Advertisement
E-Paper

হাওড়ার পর্ন ভিডিয়ো কাণ্ডে নজরে মা-ছেলের বাড়ির সিসি ফুটেজ, বন্ধ ঘরে কী আছে, জানতে কোর্টেও যাবে পুলিশ

হাওড়ায় দেহব্যবসা এবং পর্ন ভিডিয়ো কাণ্ডে এখনও পলাতক অভিযুক্ত মা এবং ছেলে। হাওড়া সিটি পুলিশের একটি তদন্তকারী দল তাঁদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ১৩:২৯
শ্বেতা খান (ছবিতে) এবং তাঁর ছেলে আরিয়ান খানের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলি‌শ।

শ্বেতা খান (ছবিতে) এবং তাঁর ছেলে আরিয়ান খানের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলি‌শ। ছবি: সংগৃহীত।

হাওড়ায় দেহব্যবসা এবং পর্ন ভিডিয়ো কাণ্ডে এখনও পলাতক অভিযুক্ত মা এবং ছেলে। হাওড়া সিটি পুলিশের একটি তদন্তকারী দল তাঁদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের নজরে রয়েছে অভিযুক্ত মা-ছেলের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজও।

পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়ার বাঁকড়ার যে বাড়িতে থাকতেন ওই মা এবং ছেলে, সেই বাড়ির বাইরে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। পুলিশের লক্ষ্য, ওই সিসি ক্যামেরার হার্ডড্রাইভটি উদ্ধার করা। তাতেই স্পষ্ট হবে, ওই বাড়িতে কাদের যাতায়াত ছিল। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।

প্রায় পাঁচ মাস এক তরুণীকে আটকে রেখে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বাঁকড়ার বাসিন্দা মা শ্বেতা খান এবং তাঁর ছেলে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে। তা প্রকাশ্যে আসার পরেই গা ঢাকা দেন মা এবং ছেলে। ধীরে ধীরে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, কাজ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে শ্বেতা এবং আরিয়ান পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা চালাতেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, পলাতক মা-ছেলের খোঁজে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের লোকেদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন হাওড়া পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উত্তর ২৪ পরগনার যে তরুণীকে আটকে রাখা হয়েছিল, তাঁকে একবার কুলু-মানালিও নিয়ে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত মা-ছেলে। ওই তরুণীকে কী কারণে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

শুক্রবার সকালে বাঁকড়া থেকে কোনও মতে বাড়িতে পালিয়ে আসেন বছর চব্বিশের ওই তরুণী। তিনি খড়দহ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শনিবার বিকেলে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে সেই অভিযোগ হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে এসে পৌঁছোয়। এর পরেই তদন্তে নামে ডোমজুড় থানার পুলিশ। বিশাল পুলিশবাহিনী ও র‌্যাফ নিয়ে বাঁকড়ার ফকিরপাড়ার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখেন, দরজায় তালা ঝুলছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বাড়িতে তল্লাশি চালাতে চান তদন্তকারীরা। তাদের অনুমান, মা-ছেলের ঘর থেকেও অনেক তথ্যপ্রমাণ মিলতে পারে। তাঁদের ধরে তল্লাশি চালানোর অনুমতি নিতে আদালতের যাওয়ার কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, শ্বেতা এবং আরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রযোজনা সংস্থা খুলে ছবিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অল্পবয়সিদের প্রলুব্ধ করতেন। তার আড়ালেই চলত পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা। এমনকি, অনেককে জোর করে দেহব্যবসাতেও নামানো হয় বলে অভিযোগ। সোদপুরের নির্যাতিতার সঙ্গে তেমনটাই হতে যাচ্ছিল বলে তাঁর মায়ের দাবি। ওই মহিলা জানিয়েছেন, পরিবারের হাল ফেরাতে মেয়ের কাজের দরকার ছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেয়ের সঙ্গে সমাজমাধ্যমে পরিচয় হয় আরিয়ানের। ওই যুবক জানান, তাঁদের একটি ইভেন্ট ম‍্যানেজমেন্ট সংস্থা রয়েছে। সেখানে কাজ মিলবে।

অভিযোগ, ওই ‘টোপ’ দিয়ে ডোমজুড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোদপুরের তরুণীকে। তাঁকে কাজ দেওয়া হয় একটি পানশালায়। তরুণীর মায়ের দাবি, ‘‘মেয়েকে দিয়ে খারাপ খারাপ কাজ করাতে চাইত ওরা (শ্বেতা ও আরিয়ান)। ও রাজি না হওয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছে।’’ শুধু আটকে রাখাই নয়, তরুণীর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। পরিবারের দাবি, মেয়েকে রড দিয়ে মারধর করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হয়।

এই সব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করছে তারা। রবিবার জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, ‘‘আমরা এই জঘন্য ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি এবং স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করেছি। জাতীয় মহিলা কমিশনে অভিযোগ হিসাবে এই ঘটনার কথা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আমরা স্থানীয় থানাকে সে কথা জানাব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার বিষয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে বলব।’’ অর্চনা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কোনায় কোনায় লাগাতার মহিলাদের উপরে জঘন্য অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা সামগ্রিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করবেন। মহিলাদের নিরাপত্তা বলতে আর কিছু থাকবে না। তাই এ রকম কোনও ঘটনার খবর পেলেই আমরা কঠোরতম পদক্ষেপ করার পথে হাঁটব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

Howrah harrasment case Howrah Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy