Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তোলাবাজি ভর্তিতে, গ্রেফতার এবিভিপি সদস্যও

ভর্তির জন্য টাকা তোলার অভিযোগে মঙ্গলবার কলকাতা ও উত্তরপাড়ায় তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে ধরা পড়লেন আট জন। কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা এ দিন শেখ জসিমুদ্দিন (২০) নামে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।

ধৃত এবিভিপি সদস্য সঞ্জুর ফেসবুকের ছবি।

ধৃত এবিভিপি সদস্য সঞ্জুর ফেসবুকের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫০
Share: Save:

স্নাতক স্তরে ভর্তির নামে তোলাবাজির রোগ শুধু কলকাতা নয়, ছড়িয়ে পড়ছে শহরতলি, মফস্‌সলের কলেজেও। শুধু তা-ই নয়, এত দিন অভিযোগ উঠছিল শুধু শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। এ বার নাম জড়াল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি-রও।

ভর্তির জন্য টাকা তোলার অভিযোগে মঙ্গলবার কলকাতা ও উত্তরপাড়ায় তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে ধরা পড়লেন আট জন। কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা এ দিন শেখ জসিমুদ্দিন (২০) নামে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, এক ছাত্রীকে সুরেন্দ্রনাথ, বঙ্গবাসী বা সিটি কলেজে জীববিদ্যা অনার্সে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন জসিমুদ্দিন। এ দিন তাঁকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে একটি সিনেমা হলের সামনে ওই ছাত্রীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয়। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা জসিমুদ্দিন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের একটি হস্টেলে থাকতেন।

ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগে এ দিনই উত্তরপাড়ার প্যারীমোহন কলেজের ভিতর থেকে সঞ্জু সিংহ ও শুভ্র অধিকারী নামে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। সঞ্জু ওই কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং এবিভিপি-র সদস্য। শুভ্র এ বারেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই চক্রে আরও কেউ জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: ছাত্রদশা পার, তবু তাঁদেরই হাতে সংগঠন

পুলিশ জানায়, বেগমপুরের বাসিন্দা শুভ্রের অভিযোগ, প্যারীমোহন কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য সঞ্জু তাঁর কাছে টাকা চান। সেই সঙ্গে বলা হয়েছিল, আরও প্রার্থী ‘ধরে আনতে’ পারলে শুভ্রের টাকা কিছুটা কম করে দেওয়া হবে। সেই জন্যই তিনি আরও কয়েক জনের কাছে টাকা চেয়েছিলেন।

আর সঞ্জু পুলিশকে বলেন, ‘‘আমাকে ওরা ভর্তি করিয়ে দিতে বলেছিল। বলেছিলাম, চেষ্টা করব। কিন্তু টাকার কোনও কথা হয়নি।’’ তবে তাঁর বিজেপি-যোগ নিয়ে সংশয় নেই। সঞ্জুর ফেসবুক প্রোফাইলেও বিজেপির উত্তরীয় গায়ে, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর নানা ছবি পাওয়া গিয়েছে। তা স্বীকার করেছে বিজেপি-ও। দলের শ্রীরামপুর সাংগঠনিক মণ্ডলের সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুনেছি সঞ্জু এবিভিপি করেন। কিন্তু অভিযোগটি মিথ্যা। তৃণমূল সর্বত্র টাকা তুলছে, সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই আমাদের ছাত্র সংগঠনের সদস্যকে ফাঁসানো হল।’’

প্যারীমোহন কলেজের অধ্যক্ষ সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের জড়িত থাকার কথা নয়। সঞ্জুকে চিনি না। খোঁজ নিচ্ছি।’’

পুলিশি সূত্রের খবর, টাকা নিয়ে ভর্তির অভিযোগে শুধু কলকাতায় এ-পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে জয়পুরিয়া কলেজের টিএমসিপি-র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তিতান সাহা ছাড়াও আছেন শ্রীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের চার পড়ুয়া। প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই ছাত্রনেতা। কিন্তু ধরপাকড় শুরু হতেই তাঁরা শহর ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় গা-ঢাকা দিয়েছেন। তল্লাশি চলছে।

অভিযোগ এসেছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের গ্রুপ-ডি কর্মী রাতুল ঘোষের নামেও। তাঁর ঘরে তল্লাশি চালিয়ে অ্যাডমিট কার্ড, ভর্তির ফর্ম-সহ কিছু নথি মিললেও কলেজ-কর্তৃপক্ষ ওই কর্মীকে এখনই অভিযুক্ত বলতে নারাজ। তাঁকে চিঠি দিয়ে সাত দিনের মধ্যে সব জানতে চেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনই শো-কজ নোটিস দিতে চাইছেন না কর্তৃপক্ষ।

সকালে বাঘা যতীনের সম্মিলনী কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া দেখতে যান পূর্ত ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এক ছাত্রীর অভিভাবক মন্ত্রীকে জানান, তাঁর মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে কলেজেরই কিছু পড়ুয়া টাকা চাইছেন। মন্ত্রী বিষয়টি দেখার জন্য সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Admission Extortion Bribe ABVP TMCP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE