Advertisement
E-Paper

ছড়াচ্ছে গুজব, হিমশিম পুলিশও

এ দিন শ্যামপুরের রাধাপুরে দুই মহিলাকে চোর সন্দেহে বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এ দিনই রাধাপুর লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার মায়াচর থেকে শ্যামপুর থানার পুলিশ এক মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় আনে। তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে মারধর করছিল গ্রামবাসীরা।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৯
উদ্যোগ: রাধাপুরে বিক্ষোভ গ্রামবাসীর (উপরে) গুজব রুখতে হ্যান্ডবিল বিলি পুলিশের (নীচে) নিজস্ব চিত্র

উদ্যোগ: রাধাপুরে বিক্ষোভ গ্রামবাসীর (উপরে) গুজব রুখতে হ্যান্ডবিল বিলি পুলিশের (নীচে) নিজস্ব চিত্র

হ্যান্ডবিল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইকে প্রচার চলছে গুজবের বিরুদ্ধে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না কো‌নও কিছুতেই। হাওড়া জেলা জুড়ে গুজব ছড়িয়ে অচেনা মহিলা ও পুরুষকে ধরে মারধর ও হেনস্থা চলছেই। সোমবারই তিন মহিলাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ দিন শ্যামপুরের রাধাপুরে দুই মহিলাকে চোর সন্দেহে বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এ দিনই রাধাপুর লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার মায়াচর থেকে শ্যামপুর থানার পুলিশ এক মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় আনে। তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে মারধর করছিল গ্রামবাসীরা। রবিবার সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়ার গঙ্গারামপুর থেকে দুই যুবককে পুলিশের সাহায্যে উদ্ধার করে আনেন তাঁদের অভিভাবকরা। তাঁদের দু’জন‌কেও ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ মধুসূদন খান নামে এক ব্যক্তির ঘরে দুই মহিলাকে দেখতে পাওয়া যায়। ঘরে মধুসূদনবাবু বা তাঁর ছেলে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী দুই মহিলাকে দেখে চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশো গ্রামবাসী জড়ো হয়ে দু’জনকে বেঁধে মারধর করতে থাকে। দুই মহিলা দাবি করেন, তাঁরা চোর নন, ভিক্ষা করতে এসেছেন। কেউ শোনেননি সে সব কথা।

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকারই কিছু মানুষ হামলাকারীদের হাত থেকে ওই দু’জনকে ছাড়িয়ে এনে রাধাপুর পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকিয়ে দেন। তাঁদের আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই সেখানে জমা হয়ে যান কয়েক হাজার মানুষ। তাঁরা বলতে থাকেন, ওই দুই মহিলা কিডনি কেটে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছেন। পুলিশ আসার পরও ওই দুই মহিলাকে ‘জনতা’র হাতে তুলে দেওয়ার দাবি ওঠে।

শেষ পর্যন্ত পুলিশের পদস্থ কর্তাদের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী ও র‌্যাফ গিয়ে ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় আনে। প্রায় একই সময়ে মায়াচরেও এক মহিলাকে ছেলেধরা সন্দেহে আটকে রেখে মারধর করার খবর আসে। মহিষাদল থানা থেকে শ্যামপুর থানাকে ফোন করে জানানো হয় রূপনারায়ণে ভাটা চলায় নৌকা চলতে পারছে না। দেরি না করে শ্যামপুর থানা যেন ওই মহি‌লাকে উদ্ধার করে আনে। রাধাপুর থেকে মায়াচরে গিয়ে শ্যামপুর থানার পুলিশ ওই মহিলাকে থানায় আনে।

দু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ জানিয়েছে, গুজব রটিয়ে মারধর করা হচ্ছিল মহিলাদের। এ দিন বাগনানের দেওয়ানতলায়ও কিডনি পাচারচক্রের সদস্য অপবাদ দিয়ে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে।

রবিবার সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়ার গঙ্গারামপুরে দুই যুবককে ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও দুই যুবককে ছেলেধরা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। দু’জনেরই বাড়ি ওই এলাকা থেকে কিছুটা দূরে কালশাপা গ্রামে। পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলে হামলাকারীরাও থানায় যায়। দুই যুবকের বাড়ির লোক পুলিশকে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড দেখিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যান। অভিযোগ, থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়ের সামনেও সচিত্র পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য হন ওই দুই যুবকের পরিবারের লোকজন।

অভিযোগ, সাঁকরাইল, বাউড়িয়া প্রভৃতি থানা এলাকাতেও এ ভাবে গুজবের জেরে চলছে মারধর। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সপ্তাহখানেক ধরেই ‘ছেলেধরা’ ‘চোর’ ‘কিডনি পাচারচক্রের সদস্য’ এইসব অপবাদ দিয়ে অচেনা মহিলা ও পুরুষদের ধরে মারধর ও হেনস্থার ঘটনা ঘটছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানা এলাকায় মাইকে প্রচার করে এইসব গুজবে কান না দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়। ছড়ানো হয়েছে হ্যান্ডবিল। তার প্রতিলিপি ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এ দিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তারপরেও এই ঘটনা কমছে না!

গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে সুপরিকল্পিত ভাবে হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছেলেধরা, চোর, কিডনি পাচার চক্রের নামে গুজব রটানো হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে আবার কিছু মানুষ তাতে মদত দিচ্ছে। ফলে মারধর ও হেনস্থা বন্ধ করার ক্ষেত্রে পুরো সফল হওয়া যাচ্ছে না। জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের জানিয়ে বলেছেন, ‘‘হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি আমরা আরও প্রচার চালাব।’’ জগৎবল্লভপুরে সোমবারই গুজব রটিয়ে এক যুবককে মারধরের অভিযোগে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

রাধাপুরের ঘটনার পরে পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনও সক্রিয় হচ্ছে শ্যামপুর ১ ব্লকে। বিডিও সঞ্চয়ন পান বলেন, ‘‘এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। সেই কারণে মাইক প্রচার চালানো যাবে না। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, পঞ্চায়েত সদস্য এবং স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাধ্যমে গ্রামে প্রচার চালানো হবে। কোনও গুজব রটলেই গ্রামবাসীরা যেন পুলিশ ও প্রশাসনকে খবর দেন সে কথা গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’’

Police Lynching Rumours
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy