Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Patients

মানসিক হাসপাতালে ভিড় কমাতে সুস্থদের দ্রুত মুক্তি

মানসিক হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগীর আধিক্যই বড় সমস্যা। পাভলভ বা বহরমপুরের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা শয্যার দ্বিগুণ।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:১৬
Share: Save:

গুন্ডাচক আর পূর্ণিয়া! বহু সাধ্যসাধনায় তরুণীর মুখ থেকে এই দু’টি শব্দ বেরিয়েছিল। আর বাড়ির কাছে একটি ‘নাহার’ বা পুকুরের কথা বলেছিলেন বিমলা দেবী। দেড় বছর ধরে বহরমপুরের মানসিক হাসপাতালই ছিল তাঁর পৃথিবী।

উত্তরপ্রদেশে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার সময় হারিয়ে গিয়েছিলেন ত্রিশোর্ধ্বা বিমলা। কী ভাবে যেন ঠাঁই হয় মানসিক হাসপাতালে। তাঁর ঠিকানার খোঁজে গুগ্‌ল ম্যাপ ঘেঁটে পরপর জায়গার নাম শোনাচ্ছিলেন হাসপাতালের আধিকারিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। পূর্ণিয়া সদর থানার সাহায্যে বিমলার বাপের বাড়ি পৌঁছে যান স্বরূপ রায়। সব শুনে মাসখানেক আগে বিমলাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন তাঁর ভাই।

মানসিক হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগীর আধিক্যই বড় সমস্যা। পাভলভ বা বহরমপুরের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা শয্যার দ্বিগুণ। পুরুলিয়া, লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালও উপচে পড়ছে। মানসিক হাসপাতালে গাদাগাদির কথা মানছেন রাজ্যের শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তারা। মনোরোগী না-হলেও আদালত, পুলিশ মারফত ভর্তি করানোর যা হিড়িক, তাতে দ্রুত ‘রিলিজ়ে’র প্রক্রিয়া জরুরি।

ঠাসাঠাসি

হাসপাতাল শয্যা রোগী
বহরমপুর ৪৫০ ৬৭১
পাভলভ ২৫০ ৬২৪
পুরুলিয়া ২০০ ২১৬
লুম্বিনী পার্ক ২০০ ২১৭

নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইনে (২০১৭) মনোরোগীদের জন্য নির্দিষ্ট নীতি রূপায়ণে ‘স্টেট মেন্টাল হেল্‌থ অথরিটি’ গঠনের বিষয়টি এখনও বিশ বাঁও জলে। একা চলাফেরা করতে নড়বড়ে মুখচোরা গৃহবধূ, ভাষা-সমস্যায় কাবু ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা, চোট-আঘাত পেয়ে কথাবার্তা বা আচার-আচরণে অসংলগ্নতার শিকার হয়ে পড়া লোকজনকেও আকছার মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে আদালত বা পুলিশ। পুরো সুস্থ হলেও মনোরোগী তকমা দিয়ে অনেককেই ফেলে রাখা হচ্ছে ওয়ার্ডের ‘জেলখানায়’। তবু গত দু’মাসে হাসপাতালে গাদাগাদি এড়ানোর চেষ্টা কিছুটা সফল হয়েছে। বহরমপুর হাসপাতালে দু’মাসে আবাসিকের সংখ্যা ৭১২ থেকে কমে এখন ৬৭১।

‘‘কোন কোন আবাসিক বাইরে সকলের সঙ্গে থাকার উপযুক্ত, তা বাছাই করে নিয়েছিলাম। নতুন সুপার তপন টিকাদার যোগ দেওয়ার পর থেকে আমরা পরিকল্পনামাফিক এগিয়েছি,’’ বললেন মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস। তিনি জানাচ্ছেন, আগে আবাসিকদের বাড়ির অস্পষ্ট ঠিকানায় নিয়মরক্ষার চিঠি ফেলে দায় মেটানো হত। যোগাযোগের তেমন চেষ্টাই হত না। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের নিজস্ব দল এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন। বহরমপুরের হাসপাতালে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অদিতি বসু, সানন্দা গুপ্ত, স্বরূপবাবুরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসানসোলের নিকটবর্তী গ্রাম থেকে আসা মহিলার স্বামীকে খবর দেওয়া হচ্ছে, মোটরবাইকে চষে ফেলা হচ্ছে রায়গঞ্জ, ডালখোলা, মাটিগাড়া, চালশা, দার্জিলিং, জয়গাঁ। স্বরূপবাবু বললেন, ‘‘কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সাহায্যে আবাসিকের আগাম কাজের বন্দোবস্ত করছি আমরা। বাড়ির লোকজনকে বহরমপুর যাতায়াতের খরচ দিয়েও সাহায্য করা হচ্ছে। সুস্থ হয়ে ওঠা আরও ২০ জন দ্রুত ছাড়া পাবেন।’’

দিল্লিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নতুন আইন রূপায়ণের বিষয়টি আটকে গিয়েছে। মানসিক রোগীদের অধিকার রক্ষা নিয়ে কর্মরত রত্নাবলী রায়ের প্রশ্ন, ডাক্তার ছাড়াও সমাজের সব স্তরের মানুষ, ভুক্তভোগী মনোরোগী, সমাজকর্মীদের নিয়ে ‘স্টেট মেন্টাল হেল্‌থ অথরিটি’ গঠনে গড়িমসি চলছে কেন? এই ধরনের ‘অথরিটি’র ব্যবস্থা থাকলে মনোরোগীদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patients Mental Health Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE