Advertisement
E-Paper

কামদুনির মতো রাস্তায় আতঙ্ক বাগনানের গ্রামে

রাস্তা, ধর্ষণ এবং খুনের গল্প এখানেও। একেবারে কামদুনির মতো। এখানেও রাস্তাটা ব্যবহার করতে ভয় লাগে মেয়েদের। এড়িয়ে চলেন। যেমন শিউরে ওঠেন কামদুনির টুম্পা, মৌসুমীরা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৯
গাইঘাটা খালের উপর সেই বাঁশের সাঁকো। ছবি: সুব্রত জানা।

গাইঘাটা খালের উপর সেই বাঁশের সাঁকো। ছবি: সুব্রত জানা।

রাস্তা, ধর্ষণ এবং খুনের গল্প এখানেও। একেবারে কামদুনির মতো।

এখানেও রাস্তাটা ব্যবহার করতে ভয় লাগে মেয়েদের। এড়িয়ে চলেন। যেমন শিউরে ওঠেন কামদুনির টুম্পা, মৌসুমীরা।

কামদুনির সঙ্গে ফারাক বলতে সেখানে দোষীদের শাস্তি হয়েছে। হাওড়ার বাগনানের নতুনগ্রামে হয়নি। কামদুনিতে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নতুনগ্রাম পিছিয়ে সেখানেও। অথচ, নতুনগ্রামে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা কামদুনির (২০১৩-র জুন) থেকেও পুরনো।

২০১২-র ৬ নভেম্বর নতুনগ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির এক ছাত্রী সকাল ৬টা নাগাদ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাচ্ছিল। অভিযোগ, রাস্তা থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে পান-বরজের মধ্যে ফেলে ধর্ষণ করা হয় তাকে। পরে গলা টিপে খুন করে ফেলে দেওয়া হয় খালের ধারে। মেয়েটির মা জানান, সকাল ৯টা নাগাদ ওই শিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে দুই বান্ধবী ফিরে এলেও মেয়ে না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। বেলা ১১টা নাগাদ খালের ধারে কাদা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেহ মেলে মেয়ের। ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, ‘‘প্রতিবেশী যুবক সনাতন দলপতি মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। তাকে বলেছিলাম, ‘মেয়ের বয়স কম। অপেক্ষা কর’। কিন্তু সে কথা না শুনে সে মেয়েকে উত্যক্ত করত। ওই মেয়েকে খুন করেছে।’’

সনাতন ঘটনার দিনই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ধরা পড়ে সনাতনের তিন আত্মীয়। তারা জামিন পেলেও সনাতন রয়েছে জেল-হাজতে। উলুবেড়িয়া আদালতে মামলার শুনানি চলছে।

কিন্তু যে রাস্তার পাশের খাল থেকে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার হয়েছিল, মেরেকেটে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সে রাস্তা এখনও এড়িয়ে চলছে এলাকার ছাত্রীরা। যদিও ওই রাস্তা দিয়ে সহজেই যাওয়া যায় স্থানীয় পানশিউলি প্রাথমিক স্কুল এবং হাইস্কুলে। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব বোধ করে অভিভাবকেরা এখন মেয়েদের ওই রাস্তা এড়িয়ে চলতে বলছেন। বিকল্প রাস্তা ধরে গেলে অন্তত ছ’কিলোমিটার ঘুরতে হয়। পেরোতে হয় নড়বড়ে সাঁকো। ফলে, অনেকেই মেয়েদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন।

কামদুনির মতো নতুনগ্রামের নির্যাতিতার দুই বান্ধবী মহুয়া দলুই এবং মধুমিতা গায়েনও এগিয়ে এসেছেন বিচারের দাবিতে। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি এবং আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরা। অথচ, দু’টি মেয়েরই বক্তব্য, ‘‘ওই রাস্তা দিয়ে গেলেই আতঙ্ক হচ্ছিল আমাদের। একে আমাদের বন্ধুর উপরে ওই অত্যাচার, তায় অভিযুক্তদের অনেকে জামিনে রয়েছে। কিন্তু ঘুরপথে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই বিয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে। আমরা আপত্তি করিনি।’’

দামোদরের সঙ্গে রূপনারায়ণকে মিলিয়েছে গাইঘাটা খাল। নতুনগ্রামের বুক চিরে এই খাল গিয়েছে। এখনও এই গ্রাম থেকে জনা কুড়ি ছাত্র-ছাত্রী কড়িয়া এবং বাইনানে স্কুলে যায়। সে জন্য পেরোতে হয় গাইঘাটা খাল। আগে যে কাঠের সেতু ছিল, সেটি মাস ছয়েক আগে ভেঙে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা কয়েকটি বাঁশ জুড়ে একটি সাঁকো তৈরি করেছেন। সেখান দিয়েই একরত্তি ছেলেমেয়েরা পার হচ্ছে প্রায় ৩০০ ফুটের খাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীদের গলায় এখনও আতঙ্ক, ‘‘পুরনো রাস্তায় বাচ্চারা গেলেই মেয়েটার (নির্যাতিতা) মুখটা ভেসে উঠছে। আমাদের সন্তানদের জন্য বাঁশের সাঁকোই ভাল।’’

সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সাঁকোটি মেরামতের প্রয়োজনীয়তার কথা কেউ জানাননি। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের অসিত মিত্রের মন্তব্য, ‘‘কামদুনিতে শাস্তি হয়েছে। এখানেও হোক। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

kamduni bagnan panic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy