E-Paper

ত্রিবেণীর ‘কুম্ভে’ গঙ্গাতেই প্রাতঃকৃত্য, ছড়াচ্ছে দূষণ

গঙ্গাদূষণ নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা। মেলার আয়োজক এবং স্থানীয় পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, সাধু এবং ভক্তেরা শৌচাগার খুঁজে পাননি।

সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৫
Kumbh Mela

‘কুম্ভমেলার’ মুহূর্ত। সোমবার হুগলির ত্রিবেণীতে। ছবি: তাপস ঘোষ

পুণ্যস্নানের আয়োজন হয়েছে। কিন্তু গঙ্গাদূষণ রোধে ব্যবস্থা নেই। রবিবার থেকে হুগলির ত্রিবেণীর গঙ্গাপাড়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘কুম্ভমেলা’। সাধু-সন্ন্যাসীরা এসেছেন। সোমবার, মাঘ-সংক্রান্তিতে ভক্তদের ভিড় ভেঙে পড়ে গঙ্গার ঘাটে। কিন্তু, সাধুদের অনেকেরই ক্ষোভ, আয়োজন নিয়ে তাঁরা অখুশি। পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। অনেকে গঙ্গার পাড়ে প্রাতঃকৃত্য সেরেছেন। কেউ কেউ জলে নেমে। একই অভিযোগ ভক্তদেরও।

এই পরিস্থিতি গঙ্গাদূষণ নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা। মেলার আয়োজক এবং স্থানীয় পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, সাধু এবং ভক্তেরা শৌচাগার খুঁজে পাননি।

কথিত আছে, সাত শতক আগে এখানে কুম্ভমেলা হত। পরে বন্ধ হয়ে যায়। মাঘ মাসের শেষ দিন গঙ্গাস্নানকে উপলক্ষ করে গত বছর থেকে ফের এই মেলা হচ্ছে। মেলাকে ঘিরে সাজো সাজো রব। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্নানার্থী এবং সাধুদের ‘কুম্ভস্নান’ দেখার ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। এ দিন মেলা প্রাঙ্গণ থেকে আধ কিমি আগে চুঁচুড়া-ত্রিবেণী রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। মেলায় মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর-সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে, যত ঝঞ্ঝাট শৌচাগারে!

গঙ্গাসাগর থেকে আসা সাধু অচিন্ত্য মহারাজ বলেন, ‘‘শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। সকালে গঙ্গাপাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে ভিড়। গঙ্গায় নেমেই প্রাতঃকৃত্য করতে হল। আর আসব না।’’ কোচবিহার থেকে এসেছেন বিনয় গিরি নামে আর এক সাধু। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘যে সব মেলায় যাই, আমাদের জন্য আলাদা শৌচালয়ের ব্যবস্থা থাকে। এখানে নেই। গঙ্গাই ভরসা।’’ চুঁচুড়ার এক মহিলার বক্তব্য, প্রচুর ভিড় হবে, আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। সেই হিসাবে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। রিষড়ার এক মহিলার দাবি, ভবিষ্যতে মেলা করতে হলে মানুষেরসুবিধা-অসুবিধার দিকে যেন নজর দেওয়া হয়। এ দিন সকালে মেলায় আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ তাঁর গলাতেও। আয়োজকদের দুষে তিনি বলেন, ‘‘এত বড় একটা অনুষ্ঠানের জন্য ন্যুনতম পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ গঙ্গার পাড়ে বা জলে প্রাতঃকৃত্যে বিষয়টি শুনেছেন পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক। মেলার নামে প্রকাশ্যে গঙ্গাদূষণ করা হচ্ছে। এক দিকে, ঘাটে ঘাটে গঙ্গা পুজো চলছে। অন্য দিকে, সেই পুজো-পার্বণের নামেই চলছে গঙ্গাদূষণ।’’

মেলার উদ্যোক্তা ‘ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালন সমিতি’র সভাপতি তথা বাঁশবেড়িয়ার পুরপ্রধান আদিত্য নিয়োগীর বক্তব্য, সাধুদের সংখ্যা অনেকটা বেশি হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে, শৌচাগারের ব্যবস্থা একেবারেই না থাকার কথা ঠিক নয়। তাঁর দাবি, ‘‘সাধুদের জন্য আমরা ৬টি অস্থায়ী শৌচালয় করেছি। তাঁরা হয়তো বিষয়টি জানতে পারেনি। পাশের আশ্রমে আরও ১২টি শৌচালয় রয়েছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, নিশ্চয়ই জানিয়ে দিতাম। যোগাযোগ না করে গঙ্গায় শৌচকর্ম করাটা ঠিক নয়।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘শৌচাগারের বিষয়টি পুরসভার দেখার কথা। গঙ্গাদূষণের বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kumbh Mela Tribeni

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy