সি ১৩০ জে সুপার হারকিউলিস।ফাইল চিত্র।
ঘড়ির কাঁটা তখন সওয়া দশটা পেরিয়েছে। পানাগড়ের আকাশে উড়ে এল সে। উড়তে উড়তেই অফিসারদের এক বার অভিবাদন জানিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফিরে গেল আকাশে। মিনিট খানেক পরে সোজা নেমে এল রানওয়েতে।
রানওয়েতে নেমে এল ভারতীয় বায়ুসেনার বিশ্বস্ত হাতিয়ার— ‘সি ১৩০ জে সুপার হারকিউলিস’। মঙ্গলবার সকালে এই বিমান পানাগড়ের মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল এক নতুন অধ্যায়। পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চিনের ‘বিপদ’ মাথায় রেখে সেনাশক্তি বাড়ানো হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে একাধিক বিমানঘাঁটি। বায়ুসেনা জানিয়েছে, সেই সমর কৌশলের নিরিখে আগামী দিনে এই সুপার হারকিউলিসই হতে চলেছে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। অল্প সময়ে দুর্গম এলাকায় সেনা পৌঁছে দিতে এর জুড়ি মেলা ভার। পানাগড়ে সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি তৈরির কথা আগেই জানিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এ দিন সেই ঘাঁটিতে সফল অবতরণ করিয়ে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে সিলমোহর
দিল বায়ুসেনা।
পানাগড় অবশ্য বায়ুসেনার পুরনো ঘাঁটি। ১৯৪৪ সালে মিত্রশক্তি এই ঘাঁটি তৈরি করে। পরে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে এখান থেকেই উড়ে যেত সুখোই-৭ ও মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে রানওয়ে ততটা পোক্ত ছিল না। পূর্বাঞ্চলের প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্র গ্রুপ ক্যাপ্টেন তরুণকুমার সিঙ্ঘা বলেন, ‘‘সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি তৈরির জন্য পানাগড়ের রানওয়েকে নতুন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।’’ বায়ুসেনা সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের মে মাসেই ৬টি বিমান এসে যাবে। বসছে উন্নত প্রযুক্তির রেডার এবং বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও। সব মিলিয়ে ২০১৭ সালের মে মাস নাগাদ ঘাঁটি পুরোদস্তুর কাজ শুরু করবে। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের হিন্ডনে সুপার হারকিউলিসের একটি ঘাঁটি রয়েছে। পানাগড় হবে ভারতের দ্বিতীয় ও পূর্বাঞ্চলের প্রথম সুপার হারকিউলিস ঘাঁটি। প্রয়োজনে এই ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমানও পরিচালনা করা সম্ভব হবে বলে বায়ুসেনা অফিসারদের দাবি।
হারকিউলিস বৃত্তান্ত
• নির্মাতা: লকহিড মার্টিন
• ক্ষমতা: ১৯ টন ওজন বইতে পারে।
• ছোট রানওয়েতে ওঠানামা।
• কম উচ্চতাতেও উড়তে পারে।
• শত্রুপক্ষের নিশানার মধ্যেও উড়তে সক্ষম।
• সর্বোচ্চ ২৮ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠতে পারে।
• সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩৬২ কিলোমিটার
• দুর্গম এলাকায় প্যারাট্রুপার বাহিনীকে পৌঁছে দিতে সক্ষম
কাজে লাগে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজেও।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশের মধ্যে এত ঘাঁটি থাকতে পানাগড়কেই কেন সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি করার জন্য বেছে নিল বায়ুসেনা?
সেনা সূত্রের ব্যাখ্যা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় চিনা বিপদের কথা মাথায় রেখে নতুন ধরনের যুদ্ধ কৌশল সাজাচ্ছে সেনা। তৈরি হচ্ছে ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’। সেনা পরিভাষায়, স্ট্রাইক কোরের অর্থ আক্রমণাত্মক বাহিনী। তারা সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকে না। তাদের দায়িত্ব শত্রু দেশে আক্রমণ চালিয়ে কোনও এলাকা দখল করে নেওয়া। এক সেনা কর্তার কথায়, ‘‘সম্প্রতি মায়ানমারে ঢুকে যে ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে, সেটাই কার্যত স্ট্রাইক কোরের কাজ। মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর পার্বত্য এলাকায় এ ধরনের অভিযান-যুদ্ধে পারদর্শী হবে।’’
সেনা সূত্রের খবর, পানাগড়ের সেনা ছাউনিতেই মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের সদর দফতর হবে। সেই বিশেষ সেনাদলকে দ্রুত দুর্গম জায়গায় পৌঁছতে হবে। সুপার হারকিউলিস ১৯ টন ওজন নিয়ে উড়তে পারে। দুর্গম এলাকায় স্বল্প উচ্চতায় উড়তে পারে, এবড়ো খেবড়ো রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে। সেনা কর্তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের জওয়ানদের পার্বত্য এলাকায় পৌঁছে দিতেই পানাগড়ে এই বিমানের ঘাঁটি করা হচ্ছে। এ দিন বায়ুসেনার ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান এয়ার মার্শাল এস বি দেবের কথাতেও তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘স্পেশ্যাল ফোর্সের বিমান হিসেবেই সুপার হারকিউলিস পরিচিত। পানাগড়ে এর ঘাঁটি হওয়ায় মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরের জওয়ানেরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন।’’ ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের আগে এ রাজ্যের কৃষ্ণনগরে দেশের প্রথম স্ট্রাইক কোর তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকে খুলনা, যশোর, ফরিদপুরের মতো একের পর এক জেলা দখল করেছিল এই কোরের সেনা জওয়ানেরা। বর্তমানে এই কোরের সদর দফতর হরিয়ানার অম্বালায়।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
কেন সুপার হারকিউলিসের ঘাঁটি পানাগ়ড়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy