Advertisement
E-Paper

একদা অশোক-ঘনিষ্ঠ জন এখন গৌতমের স্বজন

এক সময়ে অশোক ভট্টাচার্যের ‘স্নেহের জন’ এখন গৌতম দেবের ‘আপনজন’। বিজন নন্দী ওরফে জনকে নিয়ে দিনভর টানটান উত্তেজনার পরে শিলিগুড়ির অনেকেই এখন এই কথাটিই বলছেন।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩১
ফুলবাড়িতে টোল প্লাজার উদ্বোধনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে বিজন নন্দী (দাঁড়িয়ে)। — ফাইল চিত্র।

ফুলবাড়িতে টোল প্লাজার উদ্বোধনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে বিজন নন্দী (দাঁড়িয়ে)। — ফাইল চিত্র।

এক সময়ে অশোক ভট্টাচার্যের ‘স্নেহের জন’ এখন গৌতম দেবের ‘আপনজন’। বিজন নন্দী ওরফে জনকে নিয়ে দিনভর টানটান উত্তেজনার পরে শিলিগুড়ির অনেকেই এখন এই কথাটিই বলছেন।

তাঁদের মনে রয়েছে, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের আমলেই এনজেপি এলাকায় জন-এর উত্থানের কাহিনি। বাম আমলের শেষ দিকে ‘জন’-এর বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর কারবার, ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ পৌঁছয় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছেও। সরকারি সূত্রে খবর, বুদ্ধদেববাবু জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন পুলিশকে। সে যাত্রায় জন কলকাতা গিয়ে গ্রেফতারি এড়ান। তৃণমূল জমানায় তিনিই এখন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের একান্ত ‘আপনজন’। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘জন ভাল ছেলে। সুখে-দুঃখে এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’’

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কে এই জন?

স্কুল জীবনে ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে নাম করেছিলেন। ছিপছিপে ছেলেটি গ্রামীণ বাংলা দলেও একসময় দাপটের সঙ্গে ফরোয়ার্ডে খেলতেন। পড়তেন ইংরেজি মাধ্যম আশ্রমিক স্কুলে। কিন্তু পারিবারিক কারণে স্কুল জীবনের ইতির পরে কম বয়সেই রোজগারে নামতে হয়। আস্তে আস্তে নাম জড়াতে থাকে নানা আপত্তিকর কাজকর্মের সঙ্গে। এনজেপি লাগোয়া ইন্ডিয়ান অয়েলের ডিপোর সামনে চোরাই তেল চক্র, ঠিকাদারি-সিন্ডিকেট, নেপালের পণ্যের কারবার সহ নানা কারবারের সঙ্গেও জড়িয়ে যায় তাঁর নাম। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও আপত্তিকর কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পুলিশ পায়নি।

বাম জমানায় স্থানীয় সিটু নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর ঘনিষ্ঠ হন জন। তখন এনজেপি স্টেশন লাগোয়া এলাকায় সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব পুরোপুরি হাতে পাননি জন। সে সময়ে বিমল রায় নামে এক সিটুর হকার নেতাই ছিলেন এনজেপির শেষ কথা। সিপিএমের অন্দরের অভিযোগ, এক সময়ে এনজেপি স্টেশন ও লাগোয়া এলাকা থেকে ফি মাসে তোলা বাবদ ৫০ লক্ষ পর্যন্ত আদায় হত। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে গোলমাল, ধুন্ধুমার লেগেই থাকত। তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছলে বিমলবাবুকে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর পরেই এনজেপি এলাকায় ‘জন-সাম্রাজ্য’-এর সূচনা হয়।

তৃণমূল জমানা শুরু হতেই রাতারাতি জন শিবির বদলে ফেলেন। ওই এলাকার বিধায়ক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার সুবাদে জন তৃণমূলের জেলার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। আইএনটিটিইউসি-র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির সভাপতি হন। বাম আমলে দলীয় কোনও পদ ছিল না তাঁর। তৃণমূলের দৌলতে দলীয় ক্ষমতা পাওয়ার পরে জন হয়ে ওঠেন এলাকার শেষ কথা।

আইএনটিটিইউসি-র জেলা কোর কমিটির সদস্য বিমল সরকার এই দিন বিকেলে এনজেপি এলাকায় একটি সভায় বলেন, ‘‘অশোকবাবুরা এখন ভাগ পাচ্ছেন না বলে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন।’’ তৃণমূলের জেলা কমিটির একাধিক সদস্যও একান্তে স্বীকার করেছেন, বাম আমলে জনকে উঠতে অনেক সিঁড়ি ভাঙতে হয়েছিল। কিন্তু এখন লিফটে করে উপরে উঠছে।

অতীতে তৃণমূল ও কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, ওই টাকার বড় অংশ বাম নেতাদের কাছে পৌঁছে যেত। এমনকী, এনজেপির চোরাই তেল কোন কোন সিপিএম নেতার গাড়িতে ভরা হত, তা নিয়েও অভিযোগ কম ছিল না। যা কি না অশোকবাবুর মতো সিপিএম নেতারা বরাবর অস্বীকার করেছেন। বরং, এখন অশোকবাবুর দাবি, ‘‘আমি ওঁকে অনেক দিন ধরে চিনি। কিন্তু আমরা কখনও জনকে প্রশ্রয় দিইনি। এনজেপিতে অসামাজিক কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগে জনের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দলে কোনও জায়গাও ওঁর ছিল না। কিন্তু, তৃণমূল জনকে সামনে রেখে এনজেপিতে যা করছে তাতে এলাকার ব্যবসায়ী-বাসিন্দারা অনেকেই শঙ্কিত। ওঁকে গ্রেফতার করতে হবে।’’

যদিও, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দলের জেলা সভাপতি গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘বাম নেতারা যা অভিযোগ করেছেন তার প্রমাণ দিক। অভিযোগ দায়ের করুক। তৃণমূল কখনও তোলাবাজি বা সিন্ডিকেটের রাজনীতি করে না। বাম আমলেই এনজেপি অপরাধ আর তোলাবাজির মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।’’

কী বলছেন জন?

তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কোনও অসাধু ব্যবসা করি না। আমার একটি হোটেল, মদের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ, ওয়াইন অন শপ রয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েলের অনুমোদন প্রাপ্ত পরিবহণ ব্যবসা রয়েছে। ফি বছরে দেড় লক্ষ টাকা আয়কর দিই। এলাকার মানুষজনকে বিপদে-আপদে যথাসাধ্য সাহায্যের চেষ্টা করি। তবুও কেন আমার নামে এ সব রটানো হয় জানি না।’’ জনের দাবি, ‘‘এনজেপি এলাকার শ্রমিক-হকারদের উপর একসমেয় সিপিএম কী ভাবে দাদাগিরি চালাত, তা সকলেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। তাঁরা সকলেই আমাদের সংগঠনে যোগ দেওয়ায় সিপিএম মিথ্যে অভিযোগ করেই চলেছে।’’

ashok bhattacharya john bijon nandi gautam deb autam deb follower siliguri tmc leader njp police station ashok bhattacharya john
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy