বিধানসভা নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার শেষ বাণিজ্য সম্মেলন হল রাজ্যে। ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহের সেই সম্মেলন থেকে দেশবিদেশের শিল্পপতি এবং বণিকমহলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশিই রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা বর্তমান মুখ্য পরামর্শদাতা অমিত মিত্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর মুখে।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল এক দিনের শিল্প সম্মেলন ‘বিজ়নেস কনক্লেভ’। সেখানেই জিএসটি নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জিএসটি আসায় আখেরে ক্ষতি হয়েছে বলে অতীতেও তিনি বার বার সরব হয়েছেন। শিল্প সম্মেলনে ফের একবার তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখন আর রাজ্যের নিজস্ব কর নেই। দেশে শুধুমাত্র একটাই কর আছে— জিএসটি। জিএসটি যখন এসেছিল, প্রথমে সকলে ভেবেছিল রাজ্যগুলোর ভাল হবে। এই অমিত মিত্র বলেছিলেন, অভিন্ন করকাঠামো এলে ভাল হবে! এখন ওঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন জিএসটির উপরেও টাকা কাটা হচ্ছে। ২০,০০০ কোটি টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে আমার রাজ্য থেকে। এর উত্তর দিতে হবে।’’
মমতা যখনই ওই কথা বলছেন, তখন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মঞ্চেই ছিলেন। অমিতের সমালোচনা করার পর ভাষণ থামিয়ে অমিতের উত্তরের জন্য কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করেন মমতা। অমিত উত্তর দেন, ‘‘সংসদে কেন্দ্র জানিয়েছে, জিএসটিতে ২ লক্ষ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘আপনি বলছেন ২ লক্ষ কোটি টাকা। আসলে কত লক্ষ হয়েছে কে জানে! আপনিই বলুন, জিএসটিতে লাভ হচ্ছে, না ক্ষতি হচ্ছে?’’
আরও পড়ুন:
মাস খানেক আগেই জিএসটি সংক্রান্ত পুরনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ভুল স্বীকার’ করেছিলেন মমতা। সে সময় সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আস্থা রেখে জিএসটি মেনে নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। কিন্তু সেই মেনে নেওয়া যে আদতে ‘বড় ভুল’ ছিল, সে কথা এত বছর পর প্রথম বার শোনা গিয়েছিল মমতার মুখে। তখনও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, জিএসটি যখন চালু হয়, তখন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত তাঁকে অভিন্ন করকাঠামো সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন। সেই ‘ভুল বোঝানোর’ জেরেই প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে জিএসটি-কে সমর্থন করেছিল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার।
জিএসটির দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি হল সিজিএসটি, যা কেন্দ্রীয় সরকার পায়। অন্যটি এসজিএসটি, যা পায় রাজ্য সরকার। কোনও পণ্য বা পরিষেবা একই রাজ্যের মধ্যে বিক্রি হলে সে ক্ষেত্রে জিএসটি বাবদ প্রদেয় শুল্ককে সিজিএসটি এবং এসজিএসটিতে ভাগ করা হয়। আবার কোনও পণ্য এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বিক্রি হলে সে ক্ষেত্রে হিসাব ধরা হয় ‘ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি’ বা আইজিএসটির। আইজিএসটির টাকার পুরোটাই শুরুতে কেন্দ্রের কাছে যায়। পরে এই শুল্কের একটি অংশ ফেরত পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছে। এ নিয়েই বার বার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন মমতা। তাঁর দাবি, জিএসটির নামে রাজ্যগুলির কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেলেও রাজ্যের ভাগের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। উল্টে কেন্দ্রই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। এ বার ফের সে কথারই পুনরুক্তি শোনা গেল মমতার মুখে।