ছাত্র সংসদের কাজে অ-ছাত্র কেউ হস্তক্ষেপ করবে না বলে মুখে বললেও নিজেই তা নস্যাৎ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়! একাধারে শিক্ষামন্ত্রী, অন্য দিকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখন থেকে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র কাজে ‘নজরদারি’ চালাবেন তিনি নিজেই।
শিক্ষামন্ত্রীর ‘হস্তক্ষেপ’ এড়িয়ে কোনও পদক্ষেপ যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করতে না পারেন, সে জন্যই শাসক দল এমন সিদ্ধান্ত নিল বলে শিক্ষা মহলের ব্যাখ্যা। যদিও তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, টিএমসিপি-র গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যাতে দলের অস্বস্তি আর না বাড়ায়, তার জন্য এখন থেকে নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংগঠনের কাজে নজরদারি করবেন পার্থবাবু। আবার একটি অংশের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলমাল সামলানোর মতো এখন তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের যোগ্য নেতৃত্ব না থাকার কারণেই পার্থবাবুর এ ভাবে দেখভাল করার প্রয়োজন হচ্ছে। দু’দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষাঙ্গনে সুস্থতা বজায় রাখতে সতর্ক থাকতে হবে শিক্ষকদেরও। এ বার টিএমসিপি-র বৈঠক থেকে যা সিদ্ধান্ত হল, তাতে ঘুরপথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাই হল বলে শিক্ষা মহলের একাংশের মত।
টিএমসিপি-র বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের কাজ তদারকির কথা সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের। পার্থবাবু মাথায় থাকলে রাজ্য ইউনিটও স্বাধীন ভাবে এখন থেকে আর কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বলে টিএমসিপি নেতাদের ধারণা। বকলমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সিদ্ধান্ত পার্থবাবু নিজেই নেবেন বলে দলের একাংশের অভিমত। কোনও সংস্থার শ্রমিক সংগঠনে কোনও মন্ত্রী থাকবেন না বলে সম্প্রতি তৃণমূলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা হলে মন্ত্রী-নেতারা কেন ছাত্র সংগঠনের কাজে মাথা ঘামাবেন, তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে মুখ না খুললেও পার্থবাবু এ দিন প্রায় স্বীকার করে নিয়েছেন, কলেজগুলি স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করবেন। কলেজের ছাত্র সংসদের কাজকর্মে ছাত্রদের বাইরে কেউ যুক্ত থাকবে না বলে এ দিন টিএমসিপি-র নেতাদের নিয়ে বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন দলের মহাসচিব। অথচ প্রকারান্তরে ‘বহিরাগত’ নেতাদের হাতেই কলেজের ‘নিয়ন্ত্রণ’ রাখতে চাওয়া হচ্ছে! পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘নিয়ন্ত্রণ তো থাকবেই। টিএমসিপি তো দলের শাখা সংগঠন। আর আমাদের এই নিয়ন্ত্রণ সিপিএমের মতো ধ্বংসাত্মক নয়! কলেজে শৃঙ্খলারক্ষার জন্যই এই নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।’’
গত পাঁচ বছরে একের পর এক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্যের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে টিএমসিপি-র। বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েও ছাত্র সংগঠন বা দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব, কোনওটাই যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ শান্তিপুর বা জয়পুরিয়া কলেজের ঘটনা। তার জেরে জয়পুরিয়ার সকাল, দিবা এবং সান্ধ্য— তিনটি ইউনিটেরই ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। শান্তিপুর কলেজে শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ঠেকানোয় অভিযুক্ত শান্তিপুর ব্লকের টিএমসিপি সভাপতি মনোজ সরকারকে দায়িত্ব থেকে অপসারিত করা হয়েছে বলে এ দিন বৈঠকের পরে জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দাদাগিরি’ বন্ধ করতে কলকাতার দক্ষিণ, মধ্য, উত্তরের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলির টিএমসিপি সভাপতি বদলের সিদ্ধান্তও হয়েছে।
কিন্তু শৃঙ্খলারক্ষার স্বার্থে ছাত্র সংগঠনের স্বাধীন সত্তাই কি বিসর্জন দিতে হচ্ছে না? জয়ার মন্তব্য, ‘‘বড়দের নির্দেশ নিয়েই তো আমাদের চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট এখন ওঁকে (পার্থবাবু) দিতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy