Advertisement
E-Paper

বিরিয়ানির টেবিলেই ছক আশিকদের

চায়ের কাপে অফুরান তুফান উঠেছে চা আবিষ্কারের পর থেকেই। আজও উঠছে। বিরিয়ানি খেতে খেতে তার থেকে অনেক বেশি কিছু হতে পারে। এমনকী সন্ত্রাসবাদী হামলা, ব্যক্তিহত্যার ষড়যন্ত্রও!

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৮

চায়ের কাপে অফুরান তুফান উঠেছে চা আবিষ্কারের পর থেকেই। আজও উঠছে। বিরিয়ানি খেতে খেতে তার থেকে অনেক বেশি কিছু হতে পারে। এমনকী সন্ত্রাসবাদী হামলা, ব্যক্তিহত্যার ষড়যন্ত্রও!

ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধৃত আশিক আহমেদের বয়ানে অন্তত সেই বিরিয়ানি-ছক পরিষ্কার। আশিকের সব চেয়ে প্রিয় খাবার মাটন-বিরিয়ানি। কাঁকসার মেসে থাকার সময়ে মাঝেমধ্যেই সে পানাগড়ের একটি রেস্তোরাঁয় যেত বিরিয়ানি খেতে। সেখানেই এক ইউনানি চিকিৎসকের সঙ্গে তার আলাপ। সেই চিকিৎসকই কাঁকসার পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র আশিককে জানিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে আইএস জঙ্গি সংগঠন

নাশকতায় নামলে লোকবল বা অর্থবলের অভাব হবে না। এমনকী লোকজন দিয়ে সে নিজেই সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল ওই ডাক্তার। হুগলির ধনেখালির আশিককে জেরা করে এই তথ্য মিলেছে বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র দাবি।

১৭ মার্চ আশিককে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। তবে তার প্রায় ২৪ দিন আগে, ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে গোয়েন্দারা তাকে লাগাতার জেরা করে আসছেন। আশিককে এনআইএ ধরে নিয়ে গিয়েছে, এই খবর চাউর হওয়ার পর থেকে ওই ইউনানি ডাক্তারের আর কোনও খোঁজ মিলছে না। টানা জেরার সূত্রে গোয়েন্দাদের দাবি, প্রাথমিক ভাবে হুগলির এক বিধায়ককে খুনের পরিকল্পনা ছিল আশিকদের। ওই বিধায়কের নাম একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে গিয়েছিল, যাতে গোষ্ঠী-স্বার্থ বিপন্ন হয়েছে বলে মনে করেছিল আশিকেরা।

শুধু কৃতকর্ম কবুল করাই নয়, কলেজছাত্রটি অনুশোচনাতেও ভুগছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। এনআইএ সূত্রের খবর, আশিক যে-ভাবে নিজের ভুল স্বীকার করে অনুশোচনা করছে, তাতে তাকে দিল্লিতে আইএস সংক্রান্ত মামলায় রাজসাক্ষী করা হতে পারে। এক এনআইএ-কর্তার কথায়, ‘‘হুগলির বাসিন্দা এবং বর্ধমানের কাঁকসার পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র আশিককে আমরা রাজসাক্ষী করব বলে ঠিক করে ফেলেছি। সে প্রাথমিক ভাবে রাজিও হয়েছে। আমরা এখন সেই অনুযায়ী এগোচ্ছি।’’

দিল্লিতে মামলাটি (এনআইএ কেস নম্বর আরসি-১৪/২০১৫) রুজু করা হয়েছিল গত বছর। ওই মামলাতেই চলতি বছরের ২২ এবং ২৩ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২০ জনেরও বেশি যুবককে গ্রেফতার করে এনআইএ। আইএসের মদতে তারা জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ধৃতদের মধ্যে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান,

মুম্বইয়ের মুদাব্বের মুশতাক শেখ এবং গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক প্রধান, কর্নাটকের মহম্মদ নাফিস খানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আশিকের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এমনকী আশিক কাঁকসার যে-মেসে থাকত, গত জানুয়ারিতে নাফিস সেখানে এক রাত কাটিয়েও গিয়েছে।

গোয়েন্দাদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন-তখন, যেখানে-সেখানে বসে আশিক যাতে তাদের সঙ্গে ‘চ্যাট’ করতে পারে, তার জন্য ১৯ বছরের ওই ছাত্রকে সাত হাজার টাকার একটি অ্যানড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছিল নাফিস। আশিক বিরিয়ানি খেতে খেতে আলাপ হওয়া ইউনানি ডাক্তারের কথা নাফিসকে জানালেও তার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পারেনি। তবে মুর্শিদাবাদে রাজমিস্ত্রির কাজে যুক্ত ‘বানি’ নামে এক যুবক সেই সময়ে আশিকের মধ্যস্থতায় নাফিসের সঙ্গে দেখা করেছিল। এনআইএ-র খবর, ওই যুবক নাফিসকে জানায়, নাশকতা চালাতে গেলে বোমার দরকার এবং মুর্শিদাবাদে ভাল মানের বোমা বানানোর লোক আছে। ওই সব মারণাস্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা সে-ই করবে বলে নাফিসকে জানিয়েছিল ওই যুবক। বানির সঙ্গে আশিকের আলাপ বাচ্চু নামে ধনেখালির এক যুবকের মাধ্যমে। এই ক্ষেত্রে নাম উঠেছে আলিফ নামে ওই এলাকার অন্য যুবকেরও। বানি, বাচ্চু আর আলিফ তিন জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় এনআইএ।

এনআইএ-র দাবি, আশিকদের সঙ্গে দেখা করে নাফিস কিছুটা আশাহতই হয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছে। কারণ, বড় কিছু ঘটানোর পক্ষে অপরিণত ছিল আশিক। সেই জন্য আপাতত ব্যক্তিহত্যার দিকেই তাদের নজর দিতে বলেছিল নাফিস।

plot dinning table
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy