Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Madhyamik 2020

৩২-এ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বৌমার প্রেরণা শাশুড়িই

বিয়ের পরে ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়েছিল। ঘরের কাজ সামলে রাত জেগে পড়েছেন। 

ছেলের সঙ্গে অমৃতা সানা।  নিজস্ব চিত্র

ছেলের সঙ্গে অমৃতা সানা। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

ঘরে টিমটিম করে জ্বলছে একটি বাল্ব। রাত জেগে পড়ছেন বৌমা। পাশে বসে শাশুড়ি। রোজ রাতে এটাই ছিল পান্ডুয়ার তালবোনা কলোনির অমৃতা সানার ঘরের ছবি। বত্রিশে পৌঁছে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন বৌমা অমৃতা। পেয়েছেন ৩৭৬ নম্বর। চওড়া হাসি শাশুড়ি দুর্গারানি সানার মুখে। বললেন, ‘‘বৌমা পড়তে চাইলে আরও পড়াব।’’ আর বৌমা বলছেন, ‘‘শাশুড়ির অনুপ্রেরণায় সফল হলাম। আরও বেশি নম্বর পাব উচ্চমাধ্যমিকে।’’

পারিবারিক অনটনে পূর্ণচ্ছেদ পড়েছিল অমৃতার পড়াশোনায়। কিন্তু মন থেকে তা মেনে নিতে পারেননি তিনি। বিয়ের পরে ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়েছিল। ঘরের কাজ সামলে রাত জেগে পড়েছেন।

পান্ডুয়া ব্লকের তালবোনা কলোনিতে অমৃতার শ্বশুরবাড়ি। টিন ও বাঁশের বেড়ার দেওয়াল। মাথায় টিনের ছাউনি। অভাবের সংসার। ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমার পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হয়নি,’’ বললেন অমৃতা। পান্ডুয়ার সিমলাগড়ের গোয়ারা গ্রামে জন্ম তাঁর। সংসারে অভাব থাকায় বাবা-মা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির মামাবাড়িতে। ‘‘মামাবাড়িতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। তার পর পান্ডুয়া ফিরে আসি। অভাবের কারণে আর পড়া হয়নি,’’ বললেন অমৃতা।

আরও পড়ুন: পুজোয় বঙ্গে করোনা রোগীর সংখ্যা ১.৬৮ লাখেরও বেশি? আশঙ্কায় আইআইএসসি

একুশে পড়তেই অমৃতার বিয়ে হয়ে যায় তালবোনা কলোনির প্রবীর সানার সঙ্গে। স্বামী গাড়িচালক। শ্বশুর রমেন্দ্র সানার কিছু চাষের জমি রয়েছে। অমৃতা বলেন, ‘‘বিয়ের পরে ফের পড়ার ইচ্ছা জাগে। ভর্তি হই ভিটাসিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘রাতে আমি যখন পড়তাম, তখন জেগে থাকতেন শাশুড়ি। পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহ দিতেন। পড়াশোনার সব খরচই জুগিয়েছে শ্বশুরবাড়ি।’’

উচ্চ মাধ্যমিকে আরও বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করতে চান অমৃতা। তাঁর শাশুড়ি বলেন, ‘‘আমাদের একটাই ছেলে। মেয়ে নেই। বৌমাই আমাদের মেয়ে। ছেলে তো সংসারের চাপে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি। বৌমা নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক পাশ করেছে। এটাই আমাদের কাছে আনন্দের বিষয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘ভোরে উঠে পড়তে বসত বৌমা। সকাল ৯টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে ঘরের কাজে হাত দিত। তারপর স্কুল। ফিরে ফের ঘরের কাজ। রাত সাড়ে ১০টায় ফের পড়তে বসত। অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করত। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে ফের পড়তে বসত।’’ অমৃতার স্কুলের শিক্ষিকা স্বপ্না রায়চৌধুরী সান্যাল বলেন, ‘‘ও সংসার সামলে স্কুলে আসত। তাই ওর পড়াশোনায় আমরা বাড়তি নজর দিতাম। ওর সাফল্য আমাদের কাছে খুব গর্বের বিষয়।’’

আরও পড়ুন: নিজেকে সামলান, ধনখড়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারির আঙুল তুললেন মমতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik 2020 Pandua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE