Advertisement
E-Paper

জঙ্গিপনা রুখতে এ বার অনলাইন ব্যবস্থা

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও-আন্দোলন আর বরদাস্ত করা হবে না বলে বার্তা দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। বরং ছাত্রছাত্রীরা যাতে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে সরাসরি ওয়েবসাইট মারফত তাদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যবস্থা করছে। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গি ছাত্র আন্দোলনে কিছুটা রাশ টানা যাবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৩

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও-আন্দোলন আর বরদাস্ত করা হবে না বলে বার্তা দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। বরং ছাত্রছাত্রীরা যাতে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে সরাসরি ওয়েবসাইট মারফত তাদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যবস্থা করছে। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গি ছাত্র আন্দোলনে কিছুটা রাশ টানা যাবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির মাত্রাছাড়া দাপাদাপি রুখতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ-উপাচার্যদেরই শক্ত হাতে হাল ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। শুক্রবার সে কথা উল্লেখ করে সুরঞ্জনবাবু বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিশৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখতে উদ্যোগী হতে বলেছেন। তাঁর সেই বক্তব্যকে মর্যাদা দিয়ে আমরা কিছু বন্দোবস্ত করছি।” শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের কিছু পরিষেবাও দেবে।

কী সেই বন্দোবস্ত?

• কলেজের পরিচালন সমিতি বা অধ্যক্ষকে জানিয়ে যদি ছাত্রছাত্রীদের সমষ্টিগত দাবি না মেটে তা হলে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অভিযোগ জানানো যেতে পারে। এ জন্য আগামী ৫ সেপ্টেম্বর একটি ওয়েবসাইট চালু করবে বিশ্ববিদ্যালয়। সেটি হল, www.caluniv.ac.in/students.html। এই ওয়েবসাইটে কলেজের ছাত্র সংসদ মারফত অভিযোগ জানাতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা।

• এই ওয়েবসাইট থেকেই পড়ুয়ারা নেট, সেট, গেট-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, ইউজিসি, এআইসিটিই-র মতো সংস্থা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্কলারশিপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা তথ্য ও সংবাদ পাবেন।

• বিভিন্ন কলেজ নিয়ে কলেজগুচ্ছ গড়ার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। এর ফলে এক কলেজের উন্নত পরিকাঠামো ও পঠনপাঠনের সুবিধা পেতে পারবে গুচ্ছভুক্ত অন্য কলেজগুলি।

• কলেজ-অধ্যক্ষদের সতর্ক করা হয়েছে, তাঁরা যাতে ক্ষমতার অতিরিক্ত ছাত্রভর্তি না করেন।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-বিশৃঙ্খলার এই আবহে সুরঞ্জনবাবুর পদক্ষেপগুলি কিছুটা হলেও জঙ্গিপনায় রাশ টানতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন অনেকে। সুরঞ্জনবাবুর নিজেরও তেমনটাই ধারণা। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ দিন তিনি বলেন, “আমরা ছাত্রছাত্রীদের একক দাবি এবং সমষ্টিগত দাবির মধ্যে একটা ফারাক করছি। একক দাবিকে কেন্দ্র করে গোলমাল হয় না। কিন্তু সমষ্টিগত দাবির জেরে একটা গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকে।” তাই যখন কোনও কলেজ সমষ্টিগত দাবি মেটাতে পারবে না, তখন ছাত্রছাত্রীরা সেটা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদেরও একই সুযোগ দেওয়া হবে। ছাত্র সংসদই সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে বলে এ ক্ষেত্রেও সংসদের মাধ্যমেই অভিযোগটি জানাতে হবে বলে স্থির হয়েছে।

উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ-পরিদর্শক দেবাশিস বিশ্বাস নিয়মিত ওয়েবসাইটটি দেখবেন। তার পরে পরিদর্শক-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

ইদানীং কালে কখনও টোকাটুকির দাবিতে, কখনও আবার মেধাতালিকার বাইরে থেকে ছাত্র ভর্তির আবদার জানিয়ে কলেজে-কলেজে চড়াও হয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে ছাত্র সংসদগুলি। ঘেরাও-ভাঙচুর-অধ্যক্ষ নিগ্রহ, বাদ যায়নি কিছুই। এই দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচেনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও। জুলাই মাসেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনের দোতলায় সিন্ডিকেট বৈঠক চলাকালীন ঘরের বাইরে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। কারও কারও আশঙ্কা, কোনও ছাত্র সংসদ কি আর টোকাটুকি বা মেধাতালিকার বাইরে থেকে ছাত্রভর্তির দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে জানাবে? তা যদি না-ই হয়, তা হলে এই পদ্ধতিতে কী লাভ হবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের একটা বড় অংশ অবশ্য আশা করছেন, এই বন্দোবস্তের ফলে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটা সচেতনতা তৈরি হবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। তাই অনৈতিক দাবিদাওয়া করার আগে একটু থমকাবে তারা। সুরঞ্জনবাবু এ দিন বলেন, “সরাসরি ঘেরাও আন্দোলনের পথে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানেরও যে রাস্তা আছে, এই উদ্যোগের ফলে সেটা বোঝানো সম্ভব হবে।”

যদিও যে ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তপ্ত করার অভিযোগ সবথেকে বেশি, সেই টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে পাল্টা ব্যবস্থা করার ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনের বদলে আমাদের হটলাইন চালু হবে। অর্থাৎ, একটি টেলিফোন নম্বর। যেখানে ফোন বা এসএমএস করে নিজেদের সমস্যা জানালে এক ঘণ্টার মধ্যে টিএমসিপি গিয়ে তার সমাধান করে আসবে।”

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তার বিরোধিতা করার কোনও অবকাশ নেই। ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে আমি জানি না। ফলে এ নিয়ে কিছু বলছি না।”

calcutta university dean student online sysytem latest news online latest news latest state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy