Advertisement
E-Paper

হেরিটেজ ঘোষিত হাওড়ায় বঙ্কিমের বাড়ি

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাওড়ার বাড়ি শেষ পর্যন্ত হেরিটেজ বলে ঘোষণা করল পুরসভা। এই সঙ্গে পঞ্চাননতলা রোড সংলগ্ন ১৭ কাঠা আয়তনের তাঁর নামাঙ্কিত পার্ক হাওড়া পুরসভার উন্নয়ন বরাদ্দের জন্য বিবেচনা করার কথাও ঘোষণা হয়েছে। এ কারণে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে বলে ঘোষণা করেছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি জানান, গোটা অঞ্চলের সৌন্দর্যায়ন হবে। পরিকল্পনা হচ্ছে বাড়িটিতে একটি প্রামান্য বঙ্কিম-সংগ্রহশালা করার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ১৫:০০
 হাওড়ার পঞ্চাননতলায় বঙ্কিমচন্দ্রের সেই বাড়ি।

হাওড়ার পঞ্চাননতলায় বঙ্কিমচন্দ্রের সেই বাড়ি।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাওড়ার বাড়ি শেষ পর্যন্ত হেরিটেজ বলে ঘোষণা করল পুরসভা। এই সঙ্গে পঞ্চাননতলা রোড সংলগ্ন ১৭ কাঠা আয়তনের তাঁর নামাঙ্কিত পার্ক হাওড়া পুরসভার উন্নয়ন বরাদ্দের জন্য বিবেচনা করার কথাও ঘোষণা হয়েছে। এ কারণে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে বলে ঘোষণা করেছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। তিনি জানান, গোটা অঞ্চলের সৌন্দর্যায়ন হবে। পরিকল্পনা হচ্ছে বাড়িটিতে একটি প্রামান্য বঙ্কিম-সংগ্রহশালা করার।

বঙ্কিমচন্দ্র কর্মজীবনে তিন বার হাওড়ায় আসেন। প্রথম বার, ১৮৮১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, মতান্তরে ১৮৭৮-এ। বর্ধমান জেলার কমিশনার তথা ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের পিএ হিসাবে। ১৮৮৩-র ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আসেন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে। তৃতীয় বার, ১৮৮৬-র ১০ জুলাই আসেন ডিএম এবং ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে। পুরনো রাজস্ব অফিসের দ্বিতীয়তলে ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের দফতর। গোড়ায় এখানে ছিল লোয়ার অরফ্যান স্কুল। ১৮৪৩-এ জেলা ভাগ হওয়ার পর মুন্সেফদের পুরনো কাছারি এখানে স্থানান্তরিত হয়।

প্রাচীন পঞ্চানন মন্দির থেকে নামকরণ পঞ্চাননতলা রোডের। এই রাস্তা থেকে একটু ভিতরে ২১২ নম্বর বাড়ি। প্রবেশপথের মুখে শ্বেতপাথরের ফলক। হাওড়া সিটিজেন্স ফোরামের উদ্যোগে ২০০১-এর ২৬ জুন, অর্থাৎ বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিবসে এটি স্থাপিত হয়। ফলকে লেখা ‘বন্দেমাতরম স্রষ্টা সাহিত্য সম্রাট’ এই বাড়িতে কিছু কাল ছিলেন। তাঁর সঙ্গে এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ কয়েক জন মণীষী দেখা করতে এসেছিলেন। হাওড়ায় তাঁর বসবাস কাল এবং জন্ম-মৃত্যুর তারিখও খোদিত। ঠিক এরই পাশে, ২১৮ নম্বর বাড়িতেও কিছু কাল কাটান তিনি।

বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু কাল ধরেই বিভিন্ন তরফে দাবি উঠছিল। ‘হাওড়া সিটিজেন্স ফোরামের’ ফোরামের সম্পাদক শ্যামল কর এবং হাওড়া বঙ্কিম মেলা কমিটির কো-অর্ডিনেটর নিশিথ সরকার তাই পুরসভার ঘোষণায় খুশি। অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য তাঁর ‘বঙ্কিমচন্দ্র জীবনী’-তে জানিয়েছেন, ‘‘হুগলি থেকে বদলি হয়ে বঙ্কিমচন্দ্র হাওড়ায় ছিলেন ১৮৮১-র ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দু’মাস অবশ্য তিনি কলকাতায় থাকতেন, যাতায়াত করতেন কর্মস্থলে। পরে তিনি হাওড়ায় বাড়ি নেন। ওড়িশার ভদ্রকে বদলি হলেও সেই বাড়িটি রেখে দেন। ১৮৮৬-র ১০ জুলাই ফের হাওড়ায় বদলি হয়ে আসার পর সেই কলকাতা থেকেই যাতায়ত করতেন তিনি। বঙ্কিমচন্দ্রের সহকর্মী হিসাবে নোয়াখালি থেকে হাওড়ায় বদলি হয়ে আসেন মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, কী ভাবে বঙ্কিমবাবু কখনও মালদার আম, কখনও বৌবাজারের ভিম নাগের দোকান থেকে কেনা সন্দেশ, ভাগ-বাঁটোয়ারা করে টিফিন খেতেন।

২১৮ নম্বর বাড়ির সামনে তাঁর নামাঙ্কিত ফাঁকা জমিতে যে পার্ক, সেটির প্রবেশপথের মুখে তাঁর একটি আবক্ষমূর্তি রয়েছে। খাঁচাঘেরা মূর্তির বেদিফলকে কোনও নেতা বা প্রতিষ্ঠানের নাম না থাকলেও ফটকের পাশে তিনটি ফলক রয়েছে। একটি ২০০৪-এর অগস্টে অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসানো। অন্যটিতে ২০০৭-এ অরূপ রায়ের আলোকিত করার কথা লেখা। এই দু’টির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প–তে। ২০১০-এ বসানো ফলকে লেখা হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা পার্কটি সংস্কারের কাজ করেছে। এত সবের পরেও বাঁধানো স্লিপের সিঁড়িবোঝাই কাদা। স্লিপের নিচে গোটা দশ জঞ্জাল ফেলার হাতগাড়ি। মাঠে বেওয়ারিশ গাড়ি, বাঁশের ভাড়া।

—নিজস্ব চিত্র।

Panchanantala Bankimchanda heritage rathin chakrabarty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy