Advertisement
E-Paper

চোখে কালো চশমা, এসএসসি মামলায় আদালতে ভার্চুয়াল হাজিরা দিলেন পার্থ, বুধবারই চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর

বৃহস্পতিবার দুপুরে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে এসএসসি-র নবম-দশমের মামলার শুনানিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরা দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তখনই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে কালো চশমা পরে থাকতে দেখা যায়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৭
কালো চশমা পরে আদালতে ভার্চুয়াল হাজিরা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

কালো চশমা পরে আদালতে ভার্চুয়াল হাজিরা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কালো চশমা পরে আদালতে ভার্চুয়াল হাজিরা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে ওই মামলার শুনানিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরা দেন তিনি। তখনই প্রাক্তন মন্ত্রীকে কালো চশমা পরে থাকতে দেখা যায়। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে হাজিরা দেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারী এবং তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীও। এসএসসি-র একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় পার্থ, অঙ্কিতা, পরেশ-সহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে আদালতে।

গত কয়েক মাস ধরেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পার্থ। বুধবার তাঁর চোখে অস্ত্রোপচার হয়। সেই কারণেই বৃহস্পতিবার কালো চশমা পরে ভার্চুয়াল হাজিরা দেন পার্থ। গত ৩ সেপ্টেম্বর নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে জামিন পেয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তবে জামিন পেলেও পার্থ জেলমুক্ত হননি। প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত সিবিআইয়ের মামলাতেও অন্যতম অভিযুক্ত পার্থ। তাই আপাতত জেলেই থাকতে হবে তাঁকে।

বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মামলা থেকে অব্যাহতি চান পার্থ। তাঁর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী আদালতে সওয়াল করে বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের চার্জশিট এবং এফআইআর-এ প্রথমে আমার মক্কেলের নাম ছিল না।” সিবিআইয়ের দাবিও ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেন তিনি।

আদালতের কাছে ‘মুক্তি’ চেয়ে হাসপাতালের বিছানায় বসেই সওয়াল করেন পার্থ। আদালতে পার্থের সওয়াল-জবাব পর্ব এখানে তুলে ধরা হল।

পার্থ- স্যর (বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ), আমি শিক্ষামন্ত্রী ছিলাম। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

বিচারক- অশোক সাহাকে চেয়ারম্যান, নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করেছিলেন। নকল নথিকে আসল হিসাবে দেখিয়েছেন।

পার্থ- আমার সামাজিক সম্মান আছে। ২৫ বছর ধরে একটা অঞ্চল থেকে পাঁচ বার জিতেছি। আমি একটি জায়গায় নজরদারির দায়িত্বেও ছিলাম। এই ধরনের কাজ যারা করেছে, তারা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

পার্থ- আমায় মুক্তি দিন। সমাজের সামনে দাঁড়াতে দিন। জেলের অন্ধকারে রেখে আমায় সুযোগ দেওয়া হয়নি।

পার্থ- আমি যাঁদের নিয়োগ করেছি বলে বলা হচ্ছে, তাঁদের আমি নিয়োগ করিনি। এসএসসি-ই নিয়োগ করত। অশোক সাহা আগে থেকেই ওখানে কাজ করতেন।

পার্থ- আমি মন্ত্রী হওয়ার আগেই সুবীরেশ ভট্টাচার্য ওখানে চেয়ারম্যান ছিলেন। কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় আমি আসার আগেই ওখানে ছিলেন। যাঁরা অন্যায় করেছেন, তাঁদের কিছু হচ্ছে না। আমার দোষটা কোথায়? ওঁরা দোষ করলে আমি সরিয়ে দিতাম। কিন্তু সেটা নিয়মে নেই।

নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২২ সালের ২২ জুলাই পার্থের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এর পর ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে হানা দেয় ইডি। টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও। নিয়োগ দুর্নীতিতে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ওই বছরই ২৩ জুলাই পার্থ এবং অর্পিতাকে গ্রেফতার করে ইডি। ২৭ জুলাই অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়। সঙ্গে মেলে বহুমূল্য গয়নাও। ইডি দাবি করে, সব মিলিয়ে অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে নানা বৈদেশিক মুদ্রাও মিলেছিল। ইডির তরফে দাবি করা হয়, সোনাদানা, ফ্ল্যাট-বাড়ি মিলিয়ে কম করে ৬০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

পরবর্তী কালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই-ও গ্রেফতার করে পার্থ এবং অর্পিতাকে। সিবিআইয়ের প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতেও নাম জড়ায় পার্থের। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। সম্প্রতি এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের মামলায় চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। গত শুক্রবার গ্রুপ সি মামলাতেও আলিপুর আদালতে শেষ চার্জশিট জমা পড়েছে। এর আগে ওই মামলায় আরও দু’টি চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। সব মিলিয়ে চারটি চার্জশিট জমা পড়েছে। ২০২২ সালে এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত শুরুর ৫১ দিনের মাথায় যে প্রথম চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে পার্থ ছাড়াও নাম ছিল সমরজিৎ আচার্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, বেআইনি ভাবে নিযুক্ত প্রার্থী দীপঙ্কর ঘোষ, সুব্রত খাঁ, অক্ষয় মণি, ইদ্রিস আলি মোল্লা প্রমুখের। শেষ চার্জশিটে অবশ্য নতুন করে কারও নাম নেই। তবে কিছু নতুন তথ্যপ্রমাণ এবং নথি রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।

SSC Recruitment Case Partha Chatterjee CBI SSC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy