে তারা দোতলার সিঁড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।

বৃদ্ধার বড় ছেলে বলেন, ‘‘ঘর থেকে মা ওদের বলেছিল, আলমারির চাবি দিয়ে দেবে। মারধর না করতে। ওরা শুনল না। ওরা যে মায়ের উপরে এ ভাবে হামলা করবে ভাবতে পারিনি।’’

রবিবার ওই পাড়ায় ঢুকতেই দেখা গেল মোড়ে মোড়ে জটলা। সকলের চোখে-মুখে আতঙ্ক। তাঁরা এলাকায় নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর তপতী সরকার বলেন, ‘‘বৃদ্ধার হাতের সোনার চুড়ি ও কানের দুল টেনে খুলে নিয়ে দুষ্কৃতীরা পাশবিক অত্যাচার চালাল। এ কোথায় আছি আমরা?’’ অমিত সাউ নামে বৃদ্ধার এক পড়শি বলেন, ‘‘ওই বাড়িটি তবু পাঁচিল-ঘেরা। আমার বাড়িতে তা-ও নেই। জানি না কী হবে!’’ আর এক যুবক বলেন, ‘‘এ বার থেকে এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করব। পুলিশে খবর দেব।’’

এমনিতেই একের পর এক চুরি-ডাকাতি-খুনের কিনারা করতে গিয়ে জেরবার হচ্ছে হুগলি জেলা পুলিশ। সেই তালিকায় এ বার যুক্ত হল কোন্নগর-কাণ্ডও। পুলিশ অবশ্য এ ক্ষেত্রেও যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। আপাতত সেটাই ভরসা বৃদ্ধা, তাঁর পরিবার এবং ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

Old woman Rape Robbery
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy