Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তদন্ত-চিত্রে থানারপাড়া, নতুন চরিত্র জহিরুল

বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সুতোয় জড়িয়েছে করিমপুর, নবগ্রাম এবং বেলডাঙা। তদন্তে ক্রমান্বয়ে উঠে আসছে বর্ধমান শহর লাগোয়া নিত্য নতুন এলাকার নাম। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন নদিয়ার প্রান্তিক এলাকা, থানারপাড়ার গমাখালি। শুক্রবার রাতে, বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে, সেই গমাখালি গ্রামে হানা দিয়ে সিআইডির অফিসারেরা উদ্ধার করেছেন ৪১টি জিলেটিন স্টিক।

জহিরুল শেখের (ইনসেটে) বাবা জুয়াদ আলি শেখ। শনিবার কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

জহিরুল শেখের (ইনসেটে) বাবা জুয়াদ আলি শেখ। শনিবার কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

গৌরব বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সুতোয় জড়িয়েছে করিমপুর, নবগ্রাম এবং বেলডাঙা। তদন্তে ক্রমান্বয়ে উঠে আসছে বর্ধমান শহর লাগোয়া নিত্য নতুন এলাকার নাম। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন নদিয়ার প্রান্তিক এলাকা, থানারপাড়ার গমাখালি।

শুক্রবার রাতে, বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে, সেই গমাখালি গ্রামে হানা দিয়ে সিআইডির অফিসারেরা উদ্ধার করেছেন ৪১টি জিলেটিন স্টিক। দরমার বেড়া দেওয়া, টালি চালের নিতান্ত আটপৌরে ওই বাড়ির মালিক জহিরুল শেখ। তার অবশ্য হদিস মেলেনি। তবে ওই বাড়ি থেকে মিলেছে, জহিরুলের পাসপোর্ট, সচিত্র পরিচয়পত্র এবং কিছু দিন আগে কেনা মোটরবাইকের কাগজপত্র। শুক্রবার দুপুরে সিআইডি-র ওই দলটি গিয়েছিল করিমপুরের বারবাকপুরে। সেখান খাগড়াগড় বিস্ফোরণে মৃত শাকিলের স্ত্রী রাজিয়ার এক আত্মীয়কে জেরা করেই জহিরুলের ওই ডেরার সন্ধান পান তাঁরা। দেরি না করে রাতেই সেখানে হানা দেয় সিআইডি। এখন প্রশ্ন, কে এই জহিরুল?

সিআইডি সূত্রে খবর, বছর ছাব্বিশের ওই যুবক ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে। তবে পড়শিদের কাছে খোঁজ নিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কিছু দিন আগে বর্ধমানের একটি মাদ্রাসায় রান্নার কাজ নিয়ে চলে গিয়েছিল সে। জহিরুলের স্ত্রী, খানসা বিবি ওই অননুমোদিত মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করে। তবে প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, মাদ্রাসায় কাজে যোগ দিতে আগেই খানসার সঙ্গে জহিরুলের আলাপ হয়েছিল। করিমপুরের বারবাকপুর গ্রামে। শাকিলের স্ত্রী রাজিয়ার পড়শি খানসার সঙ্গে জহিরুলের ‘নিকাহ্’ও হয় বারবাকপুরেই।

শনিবার দুপুরে গমাখালির বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলেছে জহিরুলের বাবা জুয়াদ আলি শেখ এবং তার দিদির। মধ্য বয়স্ক জুয়াদ আলি নির্বিকার গলায় বলেন, “রাতে পুলিশের লোকজন জহিরুলের খোঁজে এসেছিল। ওর ঘরে একটা বাক্সের তালা ভেঙে কিছু জিনিসও নিয়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, ওই পুলিশ কর্তাদের মুখেই জুয়াদ জানতে পারেন ‘কী সব জঙ্গি ব্যাপারে’ তাঁর ছেলের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “এর কিছুই আমি টের পাইনি।” জহিরুল বাইরে কাজ করে, এ তথ্যটুকু তাঁর কাছে থাকলেও, ছেলে ঠিক কী করে তা তিনি জানেন না। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে জহিরুল যে বছরের অধিকাংশ সময়ই বাইরে থাকে তা-ও জানিয়েছেন তিনি। তবে ছেলে যে ঈদের আগে সপরিবার গ্রামে এসেছিল, তা জানিয়ে জুয়াদ বলেন, “মঙ্গলবার সে ফিরেও গিয়েছে॥

সিআইডি-র এক কর্তা জানান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা ওই এলাকাগুলি যে ক্রমেই জঙ্গি-ঘাঁটি গড়ে তোলার পক্ষে ‘আদর্শ’ হয়ে উঠছে, বারবাকপুর, নবগ্রাম, বেলডাঙা এবং পরিশেষে গমাখালি তারই উদাহরণ।

(সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE