Advertisement
E-Paper

গরিমা হারানোর বিষাদেই বিদায়

দেশের প্রথম নাগরিক হিসাবে জঙ্গিপুরে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই শেষ কর্মসূচির মধ্যে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আদল নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু নেপথ্যের সব কিছু ছাপিয়ে এক বাঙালি রাষ্ট্রপ্রধানের পুরনো পাড়া ছেড়ে যাওয়ার আবেগটাই যেন বেজে গেল সারাক্ষণ।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৯

একসঙ্গে তিনটে হেলিকপ্টার জঙ্গিপুরের আকাশে আর কখনও দেখা যাবে কি না, জানি না। মহামহিম, আপনার জন্য জঙ্গিপুরের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

গোটা এলাকার মানুষের তরফে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখরুজ্জামান। রাষ্ট্রপতিও তখন দৃশ্যতই ঈষৎ আবেগাপ্লুত। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে সাংসদ হিসাবে জঙ্গিপুরকে বিদায় আগেও জানিয়েছেন। কিন্তু এ বারেরটা অন্য রকম। রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে নেহাত ভবঘুরে চেহারার আম আদমির সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করে শনিবার যখন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শেষ বার ‘জঙ্গিপুর ভবন’ ছেড়ে যাচ্ছেন, শুভানুধ্যায়ীদের জটলা থেকেই প্রশ্নটা এল। আবার কবে আসবেন? বিদায়ী গৃহকর্তা জানিয়ে গেলেন, মাস ছয়েকের মধ্যে পারবেন না। তবে তার পরে সাধারণ নাগরিক হিসাবে আসবেন।

দেশের প্রথম নাগরিক হিসাবে জঙ্গিপুরে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই শেষ কর্মসূচির মধ্যে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আদল নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু নেপথ্যের সব কিছু ছাপিয়ে এক বাঙালি রাষ্ট্রপ্রধানের পুরনো পাড়া ছেড়ে যাওয়ার আবেগটাই যেন বেজে গেল সারাক্ষণ। সেনাছাউনির হেলিপ্যাডের দিকে রাষ্ট্রপতির কনভয় বেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু সময় পরে ভাঙা হাটের মধ্যে সরকারি এক কর্মী বলছিলেন, “ওঁর জন্য বাড়ির মাথায় জাতীয় পতাকা লাগাতে হতো। এই যে খুলে নিয়ে যাব, আর লাগাতে হবে না।” সাধারণ, সরকারি কর্তব্য। তবু তার মধ্যেই কোথাও যেন একটা গরিমা হারানোর বিষাদ।

জঙ্গিপুরের বাড়িতে বসেই রাষ্ট্রপতি এ দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হওয়া প্রকল্পের আওতায় বেছে নেওয়া ১০ জনের হাতে তুলে নিয়েছেন এলপিজি সংযোগ। হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও। সে সব সেরে জঙ্গিপুর ছাড়ার আগে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ, এই সফরে যাঁরা তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন, চাইতে এলে প্রত্যেকের হাতে যেন সেই ছবি তুলে দেওয়া হয়।

আম দরবারের মূল কাজটা অবশ্য হয়েছে আগের রাতেই। ম্যাকেঞ্জি পার্কে তাঁর প্রয়াত পিতার নামে ফুটবল ম্যাচের আসরেই একপ্রস্ত বিদায় সংবর্ধনা জাতীয় আবহ ছিল। সন্ধ্যার পরে বাড়িতে ফিরে এক তলায় আম দরবার খুলে বসে ছিলেন প্রণববাবু। খাতায় শুধু নাম লিখিয়ে আর নিরাপত্তার খাতিরে তল্লাশি পেরোলেই পৌঁছনো যাচ্ছিল রাষ্ট্রপতির দরবারে। আর রাষ্ট্রপতি পদের গাম্ভীর্যের আড়ালে মানুষটা যে আদ্যন্ত রাজনীতিক, সেই পুরনো মেজাজটাও বেরিয়ে আসছিল বারেবারে। বিধায়ক আখরুজ্জামান, আবু হেনা, আশিস মারজিতেরা ছিলেন। কিন্তু কোথায় সূতির ব্লক কংগ্রেসের নেতা, কোথায় নলহাটির পুরনো কর্মী— এমন সব নানা হারিয়ে যাওয়া মুখের সঙ্গে চলেছে আড্ডার আসর।

এই ‘তোমাদেরই লোক’ মার্কা বার্তা আর সাংসদ-পুত্রের হাতে এলাকার ভার রেখে শেষ বারের মতো জঙ্গিপুরের আকাশে উড়ল হেলিকপ্টারের বলয়!

Pranab Mukherjee President জঙ্গিপুর Jangipur আখরুজ্জামান প্রণব মুখোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy