Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
BJP

‘এক জানলা ব্যবস্থা’ই কি ‘সাফল্য’ এনে দিল মঙ্গলের নবান্ন অভিযানে? বিশ্লেষণে ব্যস্ত পদ্মশিবির

অনেক দিন ধরেই ছন্নছাড়া বিজেপি। একের পর এক কর্মসূচি সফল করতে পারেনি তারা। সেই তুলনায় নবান্ন অভিযান ‘সফল’ বলেই মনে করছে দল। নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ও দেখানো গিয়েছে বলে বিশ্লেষণ পদ্মশিবিরের।

‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি সফল বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপি।

‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি সফল বলেই মনে করছে রাজ্য বিজেপি। ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৫৭
Share: Save:

গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে আক্ষরিক ভাবেই ‘ছন্নছাড়া’ দশা ছিল রাজ্য বিজেপির। একটির পর একটি উপনির্বাচনে পর্যূদস্ত হয়েছে দল। পুরভোটেও সাফল্য মেলেনি। ৭৫টি আসন জিতলেও ধরে রাখা যায়নি দলীয় বিধায়কদের। বিধানসভায় শক্তি কমে হয়েছে ৭০। গত এক বছরে অনেক কর্মসূচিও নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। বাংলা বন্‌ধও ডেকেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু কোনও কিছুতেই সে ভাবে সাফল্য মেলেনি। সেই সবের তুলনায় মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে বিজেপি অনেকটা ‘শক্তি’ দেখাতে পেরেছে। দলের নেতারা কর্মসূচি ‘সফল’ বলে দাবিও করছেন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর চোখেমুখে, কথায় ‘আত্মতৃপ্তি’ দেখা গিয়েছে। একই সুর সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও। সেই ‘সাফল্যের’ বিশ্লেষণ করতে গিয়েই বিজেপির অন্দরের আলোচনা, ‘এক জানলা’ নীতিই এনে দিয়েছে ওই কাঙ্খিত ফল।রাজ্যের বর্তমান শাসকদল অবশ্য বরাবরই ‘এক জানলা’ নীতি দেখা গিয়েছে। তৃণমূল সবসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি নিয়েই চলে। বিরোধী আসনে থাকার সময় থেকে সরকারে আসার পরেও দলের বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনায় শেষকথা বলেন মমতাই। কিন্তু রাজ্য বিজেপিতে এই ছবিটা এতদিন ছিল না। বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও ‘অনেক নেতা’ সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল বলে দলেরই অনেকে মনে করেন। এমনকি, দলীয় আলোচনায় বিভিন্ন শিবিরের কাছে আলাদা আলাদা ‘মুখ্যমন্ত্রীর মুখ’ ছিল। আর নির্বাচনের পরে বারবার সামনে এসেছে দলের অন্দরে নেতাদের মধ্যে লড়াই।

Advertisement

মঙ্গলবারের কর্মসূচি ‘সফল’ বলে দাবি করে অনেক বিজেপি নেতাই বলছেন, বিবাদ ভুলে একসঙ্গে সকলে কাজ করার ফায়দা পেয়েছে দল। এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের এই বিবদমান অবস্থা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও নজরে পড়েছিল। সেই কারণেই এখন রাজ্যের কাজের উপরে সরাসরি নজরদারির ব্যবস্থা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’ বিজেপির অন্দরের খবর, সেই সরাসরি কেন্দ্রীয় নজরদারির মাধ্যম হচ্ছেন সদ্য বাংলার দায়িত্ব পাওয়া সুনীল বনশল। উত্তরপ্রদেশে একের পর এক সাফল্য দেখানো সুনীলকে ওড়িশা ও তেলেঙ্গানার সঙ্গে বাংলারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, সেই সুনীলই এখন রাজ্য বিজেপির ‘এক জানলা’। তাঁর নির্দেশ এবং পরিকল্পনারই ফসল মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে রাজ্য নেতাদের মধ্যে ‘সমন্বয়’।

অভিযানের প্রস্তুতি পর্বে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে হাওড়া ময়দানে সুনীল বনসল।

অভিযানের প্রস্তুতি পর্বে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে হাওড়া ময়দানে সুনীল বনসল। ফাইল চিত্র।

বাংলার দায়িত্ব পাওয়ার পরে সুনীল রাজ্যে এসেই যোগ দেন রাজ্যনেতৃত্বের প্রশিক্ষণ শিবিরে। সেই বৈঠকেই সুনীল বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপির প্রধান সমস্যা হল নেতা বেশি, কর্মী কম।’’ কী ভাবে সব নেতাকে এক হয়ে কাজ করতে হবে, তার ক্লাসও নেন তিনি। মঙ্গলবারের কর্মসূচির সময় তিনি কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু কয়েকদিন আগে এসে সমন্বয়ের ‘মন্ত্র’ দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ‘মন্ত্র’ জপ করেছেন সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপরা।

মঙ্গলবার মূল তিনটি মিছিলের ঘোষণা করেছিল বিজেপি। সুকান্তের নেতৃত্বে হাওড়া ময়দান, শুভেন্দুর নেতৃত্বে সাঁতরাগাছি এবং কলেজ স্ট্রিট থেকে দিলীপের নেতৃত্বে। কিন্তু ‘ঘোষিত’ ও ‘পরিকল্পিত’ কর্মসূচির মধ্যে ফারাক ছিল। তারই নজির দেখা গিয়েছে আগেভাগে শুভেন্দুর গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায়। আবার ‘অঘোষিত’ চতুর্থ মিছিল নিয়ে লালবাজারে চলে যাওয়ায়। বিজেপি শিবিরের দাবি, পুলিশকে ‘বোকা বানিয়ে’ এ ভাবে কলকাতা পুলিশের প্রধান কার্যালয় চত্বরে ঢুকে পড়ার নজির নেই।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, মঙ্গলবার তিনটি মিছিল মিলিয়ে এক লক্ষেরও বেশি লোকের জমায়েত হয়েছিল। একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে, যত কর্মী মিছিলে আসতে চেয়েছিলেন এটা তার মাত্র ৩০ শতাংশ। ৭০ শতাংশ কর্মীই পুলিশ এবং তৃণমূলের বাধায় কলকাতা বা হাওড়ায় পৌঁছতে পারেননি। একইসঙ্গে বিজেপি রাজ্য নেতাদের দাবি, তৃণমূলের প্রতিরোধ মোকাবিলার প্রস্তুতি থাকলেও জেলায় জেলায় পুলিশকে এই ভাবে নবান্ন ‘ব্যবহার’ করবে বলে ভাবতে পারেনি দল।

তবে বিজেপির এই ‘এক জানলা’ নীতি খুব একটা কাজ করবে না বলেই দাবি তৃণমূলের। বুধবার দলের এক নেতা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কারও তুলনা করাটাই ঠিক নয়। ওঁরা যদি সেটা ভেবে থাকেন, তবে ভুল করবেন। বহিরাগত ভাড়াটে সেনা দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। আমাদের নেত্রী আগুন দিয়ে তৈরি বাংলার মেয়ে। তিনি যেমন বাংলাকে বোঝেন, বাংলাও তাঁকে বোঝে। তাঁর প্রতিটি কথাই তৃণমূল কর্মীদের কাছে নির্দেশ। বিজেপি এমন একজন নেতা এই রাজ্য কেন গোটা দেশেই দেখাতে পারবে না।’’

নবান্ন অভিযান যে পরিমাণ পরিকল্পনা করে করা হয়েছিল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সম্ভবত সেই মাপের আন্দোলন আর করবে না বিজেপি। মঙ্গলবারের অভিযান সফল করতে দলের একেবারে নীচুতলা থেকে শ’য়ে শ’য়ে বৈঠক করা হয়েছিল বলেই দাবি রাজ্যনেতৃত্বের একাংশের। এক নেতা যেমন জানিয়েছেন, নবান্ন অভিযানের আগের তিন দিন-তিন রাত তাঁদের অনেকে বাড়িও যেতে পারেননি! সমস্ত পরিকল্পনার শেষে বিজেপি নেতারা মনে করছেন, তাঁদের মঙ্গলবারের অভিযান ‘সফল’। সাম্প্রতিককালে এমন বড় অভিযান তাঁরা করতে পারেননি। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা নেনে নিচ্ছেন, অভিযানের ‘সাফল্য’ এসেছে ‘এক জানলা’ ব্যবস্থার জন্যই। জানলার নাম সুনীল বনশল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.