E-Paper

বিপর্যয়ের কালে কার্নিভাল, সহায়তার ডাক দিয়েও প্রশ্ন

বিপর্যয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে-সহ সকলেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:১২
উত্তরবঙ্গে বিপর্যয় এবং মৃত্যু-মিছিলের পরেও পুজো কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি প্রশ্নহীন থাকল না।

উত্তরবঙ্গে বিপর্যয় এবং মৃত্যু-মিছিলের পরেও পুজো কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি প্রশ্নহীন থাকল না। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গত বার আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে কলকাতা শহরে সরকারের পুজোর কার্নিভালের দিন পাল্টা ‘দ্রোহের কার্নিভালে’র ডাক দেওয়া হয়েছিল। এ বার উত্তরবঙ্গে বিপর্যয় এবং মৃত্যু-মিছিলের পরেও পুজো কার্নিভালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি প্রশ্নহীন থাকল না।

এই প্রেক্ষিতে উত্তরবঙ্গ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘সংবেদনশীলতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, এ সবই বিরোধীদের বিকৃত প্রচার।

বিপর্যয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে-সহ সকলেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও আজ, সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন। কিন্তু এর আগে, বিপর্যয়ের সময়ে রবিবার পুজোর কার্নিভাল কেন বহাল থাকল, তা নিয়ে মমতাকে বিঁধেছে বিরোধীরা। পুজোর মুখে কলকাতায় বিপুল বৃষ্টির পরে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে নবরাত্রি উপলক্ষে ডান্ডিয়া নাচে অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বিপর্যয় ও প্রাণহানির দিনে কলকাতার রেড রোডে কার্নিভালের মঞ্চে টলিউডের শিল্পীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নাচে অংশগ্রহণ ফের অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিরোধীদের হাতে।

২০২৪ সালের কার্নিভালের পরের দিনের প্রথম পাতা।

২০২৪ সালের কার্নিভালের পরের দিনের প্রথম পাতা।

দুর্যোগে মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি, সকাল থেকে কন্ট্রোল রুম থেকে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা, ভার্চুয়াল বৈঠকে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। এর সঙ্গেই, ভুটান ও নেপালের জলে উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় বলেও দাবি করেছেন তিনি। এই সূত্র ধরে কেন্দ্রের উদাসীনতায় ‘ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন’ না-হওয়াকে বিপর্যয়ের কারণ বলে উল্লেখ করে সরব হয়েছে তৃণমূল।

তবে উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের মধ্যেই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পুজো কার্নিভাল ও সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির পরিষদীয় দলের সচেতক ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেই সূত্র ধরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, “সরকারের লজ্জা নেই। সহ-নাগরিকেরা মারা গিয়েছেন। তার পরেও সরকার জনতার টাকায় উৎসব করছে! সকাল থেকে যা করার, সেটা কেন্দ্রের এনডিআরএফ করছে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও এ দিন বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল কার্নিভাল বাতিল করে আজই উত্তরবঙ্গে যাওয়া। দুর্যোগ মোকাবিলার পরিকাঠামো রাজ্য সরকারের নেই। সরকার এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত যে, নিকাশি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।” সোমবার উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন শমীকও। উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ‘অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে নৃত্যবিলাস করতে’ ব্যস্ত বলে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের এই ঘটনাকে ‘রাজ্য স্তরের বিপর্যয়’ ঘোষণা করার দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।

কেন্দ্র ও রাজ্য যাতে এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা করে, সেই দাবিতে সরব হয়েছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, “উত্তরবঙ্গে যখন মৃত্যু মিছিল চলছে, তখন কলকাতায় উৎসবের কার্নিভাল! পাহাড় কাঁদছে, উত্তর ভাসছে আর মমতা হাসছে।” একই সুরে কেন্দ্র ও রাজ্যকে নিশানা করেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের তোপ, “বন্যার জলে উত্তরবঙ্গে যখন লাশ ভাসছে, তখন কলকাতায় কার্নিভাল হচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল এ দিনই ‘উত্তরকন্যা’ থেকে পরিস্থিতির তত্ত্বাবধান করা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও কেন ঘটনার পরের দিন যাচ্ছেন? কেন্দ্র কেন এই ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করছে না?”

যদিও বিরোধীদের বক্তব্যকে ‘বিকৃত প্রচার’ বলে দাবি করে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী সকাল থেকে অভিভাবক হিসেবে যা যা করা দরকার, সব করেছেন। কলকাতার অনুষ্ঠান পূর্ব-নির্ধারিত। দেশ-বিদেশের অতিথিরা এসেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিকেলের অনুষ্ঠান বাতিল করা যায় না। চার-পাঁচ দিন সময় হাতে থাকলে নিশ্চয়ই ভাবনা-চিন্তা করা যেত! যতটা সংক্ষেপে সম্ভব, অনুষ্ঠান হয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ভাবিত নন, এমন মনে করার কারণ নেই।”

রাজনীতির স্বর চড়া হলেও দল-মত নির্বিশেষে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, এসইউসি-সহ বিভিন্ন দল। সিপিএমের তরফে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ‘রেড ভলান্টিয়ার’দের নম্বর দিয়ে যে কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যেই ত্রাণ বিতরণে যাতে রাজনীতির রং দেখা না-হয়, সেই আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja Carnival North Bengal Weather Flood in North Bengal Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy