পাসপোর্ট চাই। কিন্তু পেতে হলে যে সব কাগজপত্র পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে, তা নেই। একই কারণে ভিসাও অধরা।
তাতে অবশ্য বিদেশযাত্রা আটকাচ্ছে না! কারণ, জালিয়াতের দল পাশে আছে। যারা কিনা নকল নথিপত্র দিয়ে দেদার পাসপোর্ট জোগাড় করে দিচ্ছে। জোচ্চুরির দৌলতে ভিসাও হাতের মুঠোয়।
অর্থাৎ, কারচুপির সামনে এক দিকে যেমন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক ধোঁকা খাচ্ছে, তেমন বেকুব বনছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসও। ভুয়ো প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে নয়াদিল্লি পাসপোর্ট দিয়ে দিচ্ছে। আর ভিসা মঞ্জুরির সময়ে বিদেশি দূতাবাসও আসল-নকল ফারাক করতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ভিয়েতনাম— কে নেই তালিকায়!
তবে সন্দেহ যে একেবারে হচ্ছে না, তা নয়। বস্তুত ভিসার ক্ষেত্রে ‘গোলমালের’ আঁচ পেয়ে কিছু আবেদন নাকচ করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান মোতাবেক, নকল নথি জমা দিয়ে ৪০-৫০টি ভিসার আবেদন করলে পাওয়া যাচ্ছে ১০-১৫টি। বাকিগুলো যাচ্ছে বাতিলের ঝুড়িতে। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে জালিয়াতদের ‘সাফল্যের’ হার অবশ্য প্রায় একশো শতাংশ! সূত্রের খবর: আবেদনকারী সম্পর্কে পুলিশের সন্দেহ যদি হয়ও, ‘ম্যানেজ’ করে নিতে অসুবিধে হচ্ছে না। তাতেই কেল্লা ফতে!
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর, বারাসত ও মধ্যমগ্রামে এমন তিনটি জালিয়াতি-চক্রের হদিস পেয়েছে জেলা পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, পাসপোর্ট ও ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র এরা জাল করত। এবং এ ভাবে কাউকে ভিসা বা পাসপোর্ট জোগাড় করে দেওয়ার ‘মজুরি’ হিসেবে নিত ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা!
কারচুপি চলছিল কী ভাবে?
পুলিশের খবর: পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে মূলত বাড়ির ঠিকানা, জন্ম-তারিখ, জন্ম-স্থান ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র লাগে। ভিসায় বাড়তি দরকার হয় ব্যাঙ্কের পাসবই ও শেষ তিন বছরের আয়কর রিটার্নের কপি। তদন্তকারীদের অভিযোগ: চক্রগুলি ওই সব নথিপত্র বানানোর জন্য রীতিমতো কারখানা বসিয়েছিল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঢুঁ-ঢুঁ, গত ছ’মাসে লেনদেনই হয়নি— এমন লোকের নামেও মেশিনের সাহায্যে তৈরি করে ফেলছিল নকল পাসবই, যেখানে জ্বলজ্বল করতো গত ছ’মাসে বড় টাকার লেনদেনের হিসেব। এতে ভিসা পেতে বিস্তর সুবিধে।
এখানেই শেষ নয়। এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত নথিপত্রের মধ্যে ব্যাঙ্কের আসল পাসবইও মজুত। যদিও তাতে গত ছ’মাসের যে লেনদেন দেখানো হয়েছে, পুরোটাই ভুয়ো। ‘‘মানে ব্যাঙ্কে যে ধরনের মেশিনের ভিতরে ঢুকিয়ে পাসবই আপডেট করা হয়, সে রকম যন্ত্রও ছিল চক্রের হাতে!’’— মন্তব্য অফিসারটির। পুলিশ এ-ও দেখেছে, সীমান্ত পেরিয়ে আসা অনুপ্রবেশকারীর হাতে জালিয়াতেরা জন্মের নকল প্রমাণপত্র তুলে দিয়েছে। তা দিয়ে আবেদন করে দিব্যি পাসপোর্ট পেয়ে গিয়েছেন অনুপ্রবেশকারী।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দত্তপুকুর থানার পুলিশ মাসখানেক আগে কদম্বগাছিতে সাত বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের কাছে ছিল বেশ কিছু জাল রেশনকার্ড ও ভুয়ো সচিত্র পরিচয়পত্র। দেখা যায়, কিছু ফোটো আইডি’তে নাম, ধাম, জন্ম-তারিখ ঠিকঠাক থাকলেও ছবি অস্পষ্ট। ‘‘ওরা কদম্বগাছিতে বসে নকল কাগজপত্র বানাচ্ছিল। ওদের জেরা করে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার চক্রের হদিস মিলেছে। বারাসতে ধরা হয়েছে চক্রের লোকজনকে।’’— বলেন এসপি। পুলিশ সূত্রের খবর: জালিয়াতির তদন্তে যাদের নাম উঠে এসেছে, দোলতলার বাসিন্দা প্রকাশ দাস, বঙ্কিমপল্লির সন্তু বন্দ্যোপাধ্যায় ও বীরেশপল্লির প্রণব চক্রবর্তী তাদের অন্যতম। তদন্তকারীদের দাবি, মূলত এরাই ছিল চক্রের মাথা। এদের কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে ছাপার মেশিন, বিভিন্ন সিল ও জাল কাগজপত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy