প্রতীকী ছবি।
এখন নিছক রুটিনমাফিক নজরদারি নয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং অবৈধ, দু’ধরনের বাজি কারখানারই কাজকারবার খতিয়ে দেখা, প্রয়োজনে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল পুলিশ (আইনশৃঙ্খলা)-এর দফতর। অবৈধ শব্দবাজির কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশও জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সব পুলিশ সুপার ও কমিশেনারেটের কর্তা তো বটেই, রেল পুলিশের কর্তাদেরও এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, সোনারপুরের গোবিন্দপুরে যে-বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে, তাদের সব রকম লাইসেন্সই ছিল। কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না-করে অদক্ষ হাতে বাজি তৈরি করতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। সেই জন্যই অবেধ বাজি কারখানা তো বটেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাজি কারখানাতেও কী চলছে, তার উপরে নজরদারির নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
পুলিশকর্তাদের একাংশ জানান, বিভিন্ন জেলায় অবৈধ শব্দবাজি তৈরির ব্যাপারটা প্রায় কুটির শিল্প হয়ে উঠেছে! ওই সব কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটছে মাঝেমধ্যেই। ঘটছে প্রাণহানিও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, আতসবাজির কারখানায় শব্দবাজি তৈরি করা হচ্ছে। আসন্ন দুর্গাপুজো ও দীপাবলিতে বাজির রমরমা ব্যবসা হয়। তাই এখন থেকেই কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য পুলিশ ও কমিশেনারেটের কর্তাদের সজাগ করে দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা পুলিশ সুপারের কথায়, এত দিন শব্দবাজি কারখানার উপরে নজরদারির নির্দেশ জারি করা হত। বিভিন্ন রাস্তায় নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হত। তা এক রকম ‘রুটিন’ নির্দেশিকা হয়েই থেকে যেত। এ বার সারা রাজ্যে আতসবাজি ও শব্দবাজির কারখানায় তল্লাশি অভিযানের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কলকাতার লাগোয়া এক কমিশনারেটের কর্তা বলেন, ‘‘নির্দেশিকা অনুযায়ী তল্লাশি অভিযান চালানো খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে। রাজ্যে খুব কম বাজি কারখানারই লাইসেন্স আছে। প্রায় ৯৮ শতাংশই অবৈধ। সে-ক্ষেত্রে সব বাজি কারখানাই তো বন্ধ করে দিতে হবে!’’ এই অবস্থায় অবৈধ কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ কী ভাবে রূপায়ণ করা যাবে, তা ভেবেই কপালে ভাঁজ পড়েছে অধিকাংশ পুলিশকর্তার।
এক পুলিশ সুপারের বক্তব্য, অবৈধ শব্দবাজির কারখানা আছে সব জেলায়। সেগুলো বন্ধ করতে গেলে পুলিশ প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়বে। এমনিতেই বাজি কারখানায় তল্লাশি অভিযানে গেলে পুলিশকে নানা ধরনের বাধার সামনে পড়তে হয়। এলাকার অনেকেই একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই ধরনের প্রতিরোধের পিছনে এলাকা-ভিত্তিক রাজনৈতিক সমর্থনও থাকে। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ বার কঠোর নির্দেশিকা থাকলেও কারখানা বন্ধ করতে গেলে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অধিকাংশ জেলা পুলিশকর্তার আশঙ্কা, ওই সব কারখানা বন্ধ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। প্রতিরোধের মুখে পড়লে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, নির্দেশিকায় তার উল্লেখ নেই। ‘‘আমরা ওই নির্দেশিকা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। কোন পরিস্থিতি কী করণীয়, তা নিয়ে কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরেই অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করা হচ্ছে,’’ বলেন দক্ষিণবঙ্গের এক পুলিশ সুপার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy