Advertisement
E-Paper

বাঁশেই আটকে রইল অন-লাইন কর আদায়

রাজস্ব আদায়ে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে সব দফতরে অন-লাইন ব্যবস্থা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল নতুন সরকার। অথচ তার তিন বছর পরেও সেই অন-লাইনের মাধ্যমে আরএমসি কর আদায়ের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এল কৃষি বিপণন দফতর। নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিগুলো রাস্তায় চেক পোস্ট বসিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওই কর আদায় করে।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৫

রাজস্ব আদায়ে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে সব দফতরে অন-লাইন ব্যবস্থা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিল নতুন সরকার। অথচ তার তিন বছর পরেও সেই অন-লাইনের মাধ্যমে আরএমসি কর আদায়ের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এল কৃষি বিপণন দফতর। নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিগুলো রাস্তায় চেক পোস্ট বসিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ওই কর আদায় করে। পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্যবাহী যানবাহনের অবাধ যাতায়াতের যে দাবি জানিয়ে আসছে একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠন, সেটি কার্যত ঝুলে রইল বলে মত শিল্পমহলের একাংশের।

নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটিগুলো নিজের এলাকায় রাস্তায় বাঁশ ফেলে রাস্তা আটকে আরএমসি কর আদায় করে। এ ভাবে কর আদায়ের বিরোধিতা করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন একাধিক বার কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী-সচিবদের কাছে অন-লাইন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান। মহাকরণের খবর, ব্যবসায়ীদের দাবি খতিয়ে দেখে জুন মাসের গোড়ায় অরূপবাবুর কাছে ‘চেক পোস্ট’ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন কৃষি বিপণন অফিসারেরা। কয়েক প্রস্ত আলোচনার পরে সেই আর্জি অনুমোদনও করেন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায়। কিন্তু এতেই বেঁকে বসেন আরএমসি-র একাধিক কর্মকর্তা। চেক পোস্ট-এর মাধ্যমে কর আদায় বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের অফিস গুটিয়ে ফেলতে হবে এই যুক্তি দেখিয়ে হাওড়ার শরৎ সদনে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আরএমসি-র এক দল আধিকারিক। এবং তার পরেই আরএমসি কর তুলে নেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী।

কেন চেক পোস্ট তুলে দিতে চাইছেন দফতরের অফিসাদের একাংশ? তাঁদের বক্তব্য, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কর নেওয়াকে কেন্দ্র করে হামেশাই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। গাড়িতে মালের পরিমাণ ও তার কর নির্ধারণ নিয়ে আরএমসি-র এক শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে বহু ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন সরকারের কাছে। এক কৃষি বিপণন কর্তার কথায়, “মাস সাতেক আগে বর্ধমান থেকে অসমে আলু নিয়ে যাওয়ার সময়ে আলিপুরদুয়ার চেক পোস্টে এক ব্যবসায়ীর কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করা হয়। এই নিয়ে দরাদরিতে ঘণ্টাচারেক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।” মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডুরও বক্তব্য, “কর দিতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু একই মালের জন্য বার বার গাড়ি দাঁড় করিয়ে কর আদায়ের মানে কি? এতে তো ব্যবসায়ীদেরই হয়রান হতে হচ্ছে।”

কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারদের সুপারিশ ছিল, বাণিজ্য কর কিংবা বিক্রয় করের মতো আরএমসি করও অন-লাইনে নেওয়া যেতে পারে। কী ভাবে? দফতরের এক কর্তা বলেন, “যেখানে মালপত্র গাড়িতে উঠবে সেখানেই সামগ্রীর পরিমাণের উপরে নির্ধারিত কর রিটার্নের মাধ্যমে জমা করা যেতে পারে। আবার যেখানে সামগ্রী নামানো হবে, সেখানে ওই নথি মিলিয়ে দেখার পরই গাড়ি ফাঁকা করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী। তা হলে আর রাস্তায় বিভিন্ন চেক পোস্টে বাঁশ ফেলে বার বার গাড়ি দাঁড় করিয়ে কর আদায় করতে হবে না।”

আরএমসি কর্মকর্তাদের একাংশ অবশ্য রিটার্নের মাধ্যমে কর আদায়ে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, “মূলত কৃষিভিত্তিক সামগ্রীর উপরে এই কর আদায় করা হয়। এই সব সামগ্রীর ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ মাঝারি মাপের। তা ছাড়া অন-লাইনে কর আদায়ের তেমন পরিকাঠামোও নেই।” তাঁদের সাফ কথা, চেক পোস্ট তুলে দেওয়ার চেষ্টা নতুন নয়। বাম আমলে দুই মন্ত্রী ছায়া ঘোষ ও বীরেন মৈত্রও এই চেষ্টা করেছিলেন। তা ফলপ্রসূ হয়নি।” তাই চেক পোস্টের মাধ্যমে কর আদায়ই শ্রেয় মনে করছেন আরএমসি কর্তাদের একাংশ।

তা হলে কি আরএমসি কর্তাদের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখলেন মন্ত্রী? অরূপবাবুর জবাব, “কোনও চাপ নেই। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, ১৩ অগস্ট আরএমসি কর্তৃপক্ষ ও দফতরের অফিসারদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

মন্ত্রী যা-ই বলুন, বহু আরএমসি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সরকার তাঁদের কোনও অনুদান দেয় না। নিয়ন্ত্রিত বাজার ও অফিস চালানো ছাড়াও কর্মীদের বেতন দিতে হয় তাঁদের। এ সব করতে চেক পোস্ট-ই ভরসা। সেটা তুলে দিলে নিয়ন্ত্রিত বাজার চালানো কঠিন হবে। হুগলির এক আরএমসি কর্তা বলেন, “সব্জি, ডিম, সয়াবিন, মুরগির বাচ্চা, পোলট্রি খাবারের উপর কর তুলে দেওয়া হয়েছে। আলু-পেঁয়াজের উপরেও কর তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে এমনিতেই আগের চেয়ে আয় কমে গিয়েছে।”

পাল্টা প্রশ্ন তুলে কৃষি বিপণন দফতরের বহু অফিসার জানাচ্ছেন সরকারি নিয়মে বলা আছে, আরএমসিগুলো কর বাবদ আদায়কৃত অর্থের অর্ধেক পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করবে। কিন্তু বছরের পর বছর অধিকাংশ বাজারে তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় সেগুলি হতশ্রী হয়ে পড়েছে। সরকারি তথ্যই বলছে, ২০১২-১৩ সালে ৪৩টি নিয়ন্ত্রিত বাজার যে পরিমাণ কর আদায় করেছে, তার মাত্র ৬.৭৮% উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। বাকিটা বেতন ও অফিস চালানোর পিছনেই চলে গিয়েছে।

এই চাপান-উতোরেই সরকারের অন-লাইন পরিকল্পনা আপাতত শিকেয়।

online tax debojit bhattacharjya online tax state news latest state news onine state news latest news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy