Advertisement
E-Paper

পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে ধোঁয়াশাই

টাকভর, বাদামতাম, বারনেসবেগ চা বাগানের নীচের ওই সিংলার জঙ্গল অঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্গম বলেই পরিচিত। সেখানে তাড়াহুড়ো করে অপারেশন চালানো কার্যত অসম্ভব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

একে শেষ আশ্বিনের ভোর। তার উপরে ঘন পাহাড়ি জঙ্গল। তাতে রাস্তা বলতে কিছু নেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কয়েক হাজার ফুট উপরে শুক্রবার সেখানেই পাথর ছড়ানো উতরাই বেয়ে প্রায় চার কিলোমিটার নেমে সিংলার জঙ্গলে পৌঁছতে হয় পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন বাহিনীকে। যে বাহিনীতেই ছিলেন অমিতাভ মালিকও। প্রশ্ন উঠেছে, মাত্র মাস খানেক আগে সিকিমের মাঝিটাড়ে গুরুঙ্গকে ধরতে অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পরে, এ বারে কেন যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হল না?

টাকভর, বাদামতাম, বারনেসবেগ চা বাগানের নীচের ওই সিংলার জঙ্গল অঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্গম বলেই পরিচিত। সেখানে তাড়াহুড়ো করে অপারেশন চালানো কার্যত অসম্ভব। পাহাড়ি চরাই উতরাইয়ের পথ খুব ভাল করে চেনা না থাকলে, ১০-১১ কেজির বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট-সরঞ্জাম, মুখ ঢাকা হেলমেট বা একে-৪৭ হাতে নিয়ে চলাচল করা যথেষ্ট সমস্যার। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোরের অভিযানে দার্জিলিং থেকে হাঁটার পরে তাই মাত্র ৩০-৪০ জনের বেশি ফোর্স ‘গ্রাউন্ড জিরোতে’ ছিল না। অথচ, অমিতাভরা যাঁদের মোকাবিলা করেছেন, তাঁরা কিন্তু প্রায় সকলেই পাহাড়ের এই পরিবেশের সঙ্গে ছোট বেলা থেকে পরিচিত। তাঁদের হাতে আধুনিক অস্ত্রও ছিল। তাই পুলিশের কিছু অফিসারের ধারণা, মোকাবিলা সমানে সমানে হয়নি। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, এই দলটি এলাকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। স্পেশাল অপারেশন গ্রুপে কমব্যাট, স্ট্র্যাকো ফোর্স ছিল। সঙ্গে পিছনের কভারে সিআইএফ বা কাউন্টার ইন্সারজেন্সি ফোর্স ছিল।

কিন্তু অভিযানের সময় অফিসারদের মধ্যে সমন্বয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক আইপিএস ও এক ডিএসপি-র নেতৃত্বে অভিযান চলে। অন্য কর্তারা কোথায় ছিলেন? পুলিশ জানিয়েছে, বাকিরাও যাচ্ছিলেন। কিন্তু দু’পক্ষের যুদ্ধে কেবল অমিতাভর গায়েই কেন গুলি লাগল, সে প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি।

ধোঁয়াশা এখানেই যে, নাগাড়ে গুলিযুদ্ধ চললে আরও অনেকের জখম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সৌভাগ্যবশত তা হয়নি। পুলিশ কর্তাদের দাবি, গাছের আড়ালে সবাই কভার করতে করতে এগিয়েছিলেন। গুলি চলে। কিছুক্ষণ পরিস্থিতি চুপচাপ থাকায় অমিতাভ কভার ছেড়ে এগোতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু তাঁকে কেন কভার ছেড়ে এগোতে দেওয়া হল, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। যেমন ধোঁয়াশা কাটেনি এই প্রশ্নেরও যে, সেই ভোরে যুদ্ধ চলার সময় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছিলেন? তাঁর সঙ্গে পুলিশের বড় কর্তাদের ঘটনার সময় সরাসরি যোগ ছিল কি না, তা-ও জানা যায়নি।

ওই জঙ্গল আর নদীর অন্য প্রান্তেই সিকিম। দার্জিলিঙের দিক থেকে তাড়া খেলে গুরুঙ্গের দলবল সহজেই সীমানা পার হয়ে চলে যেতে পারবে, এটা সকলেরই জানা ছিল। কিন্তু সিকিমের দিকে আক্রমণের কোনও পরিকল্পনা ছিল কি না, পরিষ্কার নয়। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, ইচ্ছে করেই সিকিমের দিক থেকে আক্রমণের চেষ্টা হয়নি। কেননা, তা হলে সে কথা গুরুঙ্গদের কানে চলে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু গুরুঙ্গরা নদী পার হয়ে গেলে, কী করা হবে, তারও পরিকল্পনা ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ দিন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া অমিতাভবাবুদের ওই অভিযানে পাঠানো হল। রাজ্য সরকারে তরফে জানানো হয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিবার ওই জঙ্গলে গিয়ে পুলিশ গুরুঙ্গ বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পটি ঘুরে দেখেছেন।

অমিতাভ মালিক Amitabha Malik West Bengal Police Darjeeling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy