Advertisement
E-Paper

Covid 19: স্কুল খোলা স্বাগত, তবু সঙ্গী উদ্বেগ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির দরজা খোলা যে একান্ত জরুরি, তা মানছেন অধিকাংশ অভিভাবক। কিন্তু একই সঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩১
দমকলকর্মী জীবাণুনাশের কাজ করছেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দমকলকর্মী জীবাণুনাশের কাজ করছেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সোমবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

পড়াশোনার স্বার্থে তো বটেই, পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের খাতিরেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা খোলা যে একান্ত জরুরি, তা মানছেন অধিকাংশ অভিভাবক। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের অনেকের প্রশ্ন, পুজোর বেলাগাম ভিড়ের পরে যখন কোভিড সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী, যখন নতুন করে কড়া বিধিনিষেধের পথে হাঁটছে রাজ্য, ঠিক সেই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফের খোলার সিদ্ধান্ত কতখানি যুক্তিযুক্ত? বিশেষত স্কুল পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে পারস্পরিক দূরত্ববিধি কী ভাবে নিশ্চিত করা যাবে? কী ভাবে আটকানো যাবে তাদের গা ঘেঁষে বসে গল্প কিংবা টিফিন ভাগ করে খাওয়া? সেই ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করেই স্কুল খোলা কাঙ্খিত বলে তাঁদের অভিমত।

আবার উল্টো মতও আছে। অভিভাবকদের একাংশের মতে, স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে করে যদি শপিং মল ঘোরা, বেড়াতে যাওয়া, পুজো দেখা— সবই করা যায়, তা হলে শুধু স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে দ্বিধা কেন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তকে মোটের উপরে স্বাগত জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। দীর্ঘদিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় খুশি পড়ুয়াদের এক বড় অংশও।

অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘স্কুল অনেক আগেই খোলা উচিত ছিল। কিন্তু তা এমন সময়ে খুলতে যাচ্ছে, যখন সংক্রমণ ফের বাড়ছে। ১৬ নভেম্বর কোভিড পরিস্থিতি কোথায় যাবে, কেউ জানেন না। এই বিষয়টি সরকার যেন খেয়াল রাখে।’’ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের এক বড় অংশের টিকাকরণ হয়েছে। অন্তত তাঁদের জন্য বাজারে এসেছে টিকা। ফলে এখনও তা না পেয়ে থাকলে, অন্তত আগামী দিনে তা নেওয়া যাবে। কিন্তু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য টিকা এখনও বাজারেই আসেনি। ফলে তাদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় শম্পা দাস, রিঙ্কু চক্রবর্তীর মতো কলকাতার অনেক অভিভাবক। মুর্শিদাবাদের সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের সহকারি প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “প্রত্যেক পড়ুয়াকে টিকা দিয়ে স্কুল খোলা হলে ভাল হত।”

আবার ওই জেলারই নবম শ্রেণির ছাত্রের অভিভাবক শুভময় সেন বলেন, “অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। দেরিতে হলেও এই সিদ্ধান্তে আমি খুশি।” পেশায় সরকারি কর্মী আব্দুল করিম বলেন, “ধুলিয়ানে এখন কত ছেলেমেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে ঘুরে বেড়ায়। স্কুল খুললে ফের পড়াশোনার ঝোঁক বাড়বে।” অগ্নি মিত্র বিশ্বাস, সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতো অনেকে চান, স্কুল খুলুক পারস্পরিক দূরত্ববিধি, কোভিড-সাবধানতা নিশ্চিত করে। সিদ্ধার্থের কথায়, ‘‘২০ মাস পরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা স্বাগত। তবে, স্বাস্থ্য বিধির পাঠ চলুক। এক লপ্তে কম পড়ুয়াকে আনা, মাস্ক, সাবানে হাত ধোয়ার বিষয়ে নজর দেওয়া হোক। বাধ্যতামূলক করা হোক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মীদের টিকা নেওয়া।’’ প্রশ্ন উঠছে, ঠান্ডা লাগা নিয়েও স্কুলে আসা আটকানো, পুল কার ইত্যাদি ব্যবহার নিয়েও।

অভিজিৎ দাস, পারমিতা মণ্ডলের মতো মেদিনীপুরের অভিভাবকের বক্তব্য, ‘‘খানিকটা পড়াশোনা অনলাইনে হয়েছে। তবে স্কুল খোলা জরুরি।’’ দাবি, করোনা চিকিৎসার প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরি রাখা হোক। সিউড়ির অভিভাবক মিলন মজুমদার বলেন, ‘‘সবই তো খুলে গিয়েছে। শুধু স্কুল বন্ধ ছিল।’’ বাগনানের দেবস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মেয়ের সামনের বছর মাধ্যমিক। কোভিড-বিধি মেনে স্কুলে যেতে আশা করি, সমস্যা হবে না।’’ বনগাঁর বিমল প্রামাণিকের কথায়, ‘‘সামনেই ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক। স্কুল না থাকায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিল। আশা এ বার স্বাভাবিক হবে।’’ পূর্ব বর্ধমানের শেখ মনিরুলের মতে, ‘‘স্কুল খুলবে শুনে ভাল লাগছে। তবে টিকা হয়ে গেলে নিশ্চিত হতাম।’’

ঘোষণাকে স্বাগত জানান অধিকাংশ শিক্ষক, পড়ুয়া। দ্বাদশের ছাত্র কিংশুক রায় বলেন, “ফের স্কুলে যেতে পারব ভেবেই ভাল লাগছে। বিশেষত প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস শুরু হওয়া জরুরি।” পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “অনলাইন পড়াশোনা ডিজিটাল ডিভাইডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিকল্প কিছু হতে পারে না।” পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র এবং শিক্ষক নেতা নবকুমার কর্মকারের মতে, “জরুরি ছিল যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের টিকাকরণও। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুটার সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বার বার স্কুল খোলার আবেদন জানিয়েছি।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, ক্যাম্পাস তাঁরা পরিষ্কার করে ফেলেছেন। ক্লাস শুরু করতে অসুবিধা হবে না। একই বক্তব্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।

Covid 19 Educational Institutes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy