মঞ্চ মাতাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
‘তরুলতা, কুসুম, কোকিল শাখায় শাখায়... বলি কুরুক্ষেত্রের রণভূমিতে অরণ্য এল কোথা থেকে?’— নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভীম বধ’ নাটকের ‘পরিচালক’ কালুদার অঙ্গভঙ্গি করা সংলাপ শুনে হাসির রোল পড়ল দর্শকদের মধ্যে। নাটক যত এগোল, তত বাড়ল দর্শকদের হুল্লোড়। দেখে কে বলবে, কুশীলবেরা আসলে পুলিশকর্মী। যাঁরা বছরভর চোর-ডাকাতদের ধমকান, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরাই অভিনয় করে দর্শকদের পেটে খিল ধরিয়ে দিলেন।
নাটকের ভিতরের নাটকের পরিচালক ‘কালুদা’ আসলে পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার। ভীমের চরিত্রে অভিনয় করেন প্রবেশনারি সাব-ইনস্পেক্টর রাহুল চট্টোপাধ্যায়, দুর্যোধন সাব-ইনস্পেক্টর মোহন চক্রবর্তী। বিভিন্ন ভূমিকায় ছিলেন আরও এক সাব ইনস্পেক্টর ও তিন জন এএসআই। কালীপুজো উপলক্ষে শনিবার তাঁরাই গলসি থানা চত্বরে মঞ্চস্থ করলেন নাটক। করোনা পরিস্থিতিতে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ কর্মী ও তাঁদের পরিজনেরাই ছিলেন দর্শক। পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তাঁরা নিজেদের বিনোদনের জন্য অল্প সময়ের অনুষ্ঠান করেছেন বলে শুনেছি।’’
বিভিন্ন থানার ‘শান্তি রক্ষা বাহিনী’র উদ্যোগে থানা চত্বরে কালীপুজো রেওয়াজ অনেক দিনের। কোথাও কোথাও বড় করে অনুষ্ঠানও হয়। গলসি থানার পুলিশ কর্মীরা জানাচ্ছেন, গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠান করা হয়নি। এ বার তাই শুধু পরিবারের লোকেদের মনোরঞ্জনের জন্যই তাঁরা নাটক করবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু ওই সাত জন কুশীলবের মধ্যে এক জন ছাড়া কারও নাটকের অভিজ্ঞতা ছিল না। তবুও হাল ছাড়েননি তাঁরা।
দিনভর কাজ করে রাত ১১টার পরে দিন পাঁচেকের মহড়া দিয়েই প্রায় ২২ মিনিটের ওই নাটক তাঁরা মঞ্চস্থ করেন। ওসির কথায়, ‘‘কলকাতার একটি পরিচিত নাট্যদলের পরিচালকের পরামর্শ নিয়েছিলাম। বাকিটা নিজেদের মতো করে পরিচালনা করেছি।’’ কুশীলবেরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের পরিশ্রম অনেক বেড়েছে। তাই নিজেদের মধ্যে একটু আনন্দ করতেই এই উদ্যোগ।
এক পুলিশ কর্মীর মা রমা বিশ্বাস বলেন, ‘‘সারা দিন চোর-ডাকাতদের পিছনে দৌড়নোর পরেও যে ওদের নাটক করার মন রয়েছে, তা দেখে ভাল লাগল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy