Advertisement
E-Paper

বাগে পেয়েও ছেড়ে দিয়ে বিপাকে পুলিশ

আইটিআই প্রবেশিকার প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে নজরে এ বার কল্যাণী থানা। ওই ঘটনায় সেখানকার অফিসার ও কর্মীদের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন পুলিশকর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:২২
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

আইটিআই প্রবেশিকার প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে নজরে এ বার কল্যাণী থানা। ওই ঘটনায় সেখানকার অফিসার ও কর্মীদের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন পুলিশকর্তারা।

প্রশ্নপত্র যে ফাঁস হয়ে গিয়েছে, পরীক্ষার আগের দিনই পুলিশ তা জানতে পেরেছিল। এমনকী সেই ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু কব্জা করেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কেন, তার জবাব মিলছে না। সেই ব্যাপারে কল্যাণী থানার আইসি-র কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন নদিয়ার পুলিশ সুপার ভরতলাল মীনা।

নদিয়া জেলা পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, অর্জিত দাস ও তুহিন দাসকে পাকড়াও করা হয়েছিল একটি ফোনের কথোপকথনের ভিত্তিতে। কিন্তু তখনও পর্যন্ত কোনও প্রশ্নপত্র উদ্ধার হয়নি। তাই ওই দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে জোরালো প্রমাণ মেলেনি বলেই এসপি বা অতিরিক্ত এসপি-কে বিষয়টি জানানো হয়নি। যদিও পুলিশের এই ব্যাখ্যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশের অন্দরেই।

প্রশ্ন উঠছে, বিষয়টি জানার পরেও কল্যাণী থানা ব্যবস্থা নেয়নি কেন?

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ৩০ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান ছিল কল্যাণীতে। সেই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়েই মাথাব্যথা বেশি ছিল পুলিশবাহিনীর। সেই জন্যই প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে পুলিশের সক্রিয়তা চোখে পড়েনি।

প্রথম দফায় অর্জিত-তুহিনকে পাকড়াও করার পিছনে পুলিশ একটি ফোনের ভূমিকার কথা বলছে। আবার পুলিশি সূত্রেরই খবর, ওই দুই অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল নদিয়ার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ফোনের ভিত্তিতেই। যদি তা-ই হয়, সে-ক্ষেত্রে কল্যাণী থানার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁসে ওই নেতার ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে দাবি তুলেছে পুলিশের একাংশ। তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি এবং নদিয়ার পুলিশকর্তাদের কেউই অবশ্য এই কেলেঙ্কারির পিছনে ওই নেতার ভূমিকা নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না।

কেন? তা হলে কি শাসক দলের যোগসাজশের অভিযোগ এড়িয়ে যেতে চাইছেন তদন্তকারীরা?

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, তদন্তের অভিমুখ শাসক দলের নেতা বা তাঁদের ঘনিষ্ঠদের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। এই প্রসঙ্গেই কলকাতা পুরভোটে গিরিশ পার্ক এলাকায় পুলিশকর্মীকে গুলির ঘটনার কথা তুলছেন তাঁরা। ১৮ এপ্রিল, পুরভোটের বিকেলে পুলিশ অফিসার জগন্নাথ মণ্ডলকে গুলি করার ঘটনায় বড়বাজার এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী গোপাল তিওয়ারিকে গ্রেফতার করা হলেও তার মদতদাতাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রেখেছে লালবাজার।

২৮ জুন আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে জানানো হয়, প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত রাখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্তে নামে সিআইডি। এ-পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে অর্জিত, তুহিন ছাড়াও বাপ্পা পাইন নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। পুলিশকর্তারা জেনেছেন, ২৭ জুন সন্ধ্যায় অর্জিত ও তুহিনকে পাকড়াও করেছিল কল্যাণী থানা। উদ্ধার হয়েছিল বেশ কিছু প্রশ্নপত্রও। কল্যাণী থানার তিন অফিসার অর্জিত ও তুহিনকে জেরা করে আরও কিছু তথ্য পেয়েছিলেন। উঠে এসেছিল বাপ্পার নাম। তার পরেই শাসক দলের নদিয়ার ওই নেতা থানায় ফোন করে অর্জিত ও তুহিনকে ছেড়ে দিতে বলেন বলে পুলিশের খবর। প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং বাপ্পার প্রসঙ্গও চেপে যাওয়া হয়।

কল্যাণী থানার তিন অফিসারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

এক সিআইডি-কর্তা বুধবার বলেন, ‘‘কল্যাণী থানা কিছু প্রশ্নপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল। সেগুলি আমরা নিয়ে এসেছি। ওই অফিসারদের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি।’’

তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অর্জিত ও তুহিনকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছিল বাপ্পাই। কিন্তু এই কাজের জন্য কে বা কারা তাকে মদত জুগিয়েছিল, ওই অভিযুক্ত সেই ব্যাপারে মুখ খুলছে না। সিআইডি জেনেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের তরফে ২৫ জুন কল্যাণীতে একটি হোটেল এবং একটি গেস্ট হাউস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সারা রাজ্যে প্রশ্নপত্র বণ্টন করা হয়েছিল সেখান থেকেই। ওই হোটেল ও গেস্ট হাউসের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কে সেই হোটেল ভাড়া নিয়েছিল, বাপ্পার কাছ থেকে তা জানতে পেরেছে পুলিশ।

চাপের মুখে পুলিশ এখন পরীক্ষা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত লোকেদের দিকেও আঙুল তুলছে। নদিয়া পুলিশের খবর, ২৭ জুন মিনিডরে খোলা অবস্থায় প্রশ্নপত্র কল্যাণী থানায় আনা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, এ ভাবে প্রশ্ন রাখা যাবে না। কারিগরি শিক্ষা দফতরের অফিসারেরা টিনের তোরঙ্গ কিনে তাতে প্রশ্নপত্র সিল করে দেন। পুলিশের দাবি, খোলা অবস্থায় যে-ভাবে প্রশ্ন আনা হয়েছিল, তাতে তা ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা ছিল অনেক আগেই। বেলঘরিয়ার সরকারি ছাপাখানা এবং কারিগরি শিক্ষা দফতরের কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সিআইডি জানাচ্ছে, ছাপাখানা ও কারিগরি শিক্ষা দফতরের কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

police criticism question leak iti question paper leak kalyani kalyani police station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy