Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রাজ্যপালকে মানুষই জবাব দেবেন: মমতা

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, গায়ের জোরে কেউ কিছু করতে গেলে রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক ভাবে লড়াই হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০৫:৪৩
Share: Save:

তাঁর ডাকা বুধবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে উপাচার্যদের অনুপস্থিতির জন্য ব্যবস্থাগ্রহণ নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যে-মন্তব্য করেছেন, তার জেরে রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের দ্বৈরথ আবার তীব্র হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নবান্নে জানান, রাজ্যপালের সঙ্গে উপাচার্যদের বৈঠক হবে কি না, সেটা উচ্চশিক্ষা দফতরের বিষয়। উচ্চশিক্ষা দফতর যা জানানোর জানিয়েছে। উপাচার্যেরাও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিধি উল্লেখ করে রাজ্যপালকে উত্তর দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘রোজ রোজ এক কথা কত বার?’’

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, গায়ের জোরে কেউ কিছু করতে গেলে রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক ভাবে লড়াই হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। মানুষ রাজ্যপালকে উত্তর দিতে প্রস্তুত। দৃশ্যতই বিরক্ত মমতা বলেন, ‘‘মহামান্য রাজ্যপাল মহাশয়, প্রতিদিন মনে হয়, আপনাকে কোটি বার প্রণাম করতে যেতে হবে! নির্বাচিত লোকেরা কি চাকরবাকর হয়ে গিয়েছে?’’

এর আগে রাজ্যপাল এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের সমস্যা বুঝতে এবং তার সমাধানের জন্য উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তাতে তো একেবারে যুদ্ধ লেগে গিয়েছে! মাথায় যেন ছাদ ভেঙে পড়েছে। ভাবা যায়! শিক্ষা তো রাজনীতির খাঁচায় বন্দি।’’ তাঁর বক্তব্য, উপাচার্যদের সঙ্গে আচার্যের বৈঠক প্রসঙ্গে যে-বিধির কথা বলা হচ্ছে, তা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আর আইনও সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়। ধনখড়ের অভিযোগ, ‘‘এই ব্যাপারে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু ছ’মাসে তার কোনও জবাব পাইনি।’’

আরও পড়ুন: ৩২-এ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বৌমার প্রেরণা শাশুড়িই

ধনখড় জানান, উপাচার্যদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে রাজ্য আপত্তি করেছে। তিনি বৈঠকে না-থাকার কারণ জানতে চাইবেন উপাচার্যদের কাছে। সন্তুষ্ট না-হলে পদক্ষেপ করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ২০১৭ সালের সংশ্লিষ্ট আইন এবং তার ভিত্তিতে তৈরি ২০১৯ সালে বিধির উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এই দুই ক্ষেত্রেই তদানীন্তন রাজ্যপালের সম্মতি ছিল।’’ ওই বিধি অনুযায়ী রাজ্যপাল উপাচার্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে করতে হবে। কিন্তু রাজ্যপাল সরাসরি উপাচার্যদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। বিষয়টি যে শিক্ষা দফতর মারফত জানানোর কথা, চিঠি লিখে উপাচার্যেরা সেটা জানিয়ে দেন রাজ্যপালকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয়েছিল, উপাচার্যেরা বৈঠকে না-গেলে পরিণতি বিস্ফোরক হবে। ভয়ঙ্কর কথা! কী করবেন আপনারা? বলা হয়েছে, উপাচার্যেরা নাকি ট্রেড ইউনিয়ন করছেন!’’

আরও পড়ুন: নিজেকে সামলান, ধনখড়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারির আঙুল তুললেন মমতা

এর পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে বলব, ভিসিদের সম্মান করুন। ভিনডিক্টভলি কিছু করলে বাংলা গর্জে উঠবে। বাংলার আন্দোলনের ধারা আছে।’’

ভর্তি-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যপাল এ দিন বলেন, ‘‘নতুন শিক্ষাবর্ষে কলেজে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের যেন টাকা দিতে না-হয়।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে অনলাইনে ভর্তি হয়। উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ বিভিন্ন রাজ্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন। জামিয়া মিলিয়া, জেএনইউ-সহ অন্য জায়গায় ছাত্রদের সঙ্গে কী আচরণ করা হয়? যাদবপুরের ঘটনা কোন পর্যায়ে গিয়েছিল? শিক্ষায় বাংলা এক নম্বরে। অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না।’’ মমতা প্রশ্ন তোলেন, তিনি ক’দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিরক্ত করেছেন? ক’দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতা দেখাতে গিয়েছেন? বিশ্বভারতীতে ক’দিন গিয়েছেন? তিনি বলেন, ‘‘সবাই ডাকে। কিন্তু আমি নাক গলাই না।’’

রাজ্যপালকে মমতার পরামর্শ, সম্মান নিয়ে প্রত্যেককে কাজ করতে দিন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যসচিব বলবেন, আইন কী। আমি আইন মেনে কাজ করব। শুভবুদ্ধির উদয় হোক। বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি কম দিন করছি না। রেল-সহ অনেক দফতরের মন্ত্রী ছিলাম। আমরা লজ্জিত মর্মাহত। এ-সব বন্ধ হোক।’’

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে

ধনখড় কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শো-কজ় করায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উনি ডিসমিস করার কে? ভিসি-কে শো-কজ় করে উনি শুধু ভিসি নন, রাজবংশী এবং উত্তরবঙ্গের মানুষকে অসম্মান করেছেন। কিছুতেই ডিসমিস করতে পারেন না। কারণ, আইন ওঁর হাতে নেই। উপাচার্যদের চিন্তার কারণ নেই। সকলেই সম্মাননীয়। আগেও হস্তক্ষেপ করতাম না। আজও করব না। একশো ভাগ তাঁদের সমর্থনে আছি।’’ চূড়ান্ত বর্ষ ও চূড়ান্ত সিমেস্টারের মূল্যায়ন নিয়ে ইউজিসি-র ২৯ এপ্রিলের নির্দেশিকা রূপায়ণের অনুরোধ করে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, তারও উল্লেখ করেন মমতা।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল মায়াকান্না কাঁদছেন। তা না-করে ছাত্রছাত্রীদের জীবনের সুরক্ষার কথা ভেবে উনি ইউজিসি-র সঙ্গে কথা বলুন। রাজভবনের সচিবালয় থেকে যে-ভাষায় উপাচার্যদের চিঠি লেখা হচ্ছে, তা অত্যন্ত অসম্মানজনক।’’

কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী টুইটে লেখেন, ‘রাজ্যপাল উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করলে আকাশ ভেঙে পড়ত না। পড়ুয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। রাজ্যপাল সংবিধান না-মানলে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করতে পারেন।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Mamata Banerjee Jagdeep Dhankhar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE