বদলেছে সময়। পাল্টে যাওয়া সময়ের প্রতিফলন দেখা যেতে চলেছে আসন্ন জনগণনার প্রশ্নেও।
শেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১০-১১ সালে। গত দেড় দশকে বদলে গিয়েছে পৃথিবী। বদলেছে রাজনৈতিক বিন্যাস। পরিবর্তনের হাত ধরে গত ১৫ বছরে আপাদমস্তক বদলে গিয়েছে বিনিয়োগ থেকে বিনোদনের দুনিয়া। যার ছাপ পড়তে চলেছে জনগণনার প্রশ্নোত্তরেও। জনগণনার প্রশ্নের ভিত্তিতে পাওয়া উত্তর সরকারের পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলেই মত অর্থনীতিবিদদের। বিরোধীদের মতে, অথচ সেই কাজটিই ফেলে রাখা হয়েছিল ২০২১ সাল থেকে। জনগণনাকালে কোনও ব্যক্তিকে যে প্রশ্ন করা হবে, তিনি তার উত্তর দিতে আইনগত ভাবে বাধ্য থাকবেন।
দুনিয়া এখন স্মার্টফোনেই। সূত্রের মতে, ২০১১ সালের জনগণনায় ইন্টারনেট শব্দটি অনুল্লেখিত থাকলেও, এ বার বিশদে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন থাকতে চলেছে জনগণনায়। জানতে চাওয়া হবে, উত্তরদাতার কাছে কী ধরনের মোবাইল ফোন রয়েছে। তিনি যে দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন তার মাধ্যম ল্যাপটপ, সাধারণ মোবাইল না স্মার্টফোন? গতবার জানতে চাওয়া হয়েছিল বাড়িতে টেলিভশন বা রেডিও রয়েছে কি না।
এ বারে সেই প্রশ্নের সঙ্গেই সংযোজিত হয়েছে— টিভিতে কী ধরনের পরিষেবা নিয়ে থাকেন উত্তরদাতা। দূরদর্শন ফ্রি ডিশ, কেবল নেটওয়ার্ক, ডিটিএইচ, না কি ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করে টেলিভিশনের দুনিয়া।
সূত্রের মতে, পরিষেবাজনিত প্রশ্নের ক্ষেত্রেও বদলাচ্ছে প্রশ্নের ধাঁচ। অতীতে যেখানে প্রশ্ন হত বাড়ির লোকেদের পরিস্রুত জলপান করার সুযোগ রয়েছে কিনা, এ যাত্রায় এক ধাপ এগিয়ে উত্তরদাতাদের জানাতে হবে বাড়িতে বোতলবন্দি জল খান কি না। চিরাচরিত উৎসের পাশাপাশি সৌরশক্তির ব্যবহার হয় কি না তা-ও জেনে নেবেন প্রশ্নকর্তারা। সরকারের বক্তব্য, গোটা দেশে সময়ের সঙ্গে সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়েছে তাঁর প্রভাব পড়তে চলেছে এ বারে প্রশ্নেও।
বর্তমানে চাকরির খোঁজে নিজের শহর ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন শহরে বসবাস স্বাভাবিক ঘটনা। ২০১১ সালের জনগণনায় যেখানে কেবল প্রশ্ন করা হয়েছিল ব্যক্তির স্থানান্তরন (মাইগ্রেশন)-এর কারণ এবং কত দিন ধরে সেখানে রয়েছেন। চাকরির সূত্রে নতুন শহরে যে বাড়িতে তিনি থাকেন, তা নিজের নাকি ভাড়ায় থাকেন তিনি! এ বারে বাড়তি প্রশ্ন হিসেবে ভাড়া বাড়িতে থাকলেও, অন্য শহরে নিজের বাড়ি রয়েছে কি না তা জানতেচাওয়া হবে।
রেজিস্টার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই)-এর সূত্রে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের সামগ্রিক আর্থিক পরিস্থিতি বুঝতে ওই প্রশ্নগুলি যোগ করা হয়েছে। যাতে সার্বিক চিত্রটি জনগণনার মাধ্যমে ফুটে ওঠে।
এত দিন জনগণনায় বাড়ির প্রধান স্ত্রী না পুরুষ তা জানালেই হয়ে যেত। কিন্তু এ বারে বাড়ির মাথা তৃতীয় লিঙ্গের কি না তা জানানোর সুযোগ থাকছে। দেশে খাদ্যশস্যের ভবিষ্যৎ চাহিদা বুঝতে দেশের মানুষ ভাত, আটা জোয়ার, বাজরা, বা ভুট্টা—কোন অংশের মানুষ কোন শস্যকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গুরুত্ব দেন তারও একটি স্পষ্ট চিত্র পেতে চাইছে সরকার। সরকারকে আগামী দিনে কোন ফসলগুলির ফলানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে তা বুঝতেই ওই উদ্যোগ। প্রশ্নের মাধ্যমে জেনে নেওয়া রান্নাঘরের আগুনের উৎস কী। কাঠ-কয়লা, কেরোসিন, সিলিন্ডার না পাইপ গ্যাস। সূত্রের মতে, পাইপের মাধ্যমে কোন রাজ্যগুলিতে গ্যাস সরবরাহের ভবিষ্যৎ চাহিদা তৈরি হতে পারে তার আভাস পেতে চাইছে সরকার।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)