Advertisement
E-Paper

আলমারিতে ঘড়ি, মেয়েটা আর নেই

মেয়ের জন্মদিনের স্মৃতি বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় গলা বুজে আসছিল বাবা-মায়ের। কোনও মতে নিজেকে সামলে নির্যাতিতার বাবা জানালেন, মেয়ের দু’বছর বয়সে বড় করে জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর একটা জামা কিনে আনতেন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৯
Share
Save

প্রতি বছর বাবার পছন্দ করে কিনে আনা জামা পরে কেক কাটত মেয়ে। গত বছর অবশ্য দামি ঘড়ি কিনে দিয়েছিলেন বাবা। আজ, রবিবার সেই সব স্মৃতি আগলে রেখেই মেয়ের জন্মদিনে ন্যায়বিচারের দাবি তুলবেন আর জি করের নিহত পড়ুয়া-চিকিৎসকের বাবা-মা।

শনিবার নির্যাতিতার মা বলেন, “মেয়েকে ফিরে পাব না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে কেন এমন ঘটল, আজও তার উত্তর পেলাম না।” আজ, ৩২ বছরে পা দিতেন ওই তরুণী। কিন্তু তাঁর জন্য পছন্দের পায়েস আর রাঁধতে না পারার যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখেই মন শক্ত করে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রাস্তায় থাকার সংকল্প করবেন বলেও জানালেন মা। আজ, রবিবার সকালে তাঁদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই আয়োজিত ‘অভয়া ক্লিনিক’-এ যাবেন তাঁরা। চিকিৎসক, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দাবি তুলবেন, “বিচারহীন দীর্ঘ ছ’মাস। জন্মদিনে অঙ্গীকার, বাংলার মেয়ের সুবিচার।”

মেয়ের জন্মদিনের স্মৃতি বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় গলা বুজে আসছিল বাবা-মায়ের। কোনও মতে নিজেকে সামলে নির্যাতিতার বাবা জানালেন, মেয়ের দু’বছর বয়সে বড় করে জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর একটা জামা কিনে আনতেন। সন্ধ্যায় সেই জামা পরেই পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতেই কেক কাটতেন মেয়ে। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত সন্ধ্যায় কলেজে কেক কেটে তড়িঘড়ি ফিরতেন বাড়িতে। জন্মদিনে বিশেষ কোনও খাবার নয়, শুধু আবদার থাকত নতুন গুড়ের তৈরি পায়েসের। সেই পায়েস রেঁধে মেয়ের অপেক্ষায় থাকতেন মা। এ দিন বাবা বললেন, “ডাক্তারি পাশ করার পরে যে সব চেম্বারে যেত, সেখানেও কেক কাটা হত। তবে রাতে বাড়ি ফিরে আমাদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটত। তার পর পায়েসটা খেত।”

সে সব স্মৃতি বারবার উঠে আসছিল বাবা-মায়ের গলায়। নির্যাতিতার মা বলছিলেন, “ওকে বড় করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছি। বাকি জীবনও ওর প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিচারের লড়াইতে উৎসর্গ করেছি।” স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার সুযোগ পেয়ে প্রথম যে দিন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে পা রেখেছিলেন তরুণী, সে দিন সঙ্গে গিয়েছিলেন বাবা। আজও সুবিচারের দাবিতে অঙ্গীকারের জমায়েত হবে আর জি কর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে যেতে চান না বাবা-মা। জরুরি বিভাগের সামনে হাসপাতালের মূল গেট দেখলেই মনটা বড্ড ভারাক্রান্ত হয়ে যায় তাঁদের। তবে মেয়ের জন্য মন খারাপ করে বাড়িতে বসে থাকবেন না তাঁরা। বরং ন্যায়বিচারের দাবিতে চিকিৎসক, সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাস্তায় নামবেন বাবা-মাও। হাঁটবেন কলেজ স্কোয়্যার থেকে শুরু হওয়া মিছিলে।

স্নাতকোত্তর পাঠরতা ডাক্তার মেয়েকে গত বছর আর জামা কিনে দেননি বাবা। বরং ‘সারপ্রাইজ়’ হিসেবে কিনে এনেছিলেন স্টিল ব্যান্ডের হাতঘড়ি। খুব পছন্দের সেই উপহার তিন-চার দিন ব্যবহারের পরেই যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছিলেন আর জি করের পড়ুয়া-চিকিৎসক। সে সব স্মৃতি ঘাঁটতে গিয়েই শনিবার দুপুরে গলা কাঁপছিল বাবার। আলমারিতে আজও রয়ে গিয়েছে সেই ঘড়ি।

শুধু সেই ঘড়ি হাতে পরার মানুষটা আর নেই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Rape and Murder Case RG Kar Case Verdict

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}