শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বোলপুরের নিমতলায় খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় ১০ দিন। ঘটনার পর পরই নিহত তিন পরিবারের জানানো অভিযোগে ভিত্তিতে পুলিশ এখনও পর্যন্ত এফআইআর-এ নাম থাকা চারজনকে গ্রেফতার করলেও, প্রধান অভিযুক্ত কাজল শেখ অধরাই। এতে নিহতদের পরিবার ও শাসক দলেরই কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ যে বাড়ছে স্বীকার করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। খুনের তদন্তের অগ্রগতি বা কাজলের গ্রেফতারি নিয়ে অবশ্য জেলা পুলিশ কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি।
উল্লেখ্য, ২৮ তারিখ বিকেলে এলাকায় গদাধর হাজরার অনুগামী বলে পরিচিত তিন তৃণমূল কর্মীকে বোলপুর- পালিতপুর রাস্তার নিমতলার কাছে খুন হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে অন্যতম কুরবান শেখের বাবা জিলাই শেখ ঘটনার রাতেই অভিযোগ করেন। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহনওায়জের ভাই নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ ও তাঁর অনুগামীদের নিয়ে মোট ২২ জনের নামে অভিযোগ জানান তিনি। ওই ঘটনায় তদন্তে নেমে প্রথমেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ, যাদের নামই নেই এফআইআর-এ। সে নিয়েও, আদালতে বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ। ইতিমধ্যে আনাই শেখ নামে কাজল শেখের এক অনুগামীকে ধরে পুলিশ। পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের পর মঙ্গলবার আদালতে তোলায় জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। বৃহস্পতিবার, এফআইআর-এ নাম থাকা আরও তিন জনকে গ্রেফতার করায়, নিমতলা তিন তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় মোট নয় জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করল পুলিশ। এ দিন নতুন গ্রেফতারির খবরে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে অভিযুক্তের তালিকায় এক নম্বরে নাম থাকা কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহনওাজের ভাই নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে নিয়ে!
এ দিন নতুন যে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ, তাঁদের আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশে দিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী ফিরোজ কুমার পাল বলেন, “বোলপুর থানার বোলপুর-পালিতপুর রাস্তার উপর তিনজন কে খুন করার ঘটনায়, এ দিন তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বোলপুরের এসিজেএম সংঘমিত্রা পোদ্দারের এজলাসে তোলে। তিনি ধৃতদের জমিনের আবেদন নামঞ্জুর করে, তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।”
এই গ্রেফতারের খবরে নিহতদের পরিবার ও শাসকদলেরই কর্মী-সমর্থকদের বলতে শোনা গিয়েছে, অন্যদের ধরলেও, কেন কাজলকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ! তাঁদের দাবি, পুলিশ অপরাধীদের আড়াল করছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। অভিযোগ, একজন মাত্র ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন। বাকিরা অধরাই থেকেছে। বাকি অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো, সভা, সমিতিও করছেন বলে অভিযোগ। এ দিন নিহত কুরবান শেখের বাবা জিলাই শেখ বলেন, ‘‘ছেলেকে গুলি করে খুনের পর, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এবং সহানুভূতি দেখাতে সুলতানপুরে এসেছিলেন দলের বিধায়ক গদাধর হাজরা। তখনই বিধায়ককে জানিয়েছিলাম, ছেলের খুনিদের সাজা চাই। দ্রুত শাস্তি চাই। শুধু আমরাই নয়, সুলতানপুর-সহ আশেপাশের বোলপুর ও নানুর থানা এলাকার হাজার মানুষ তার শাস্তির দাবি সরব হয়েছে। কিন্তু খুনের ঘটনার পর ১০ দিন হল, কাজল শেখ গ্রেফতার হচ্ছে কই?’’
অভিযোগ জানিয়েছেন, নিহত বুড়ো শেখের বাবা নুরসাদ শেখ ও আসতিয়া বিবি। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘একমাত্র ছেলেকে আগে পিটিয়ে ছিল দলীয় কার্যালয়ে। তার পরেও, তাকে খুন করে শেষ করে দিল। আমরা পুলিশ, প্রশাসন, দল সকলের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম ছেলের খুনিদের শাস্তিতে। কিন্তু আজও তারা গ্রেফতার হল না।’’ নুরসাদ বলেন, ‘‘কাজল প্রকাশ্যে মিটিং, মিছিল করে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ধরছে না। পুলিশ মদত দিচ্ছে।’’ ঘটনা হল, যেদিন বিধায়ক গদাধর হাজরা তিন নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গ্রামে গিয়েছিলেন, সে দিন স্থানীয় মানুষ একরকম বিক্ষোভ দেখিয়ে কাজলের গ্রেফতারির দাবি জানায়। কিন্তু আদতে কাজল গ্রেফতার না হওয়ায়, প্রশ্ন উঠছে দলের ভূমিকা নিয়েই!
মুলুকের বাসিন্দা নিহত শেখ মর্তুজার পরিবারও তুলছে সেই একই প্রশ্ন। ছেলে খুনের পর, স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং এলাকার নেতৃত্ব খোঁজ পর্যন্ত করেনি, সেই অভিযোগ নাগালে পেয়ে বিধায়ককে জানিয়েছিলেন মতুর্জার বাবা। নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের ক্ষোভে শাসক দলের অন্দরে বিধায়ক গদাধর হাজরা ও নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখের মধ্যে ফাটলও বড় হচ্ছে, বলে দলেরই একাংশ সূত্রে খবর। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী তথা বীরভূমের পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম ওরফে ববি হাকিম সাংবাদিকদের প্রশ্নে ‘গোষ্ঠী কোন্দল’ নেই দাবি করলেও, জেলার নিচু তলার কর্মী-সমর্থক এবং অঞ্চল নেতৃত্বের মধ্যে যে খুনের পর ক্ষোভের আগুন আরও বাড়ছে তা এলাকায় কান পাতলেই বোঝা যায়।
এ দিন কাজল শেখকে ফোনে পাওয়া যায়নি। নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা এ দিনও বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে, দোষীরা সাজা পাবে।’’
যথারীতি ফোন ও এসএমএসের কোনও উত্তর দেননি জেলার পুলিশসুপার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy