E-Paper

বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে গৃহকর্তার, বিয়ের বদলে বাড়িতে কেবলই বিষণ্ণতা

গত ৬ এপ্রিল ঠাকুরপুকুর বাজারে গিয়ে আর ফেরেননি গৃহকর্তা আমিনুর রহমান। বেপরোয়া একটি গাড়ি সোজা ঢুকে যায় বাজারের ভিতরে। পর পর ধাক্কা দিতে দিতে এগিয়ে যেতে থাকে সেটি।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২২
আমিনুর রহমান।

আমিনুর রহমান। —প্রতীকী চিত্র।

গোটা বাড়ি জুড়ে বিয়েবাড়ির যে ব্যস্ততা থাকার কথা ছিল, এক লহমায় তা উধাও। বিয়ের জন্য বাড়ির দেওয়াল জুড়ে যে আলো লাগানো হয়েছিল, তা-ও খুলে ফেলা হয়েছে। আত্মীয়স্বজন, কচিকাঁচাদের শোরগোলও নেই। উল্টে, ঘর থেকে মাঝেমধ্যে আসছে কান্নার আওয়াজ। সানাইয়ের সুরের বদলে অদ্ভুত নীরবতা যেন ঘিরে রেখেছে গোটা বাড়িকে।

গত ৬ এপ্রিল ঠাকুরপুকুর বাজারে গিয়ে আর ফেরেননি গৃহকর্তা আমিনুর রহমান। বেপরোয়া একটি গাড়ি সোজা ঢুকে যায় বাজারের ভিতরে। পর পর ধাক্কা দিতে দিতে এগিয়ে যেতে থাকে সেটি। গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন আমিনুর-সহ আট জন। সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও মৃত্যু হয় আমিনুরের। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে গাড়িচালক সিদ্ধান্ত দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। মত্ত অবস্থায় থাকা গাড়ির চালক-সহ বাকি যাত্রীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

বছর একষট্টির আমিনুর কলকাতা পুরসভার কর্মী ছিলেন। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন দুই ছেলে। বড় ছেলে আসিমুর রহমান আঁকার শিক্ষক। তবে সময় পেলে অনলাইনে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। মাস কয়েক আগে আসিমুরেরই বিয়ে ঠিক করেছিলেন আমিনুর। পাত্রী দক্ষিণ ২৪ পরগনার রসপুঞ্জের বাসিন্দা। কাল, মঙ্গলবার সেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ধুমধাম করে বিয়ের বদলে গৃহকর্তার মৃত্যুতে বিয়েই আপাতত বন্ধ।

আমিনুরের ভাইপো আতিউর রহমান বলেন, ‘‘ছেলের বাবাই তো থাকল না। গোটা পরিবার শোকবিহ্বল। ছোট ছেলে এখনও অসুস্থ। পরিবারটাই ভেঙে গিয়েছে। বিয়ে এখন হবে কী করে? শোক সামলে কয়েক মাস বাদে নতুন করে আবার বিয়ের তারিখ ঠিক হবে।’’

জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন ছেলের বিয়ের মিষ্টির বায়না দিতেই বাজারে গিয়েছিলেন আমিনুর। ফিরে এসে কয়েকটি জায়গায় নিমন্ত্রণ করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু দোকানে গিয়ে দাঁড়াতেই বেপরোয়া গাড়িটি হুড়মুড়িয়ে এসে ধাক্কা দেয়। মৃতের বড় ছেলে আসিমুর বলেন, ‘‘আমার স্কুটারে চেপেই এখানে-ওখানে যেত। আমাকে জামা পরে নিতে বলে বাজারে গেল। পরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাজারে গিয়ে দেখি, বাবা আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।’’

পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দেওয়ার সব পরিকল্পনা সেরে
রেখেছিলেন আমিনুর। বিয়েবাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে কেনাকাটা, সবই হয়ে গিয়েছিল। বাড়ির প্রত্যেকের জন্য নিজে গিয়ে নতুন পোশাক কিনে এনেছিলেন। মঙ্গলবার বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও এক দিন আগে থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। এক আত্মীয় বলেন, ‘‘বিয়ে মঙ্গলবার হলেও এক দিন আগে থেকে আমাদের মেহেন্দি, হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেই মতো সোমবার থেকে সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আত্মীয়স্বজনদেরও এক দিন আগে থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু সবাইকে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির বাইরে যে আলো লাগানো হয়েছিল, তা-ও খুলে ফেলা হয়েছে।’’ বিয়ের আনন্দের বদলে শোক সামলে দুই ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, সেই চিন্তায় মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরেও স্বাভাবিক হতে পারেননি মৃতের স্ত্রী মানসুরা বিবি। তাঁর কথায়, ‘‘অবসরের পরে সব সময়ে ছেলের বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কী ভাবে সব সামলানো হবে, আমার সঙ্গে আলোচনা করত। কিন্তু মত্ত চালকের বেপরোয়া ভাব সব শেষ করে দিল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident Thakurpukur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy