Advertisement
E-Paper

রাতে তিন দফায় সুচেতার বাড়িতে পুলিশ

রাত তখন সওয়া ১১টা। শ্রীরামপুর থানা থেকে গাড়ি এসে পৌঁছল দুর্গাপুরের বিধাননগরে সুচেতা চক্রবর্তীর আবাসনের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে ভিড় করে থাকা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করল পুলিশ। তবে গাড়ি থেকে নামানো হল না সুচেতাদেবী ও তাঁর মেয়ের দেহ ব্যাগে ভরে মাঝগঙ্গায় ফেলতে গিয়ে শেওড়াফুলিতে ধৃত ব্যাঙ্ক-কর্তা সমরেশ সরকারকে।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৩
শনিবার রাতে সুচেতার আবাসনের সামনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। ছবি: বিকাশ মশান।

শনিবার রাতে সুচেতার আবাসনের সামনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। ছবি: বিকাশ মশান।

রাত তখন সওয়া ১১টা। শ্রীরামপুর থানা থেকে গাড়ি এসে পৌঁছল দুর্গাপুরের বিধাননগরে সুচেতা চক্রবর্তীর আবাসনের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে ভিড় করে থাকা বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করল পুলিশ। তবে গাড়ি থেকে নামানো হল না সুচেতাদেবী ও তাঁর মেয়ের দেহ ব্যাগে ভরে মাঝগঙ্গায় ফেলতে গিয়ে শেওড়াফুলিতে ধৃত ব্যাঙ্ক-কর্তা সমরেশ সরকারকে।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বললেও শনিবার রাতে সেই সময়ে আবাসনে ঢোকেনি পুলিশ। ভিড় এড়াতে রাত ১২টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে চলে যায় বিধাননগর ফাঁড়িতে। সেখানে গিয়ে সমরেশবাবুর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেখানে বসেও তিনি দাবি করতে থাকেন, খুন তিনি করেননি। কিন্তু এই ঘটনার জন্য তাঁর চাকরি চলে যাবে, বারবার সেই আক্ষেপ করেন।

সেই রাতে ঘণ্টা দেড়েক পরেই ফের সুচেতাদেবীর সামনে হাজির হয় পুলিশের গাড়ি। তখন আর আগের মতো ভিড় নেই। হাতে গ্লাভস পরে আবাসনের বাইরের দরজার তালা খুলে ভিতরে চলে গেলেন পুলিশের আধিকারিক ও কর্মীরা। মিনিট কুড়ি পরে বেরিয়ে এসে আবাসনের পিছনে নর্দমা পরীক্ষা করতে গেলেন তাঁরা। তবে আধো-অন্ধকারে তেমন কিছু বোঝা গেল না। এ বারও গাড়ি থেকে নামানো হয়নি সমরেশবাবুকে। রাত ৩টে নাগাদ ফের ওই আবাসনে আসে পুলিশের ৫-৬টি গাড়ি। এ বারও অভিযুক্তকে গাড়িতে রেখেই পুলিশ আবাসনের সামনে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু আলাপ-আলোচনা সেরে ফিরে যায় পুলিশ, ভিতরে আর ঢোকেনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সমরেশ প্রথমে দেহাংশ ভরা ব্যাগগুলি নিয়ে ট্রেনে করে দুর্গাপুর ছাড়ার কথা বললেও আদতে সে গিয়েছিল একটি গাড়িতে করে। সেই গাড়ি তাঁকে বর্ধমান পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসে বলে পরে জেরায় জানা গিয়েছে, দাবি পুলিশের। শনিবার সুচেতাদেবীর প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন, রাতে একটি অটো চড়ে আসতেন সমরেশবাবু। পুলিশ জেনেছে, মামরা বাজারের বাসিন্দা মহম্মদ নিয়াজউদ্দিন ওরফে সান্টু নামে সেই অটোচালককেই গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিলেন সমরেশবাবু। প্রথমে অটো পাঠানোর কথা বলেও পরে জানান, গাড়ি চাই। পুলিশ জানায়, শনিবার ভোরে সেই গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন চালক, সঙ্গে ছিলেন সান্টুও। সান্টু ভেবেছিলেন, দুর্গাপুর স্টেশনে যেতে হবে। কিন্তু বর্ধমানে ছেড়ে আসার জন্য জোর করতে থাকেন সমরেশবাবু। শেষে মেনে নেন সান্টু। রবিবার সান্টু ও গাড়ির চালককে শ্রীরামপুরে আদালতে জবানবন্দি দিতে পাঠায় পুলিশ।


এই গাড়িতেই ব্যাগ নিয়ে সমরেশ দুর্গাপুর থেকে বর্ধমান পর্যন্ত গিয়েছিলেন বলে জেনেছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

সুচেতাদেবীর আবাসনে যে পাখা চলছে, শনিবার বাইরে থেকে তা বোঝা গিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে ভিতরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, একটি তোয়ালে শুকোচ্ছে। পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, রক্তের দাগ মুছে ফিনাইল দিয়ে ঘর পরিষ্কার করে তোয়ালে কেচে তিনিই শুকোতে দিয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, ভিতরে ফিনাইলের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। তবে ভিতরে খুব ধারালো কোনও অস্ত্র মেলেনি। পরে ফরেন্সিক পরীক্ষায় যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে জন্য ঘরের ভিতরে জিনিসপত্র ঘেঁটে দেখা হয়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে পরীক্ষা করা হয় একটি চৌবাচ্চা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে দুর্গাপুরে একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, পরে বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন সুচেতা। তাঁর আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের ধারণা, স্কুল শিক্ষক শ্রুতিধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ের পরে বাদুড়িয়ার শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর কর্মস্থল বসিরহাটে মানিয়ে নিতে পারেননি শিল্পশহরে বড় হওয়া সুচেতা। মেয়েও দুর্গাপুরে বড় হোক, চাইতেন তিনি। মেয়েকে ভর্তি করেছিলেন অমরাবতীর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। বাবা মারা যাওয়ার পরে একমাত্র সন্তান হিসেবে বিধাননগরের সরকারি আবাসনটির মালিকও হয়ে যান তিনি। কোনও কারণে স্বামীর সঙ্গে দূরত্বও বাড়তে থাকে। শেষে দুর্গাপুরেই পাকাপাকি থাকার সিদ্ধান্ত নেন সুচেতা। গত কয়েক মাস ধরে সমরেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

তবে সম্প্রতি সমরেশবাবুর সঙ্গে সুচেতার সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল বলে মনে করছেন প্রতিবেশীরা। আর্থিক টানাটানিও শুরু হয়েছিল। কারণ, ইদানীং তিনি চাকরির চেষ্টা করছিলেন। শিক্ষাগত শংসাপত্র শ্বশুরবাড়ি থেকে আনার ব্যাপারে দেখা করেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর লাহার সঙ্গেও। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এমন ঘটনা।

Sucheta Durgapur murder police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy